দেবহাটার খলিষাখালীতে ভ‚মিহীন নেতা কামরুল হত্যা ১৬ দিনেও কোন গ্রেপ্তার নেই কেউ, চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানসহ প্রভাবশালীদের দৌড়ঝাঁপ

রঘুনাথ খাঁ ঃ সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিষাখালির ভ‚মিহীন নেতা কামরুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অধিকাংশ আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গত ১৬ দিনে পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আসামীদের একাংশ নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পরিকল্পিত মানববন্ধন করেছে। এমনকি মালিকানা হারানো আহছানিয়া মিশনের কর্মকর্তা ইকবাল মাসুদকে নিয়ে নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান রবিবার দুপুর একটার দিকে ছুঁটে গেছেন স্বরাষ্ট্র সচীব আব্দুল মোমেনের কার্যালয়ে।
স্থানীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বোধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা জমি মালিকানাবিহীন ঘোষণা করে। এরপর থেকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে ১৯৫৫ সালের পর থেকে আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম, শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, সখীপুরের আব্দুল আজিজ পারুলিয়ার আনারুল, আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদ, সিরাজুলসহ একটি মহল তাদের দখলে থাকা জমি নলতার চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, তার ব্যবসায়িক পার্টনার অনারুল ইসলাম (মাছ), নওয়াপাড়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম, পারুলিয়ার সেজ খোকনসহ কয়েকজনের কাছে ঘেরের মাছ বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে ওই চক্রটি ভ‚মিহীন নেতাদের একটি অংশকে ম্যানেজ করে ভ‚মিহীনদের উচ্ছেদের চেষ্টা অব্যহত রাখে। ভ‚মিহীনদের উপর দফায় দফায় বোমা ও গুলি করে হামলা চালানো হয় । গত ১০ মাসে জেলা প্রশাসন প্রধান বিচারপতির আদেশ কার্যকর না করায় ভ‚মিদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
সূত্রটি আরো জানায়, নলতা ইউপি সদস্য সাবেক সেনা সদস্য হাবিব নিজেকে একজন সোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীর কাছে আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়। হাবিবকে কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীকে খলিষাখালির ভ‚মিহীনদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে নিজেও সোর্স হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। হাবিব -আনারুল দুজনেই সেনাবাাহিনীকে বোঝাতে সমর্থ হয়কে ৫ আগষ্ট শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া দুটি অস্ত্র খলিষাখালির দ্ইু ভ‚মিহীন নেতার কাছে রয়েছে। অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তাাদের আটক করতে পারলে অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী গত পহেলা নভেম্বর ভোরে খলিষাখালিতে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। অভিযান শেষ হওয়ার একপর্যায়ে আজিজুর রহমান, মাছ আনারুল, পারুলিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল, বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবুর ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ভ‚মিহীন জনপদে ঢুকে পড়ে ভ‚মিহীনদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। এদের মধ্যে ছয়জনকে কয়েকটি দা, বোমা ও বোমার মশলাসহ সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। সেনা বাহিনী চলে যাওয়ার আগেই খলিষাখালি দক্ষিণপাড়ায় ভ‚মিদস্যূদের হামলায় মারা যায় ভ‚মিহীন নেতা কামরুল। সেনাবাহিনীর সদস্যরা কামরুলকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান আরিজুলকে বলে চলে যান। বাবুরাবাদের জেহের আলীর ছেলে হামলাকারি আব্দুস সবুর তার এক সহযোগীকে নিয়ে পহেলা নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে কামরুলকে নিয়ে সখীপুর হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শারীরিক নির্যাতনের ফলে কামরুলের মৃত্যু হয়েছে মর্মে মৃত্যু সনদে উল্লেখ করেন।
এদিকে ভ‚মিদস্যুরা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে থানায় সোপর্দ করা ছয় জন ভ‚মিহীনসহ মৃত কামরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে দেবহাটার রামনাথপুর গ্রামের আলিম গাইন বাদি হয়ে ২ নভেম্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সর্বোচ্চ আদালতে স্বত্বহীন হওয়া শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ এর কাছ থেকে আব্দুল আলিম জমি লিজ নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। তবে ঘটনা পহেলা নভেম্বর ভোরের ও কামরুল ওইদন সকাল ৯টার মারা গেলেও মামলায় আব্দুল আলিম উল্লেখ করেন যে তার ঘেরে মাছ লুটের ঘটনা ২ নভেম্বর ভোর চারটার। বাবুরাবাদের সবুর মটর সাইকেলে কামরুলের লাশ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও মামলায় বলা হয়েছে সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে কামরুলকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২ অক্টোবর তারিখ দিয়ে ওই মামলা রেকর্ড করেন। অর্থাৎ ঘটনার এক মাস আগেই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
নিহত কামরুলের স্ত্রী মর্জিনা বেগম জানান, তার স্বামীকে হত্যার ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে ৩ নভেম্বর নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, মাছ আনারুল, গোলাম ফারুক বাবু, সিরাজুল ইসলাম, ট্যারা হাবিব, আনারুল, রবিউল, গোদাড়ার মহিউদ্দিন,, পাখরা হালিম, শহীদুল , বুল্লা, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ২৩ জনের নামে এজাহার দায়ের করেন। পরদিন তিনি ইন্দ্রনগরের কোটিপতি জহুরের ছেলে শাহীনুর পাড়, ইসরাফিল, শফিকুল সরদার, মনিরুজ্জামান মনি, পলগাদার শফি, সাঈদুল ঢালী, কেনারাম মÐল, ঢেবুখালির আবু তালেব, দক্ষিণ পারুলিয়ার নূর আমিন, বাবুরাবাদের আব্দুস সবুরসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার সংশোধন করে এজাহার দিলেও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেন। যা পরবর্তীতে সম্পুরক এজাহার হিসেবে জমা দেওয়া হয়েছে। আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা না নেওয়ার জন্য পুলিশকে নানাবিধ চাপের সম্মুখীন হতে হয়। একপর্যায়ে গত ১০ নভেম্বর মামলাটি রেকর্ড করা হয়। আসামী ধরার ব্যাপারে সাতক্ষীরা র‌্যাব ক্যাম্পকে অবহিত করা হয়েছে। অবস্থা বেগতিক বুছে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নলতা ও পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সুফল ভোগী নারী ও পুরুষসহ চিংড়িখালি ও বৈরাগীর চকের ভ‚মিহীনদের ভয় দেখিয়ে কালিগঞ্জ ও দেবহাটা থানা বিএনপির ব্যানারে গত বুধবার পারুলিয়া বাসস্টাÐে মানববন্ধন করা হয় ।
মর্জিনা বেগম আরো জানান, সেনাবাহিনীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যেভাবে খলিষাখালিতে অভিযান চালানো হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভ‚মিহীনদের উপরে। আজিজুর ওই অভিযানকে তার পক্ষে ব্যবহার করে নানা গল্প তৈরি করে নোড়ার চারকুনিতেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। ভ‚মিহীনদের অসহায়ত্বের বিষয়টি একজন সাংবাদিকের মধ্যেমে সম্প্রতি সেনা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে তিনি কোন ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার জন্য অভিযান চালননি মর্মে ওই সাংবাদিকের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছেন। এরপরও মামলার আসামীসহ ইন্দ্রনগরের শরিফুল সরদার, শাহীনুর পাড়, জহুর গাজীর ছেলে নুরুজ্জামান, সাম্মদ এর ছেলে আইয়ুব আলী, বুধো পাড়ের ছেলে রউফ, মুর্শিদ. বৈরাগীর চকের ঢালী আবুল, কানামনি, শহীদুলের বোনাই রকীব, কানা মনিরের ছেলে আল আমিন, পাখরা হালিম, রবিউল ইসলাম বুল্লা, শহীদুল, পলগাদার শফি, কেনা মÐল, সাঈদুল ঢালীসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাতভর সাইফুলের মোড় ও শিকারী মোড়ে টহল দিচ্ছে। সর্বোপরি আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ গত ১৬ দিনেও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উপরন্তু কথিত জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পুলিশ সুপার কাজী মনিুরজ্জামানের কাছের লোক হয়ে ট্যারা হাবিব ওরফে বেলচা হাবিব ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর ৭৮৫টি ভ‚মিহীন পরিবারের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে পৃষ্টপোষকতা করেছিলেন। সেই সূত্র ধরে তার স্বামীকে পিটিয়ে হত্যার ইন্ধনদাতা হয়ে নিজের পত্রিকার একের পর এক মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন ওই সাংবাদিক।
্ এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার উপপরিদর্শক রাজু আহম্মেদ জানান, সম্প্রতি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। খলিষাখালি এখন উত্তপ্ত জনপদ। তাই ইচ্ছা থাকার পরও দ্রæত গ্রেপ্তারে সফল হতে পারেননি তিনি। তবে গ্রেপ্তারে অভিযান চলবে শীঘ্রই।

 

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)