নাজিমগঞ্জ বাজারে অবৈধ দোকানঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেন ইউএনও
আরাফাত আলী: দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের নাজিমগঞ্জ বাজার ও আশপাশের এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারি জমি দখল করে পাকা দোকান ও বহূতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে আসছিলেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। কিন্তু দখলবাজরা প্রভাবশালী হওয়ায় সরকারি কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এলাকাবাসীর অভিযোগে ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুজা মন্ডল ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে (৪ ডিসেম্বর ) বুধবার দুপুর ১২ টার সময় নাজিমগঞ্জ বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় নাজিমগঞ্জ বাজারে সরকারের খাস জায়গা দখল করে গড়ে তোলা সাইদুল বস্ত্রালয়ের একটি দোকান ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ইনচার্জ, কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান ,স্থানীয় সাংবাদিকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।নোটিশ করেও অবৈধ স্থাপনা ভেঙে না নেওয়ায় নাজিমগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। তবে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যেয়ে অবরুদ্ধ হন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাস। এ সময় বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ভূমি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শহীদুল ইসলাম ও অফিস সহকারী রণজিৎ মন্ডলকে পিটিয়ে জখম করা হয়। ওই দিন তাদেরকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে হামলাকারীরা বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কাঁকশিয়ালী ও যমুনা নদীর চরে বসবাসরত ভূমিহীনদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা ভাঙা ও কোটি টাকার মালামাল লুটপাটের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের সামনে বিক্ষোভ করিয়ে তার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
নাজিমগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও শাহজাহান আলী জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার উজয়মারি গ্রামের সুরত আলীর ছেলে নাজিমগঞ্জ বাজারের সাঈদুল বস্ত্রালয়ের মালিক সাঈদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম শীতলপুর মৌজার ৭৭৮ দাগের বিআরএস-১ খতিয়ানের প্রায় দেড় বিঘা জমি দখল করে সেখানে গুদামঘর ও বাসাবাড়ি বানিয়ে ভাড়া দিয়ে আসছেন। একইভাবে হোমিও চিকিৎসক ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসেন একইভাবে পেরিফেরি জমি জবরদখল করে সেখানে অবৈধ স্থাপনা বানিয়ে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাঈদুৃর বস্ত্রালয়ের মালিকরা আবারো ১৬শতক জমি দখল করে সেখানে গুদামঘর বানাতে গেলে উপজেলা ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে বসন্তপুর ভূমি অফিসের কর্মক বাধা দেন। স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতাকর্মীকে নিয়ে তারা ১৫সেপ্টেম্বর রাতে গুদামঘরের ছাদ ঢালাই করে ফেলে। একপর্যায়ে সাঈদুর বস্ত্রালয়ের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বসন্তপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ আলী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানান। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের সার্ভেয়র মিজানুর রহমান সাঈদুর বস্ত্রালয়ের মালিক মনিরুল ইসলাম মনির বাড়ির চারতলার ভাড়াটিয়া হওয়ার সুবাদে বিষয়টি দফা রফা করে ফেলায় ওই ঘটনায় মামলা হয়নি। এ দুর্বলতার সূযোগে ও মিজানুর রহমানকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই নাজিমগঞ্জ বাজারে একের পর এক জায়গা দখলের হিড়িক পড়ে যায়।সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, নোটিশ দেওয়ার পরেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করায় গত মঙ্গলবার সাইদুর বস্ত্রালয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে তাদের উপর অতর্কিত হামলা করা হয়। হামলায় অংশগ্রহণ কারীরা ক্ষমা চাওয়ায় তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধ স্থাপনার একটি দোকান ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুজা মন্ডল বলেন, নাজিরগঞ্জ বাজারে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কারী চারজন ব্যবসায়ীকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাইদুর বস্ত্রালয় ও রয়েছে। নোটিশ করার পরেও স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় সাইদুর বস্ত্রালয়ের একটি দোকান ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের আরো তিনটি অবৈধ স্থাপনা দোকান ঘর এক মাসের মধ্যে অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছি । এছাড়া নাজিমগঞ্জ বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।