আশাশুনির যদুয়ারডাঙ্গা প্রাইমারী স্কুলের দুরাবস্থায় চরম দুর্গতিতে সংশ্লিষ্টরা

জি এম মুজিবুর রহমানঃ আশাশুনি উপজেলার ৪১ নংেযদুয়ারডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুরাবস্থার কারনে চরম দুর্গতিতে রয়েছে। দুরাবস্থা থেকে বাঁচতে জন প্রতিনিধি ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা ও এলাকাবাসী।বিল, মৎস্য ঘের ও খাল-জলাশয় বেষ্টিত বিদ্যালয়টি ১৯৫০ সালে সচেতন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকার শিশুদের শিক্ষাদানে প্রশংসিত ভূমিকা রেখে এসেছে। ৫১ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও যথেষ্ট ভাল। বর্তমানে সমাপনী ও বৃত্তি পরীক্ষা না থাকায় কৃতিত্বের তথ্য দেওয়া না গেলেও পূর্বে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলের চিত্র তুলে ধরা হলো।২০১১ সালে ১২ জন এ+, ট্যালেন্টপুলে ৪ জন ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপায় ১ জন। ২০১২ সালে এ+ ১০ জন ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিরপ্রাপ্ত ২ জন, ২০১৩ সালে এ+ ৯ জন, সাধারণ গ্রেডে ৩ জন, ২০১৫ সালে এ+ ৬ জন এবং ২০২৬ সালে এ+ ৬ জন, ট্যালেন্টপুলে ১ জন ও সাধারণ গ্রেডে বৃক্তি প্রাপ্ত ৪ জন। ভাল ফলাফল করা স্কুলটিতে যাতয়াত পথ, বিদ্যালয় চত্বর নিচু থাকায় জনভোগান্তি ও শিক্ষার্থীদের দুরাবস্থা চরম ভোগান্তিতে পরিনত হয়েছে। বিদ্যালয় ভবনের দুরাবস্থার কারনে ক্লাস পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০২৩ সালে পুরাতন ভবন অপসারণ করে নতুন দ্বিতল ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মান করা হয়। কিন্তু স্কুল চত্বর ভরাট ও স্কুলে যাতয়াতের পথ পুনঃ সংস্কার/উচুকরণ না করায় চরম দুর্গতির সৃষ্টি হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে ২/৩ মাস স্কুল চত্বর ও পথ পানিতে তলিয়ে ছিল। সে সময় হাটু পানি ঠেলে অতি কষ্টে স্কুলে যাতয়াত করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই নগন্য ছিল। ঠিকভাবে ক্লাশ পরিচালনা সম্ভব ছিলনা। স্কুল ক্যাম্পাস তলিয়ে থাকায় এ্যাসেম্বলী ও শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ ছিল। লবণ পানির প্রভাবে স্কুল ক্যাম্পাসের নারিকেল, নিম, মেহগনি গাছ ও ফুলের বাগান মারা গেছে। এখন ক্যাম্পাসটি বৃক্ষ শুন্য রৌদ্রোজ্জল খোলামেলা হয়ে আছে। ছায়া না থাকায় প্রতিদিনের এ্যাসেম্বলীতে প্রখর রৌদ্রে নাভিশ্বাস উঠে যায় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া অন্য সময়েও কষ্টকর মুহুর্ত পার করতে হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে খেলতেও পারেনা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপসী সরকার জানান, বর্তমানে স্কুলে ১৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী ও ৬ জন শিক্ষক কর্মরত আছে। স্কুল চত্বর নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে থাকে। স্কুলে যাতয়াতের দুটি রাস্তাও বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে থাকে। টেংরাখালী হাই স্কুলের কাছে মেইন পাকা সড়ক থেকে আমাদের স্কুল পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কিলোমিটার মাটির রাস্তা এতটা নিচু যে বর্ষার সময় তলিয়ে থাকে। অপরদিকে স্কুল থেকে যদুয়ারডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার অবস্থাও একই রকম পানিতে তলিয়ে থাকে। কিছুটা মাটি ও বাকী অংশ ইটের সোলিংকৃত হলেও এতটা এবড়ো থেবড়ো হয়ে আছে যে চলাচল অনুপযোগি। বর্ষার সময় যাতয়াত বলতে গেলে অসম্ভব হলেও শুস্ক মৌসুমেও চলাচল কষ্টকর। স্কুল চত্বরে মাটি ভরাট ও রাস্তাদুটো সংস্কার অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। নব নির্মীত সীমানা প্রাচীর রক্ষার জন্য স্কুল ভবনের পিছনের অংশ ৩৫ সহস্রাধিক টাকা খরচ করে ভরাটের কাজ করে সেখানে ফুল বাগান করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে লোনা পানির সাথে বৃষ্টির পানি মিশে জলমগ্নতার প্রভাবে ফুল বাগানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, স্কুলের টিউব ওয়েলের পানি লবণাক্ত ও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে থেকে খাবার পানি ক্রয় করে এনে বাচ্চাদের খাওয়াতে হয়। পাশের জনবসতি তথা গ্রামের মানুষও সুপেয় পানির অভাবে কষ্ট পেয়ে আসছে। স্কুল চত্বর ভরাট, রাস্তা সংস্কারের সাথে সাথে স্কুলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে পানির প্লান্ট স্থাপন করা খুবই জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া নব নির্মীত দ্বিতল ভবনের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় গ্রীলের ব্যবস্থা না থাকায় নিরাপত্তার অভাব বিরাজ করছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার বর্মন বলেন, যদুয়ারডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার যে সকল স্কুলের স্কুল চত্বর/মাঠ বর্ষার সময় নিমজ্জিত হয় সে সকল স্কুল চত্বর মাটি ভরাটের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন পাঠান হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)