গ্রেপ্তারকৃত আল ফেরদৌস আলফার রিমান্ড না মজ্ঞুর

রঘুনাথ খাঁ ঃ সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিষাখালির ভ‚মিহীন জনপদে আলীম গাইনের মাছের ঘেরে কাল্পনিক লুটপাট এর ঘটনায় এক মাস আগে রেকর্ড দেখানো মামলায় এজাহারভুক্ত পাঁচ ভ‚মিহীন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার সকাল ১১টার দিকে তারা সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে তারা মুক্তি পান।
জামিনে মুক্তি পাওয়া ভ‚মিহীনরা হলেন, কালিগঞ্জ উপজেলার কাশিবাটি গ্রামের রুহুল আমিন সরদারের ছেলে হাসিবুল হাসান, একই উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামের আকরাম গাজীর ছেলে রবিউল আওয়াল, রুহুল আমিনের ছেলে মহরম গাজী, আশাশুনি উপজেলার শ্রীকলস গ্রামের সাঈদ সরদারের ছেলে সোহেল সরদার ও শ্যামনগর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের নরিম সরদারের ছেলে নুরুজ্জামান সরদার।এদিকে দেবহাটা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কোমরপুর গ্রামের আল ফেরদৌস আলফাকে মঙ্গলবার রাতে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার আদালতে পাঁচ দিনের রিমাÐ আবেদন জানালে আমলী আদালত-৭ এর বিচারক মোঃ সালাহউদ্দিন তা না’মঞ্জুর করেছেন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, গত ২৫ জানুয়ারি সুযপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আদেশে খলিষাখালির জমিতে স্বত্বহীন হওয়ার পরও দেবহাটা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের কাজী গোলাম ওয়ারেশসহ একটি মহল ওই জমি নিজেদের দাবি করে আসছিলেন। কাজী গোলাম ওয়ারেশ এর কাছ থেকে লীজ নিয়ে আলিম গাইনসহ নয়জন মাছ চাষ করে আসছিলেন বলে দাবি করেন। গত পহেলা নভেম্বর অস্ত্র উদ্ধারের নামে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনার একপর্যায়ে ভ‚মিদস্যুরা ভ‚মিহীনদের উপর হামলা চালায়। ভ‚মিদস্যুদের ব্যবহাত বোমা ও দা দিয়ে ছয়জন ভ‚মিহীনকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়। এ সময় ভ‚মিদস্যুদের হামলায় মারা যায় ভ‚মিহীন নেতা কামরুল ইসলাম। তার মরদেহ একটি মটর সাইকেলে করে বহন করে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে রেখে যায়। ২ নভেম্বর আলিম গাইন বাদি হয়ে নিহত কামরুল ইসলামসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি এজাহ্রা দায়ের করেন। মামলাটি গত ২ অক্টোবর রেকর্ড দেখান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ গাজী। একইভাবে নিহত কামরুলের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বাদি হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে ১০ নভেম্বর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অ্যাড. জিয়াউর রহমান আরো জানান,মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তারা রবিউল আওয়ালসহ এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামীর জামিন আবেদন করেন। জামিন শুনানীতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. মিজানুর রহমান বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আদেশে কাজী গোলাম ওয়ারেশ খলিষাখালির জমি স্বত্বহীন হলেও আলিম গাইন তার কাছ থেকে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন দাবি করে সেখানে বসবাসরত ভ‚মিহীনদের ডাকাত বানিয়ে গত পহেলা নভেম্বর দিবাগত রাত ভোর চারটার সময় হামলা ও লুটপাটের সময় উল্লেখ করে গত ২ নভেম্বর থানায় এজাহার দিলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ গত ১০ অক্টোবর ওই মামলা রেকর্ড দেখান। মামলা নং-২/২০২৪, জিআর-৯২/২৪। সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় গত পহেলা নভেম্বর ভোরে হলেও মামলায় তা ২৪ ঘণ্টা পর দেখানো হয়েছে। উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলামের প্রস্তুতকৃত জব্দ তালিকা পহেলা নভেম্বর বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে স্বত্বহীন জমির মালিক সখীপুরের ডাঃ নজরুল ইসলামের বাড়ির পাশ থেকে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ জব্দ তালিকা বাদির দায়েরকৃত এজাহারের সময়ের ১১ ঘণ্টা আগে হয়েছে। ভ‚মিদস্যুদের হামলায় নিহত ভ‚মিহীন নেতা কামরুল ইসলামের স্ত্রী মর্জিনা বেগমের দায়েরকৃত মামলার ১৫ নং আসামী আলিম গাইন ও ১৬ নং আসামী ডাঃ নজরুল ইসলাম। ভ‚মিহীনদের ওই জমি থেকে উচ্ছেদ না করা সংক্রান্ত হাইকোর্টে ১৫০০/২০২২ নং রিটপিটিশনে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রæয়রি থেকে স্থিতাবস্থা বহাল রয়েছে। এ ছাড়া ৩ অক্টোবর খলিষাখালির ভ‚মিহীনরা ভ‚মিদস্যুদের হামলার হাত থেকে বাঁচতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার ও সাতক্ষীরা ক্যাম্পের সেনা কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। একইভাবে নিহত কামরুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলাম হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা থাকার পর ৭৮৫টি ভ‚মিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করে ভ‚মিদস্যুরা জমি দখলের চেষ্টা করছে মর্মে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচীব বরাবর গত ৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ করলে গত ৯ অক্টোবর সিনিয়র সহকারি সচীব আব্দুল হাই অভিযোগের তদন্ত ক্রর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড. আব্দুস সাত্তার আসামীদের জামিনের বিরোধিতা করেন। জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী মামলার এজাহারের সময়, মামলা রেকর্ডের সময়, বাদির দাবিকৃত মালিকের জমির স্বর্তসহ বিভিন্ন ত্রæটিপূর্ণ বিষয় মাসিক আইন শৃঙ্খল পরিস্থিতির সভায় উপস্থাপানের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের পিপিকে নির্দেশনা দেন। একইসাথে ওই পাঁচ আসামীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে আলিম গাইনের দায়েরকৃত মামলায় দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আল ফেরদৌস আলফাকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার পাঁচ দিনের রিমাÐ আবেদন জানান মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলাম। বিচারক মোঃ সালাহউদ্দিন শুনানী শেষে রিমাÐ না’মঞ্জুর করেন বলে জানান অ্যাড. জহুরুল ইসলাম।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলাম আল ফেরদৌস আলফার রিমাÐ না’মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)