সাতক্ষীরায় এক ব্যবসায়ীকে দুই লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা:১০ পুলিশের নামে মামলা
রঘুনাথ খাঁ:
একটি বিশুদ্ধপানি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের স¦ত্বাঅধিকারিকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবিতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুলি কওে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।নিহতের স্ত্রী মোছা:শাহানার খাতুন বাদি হয়ে বুধবার সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতে ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু(নিবারণ) আইনে এ মামলা(পিটিশন-১০) দায়ের করেন।বিচারক চাঁদ মো:আব্দুল আলীম আললাজি ।আগামী ৫ জানুয়ারি খুলনা রেঞ্জে উপমহাপুলিশ পরিদর্শককে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজে অথবা অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নিচে নয় এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন। মামলায় তৎকালিন পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন, সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তারসহ দশ জন পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখকরে অজ্ঞাতনামা চার জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে।
নিহতের নাম দেলোয়ার হোসেন।তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা মাঝের পাড়ার বাসিন্ধা।
মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন সাতক্ষীরা তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ হাসেমী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ হোসেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহারীয়ার হোসেন ,সদর থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার দাস, গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রবিন মন্ডল,উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান,সহকারী উপপরিদর্শক রাজু আহম্মেদ ও সহকারী উপপরিদর্শক বিষ্ঞুপদ।
মামলার বিবরণে জানা যায়,বাদীনির স্বামী দেলোয়ার হোসেন ২০১৮ সাল থেকে বাঁশদহা বাজারে বিশুদ্ধ খাবার পানি প্রস্তুত ও সরবরাহের নতুন ব্যবসা শুরু করেন।এসময় তার ব্যবসায় কোন সরকারি অনুমোদন ছিলো না। ২০১৮ সালে ১২ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান ও সহকারী উপপরিদর্শক রাজু আহম্মেদ বাদীনির স্বামী দেলোয়ার হোসেনকে বাড়ি থেকে ঢেকে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যায়।গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ হাসেমীর ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপএ না থাকায় তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে।দেলোয়ার হোসেন বলেন তিনি এত টাকা কোথায় পাবেন?এক পর্যায়ে পরের দিন তিনি পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেনের কাছে অভিযোগ করেন।পুলিশ সুপার ভিকটিমকে সহকারী পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেন।এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে পুলিশ ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় ভিকটিম দেলোয়ারকে বাড়ি থেকে তুলে আনে।রাত ১০ টার দিকে উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান ও সহকারী উপপরিদর্শক রাজু আহম্মেদ বাদীনির কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন।টাকা না দিলে স্বামীকে রাতেই ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেয়।টাকা দেওয়ার জন্য কয়েকদিন সময় চাইলে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা চলে যায়।এর পর থেকে বাদীনি ও তার স্বজনরা দেলোয়ারের স্বন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা চালায়।পরেরদিন অর্থাৎ ১৫ জুলাই সকালে বাঁশদহা কয়ারবিল নামক স্থানে দেলোয়ারের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পায়।দেলোয়ারের গলার বাম কাধেঁর উপরে একটি ও ডান বোগলে নিচে পিটের দিকে একটি গুলির চিন্ন দেখা যায়।
এসময় আবুল কালাম আজাদ নামের আরো একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ সেখানে পড়ে ছিলো। চাঁদার দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় দেলোয়ারকে পুলিশ ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা করেছে বলে বাদিনি মনে করেন। ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে দেলোয়ারের লাশ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মামলা করা অনুকূল পরিবেশ না থাকায় ও বর্তমানে পরিস্থিতি স¦াভাবিক হওয়ার এ মামলা দায়ের করা হলো।
বাদীনির পক্ষের আইনজীবী অ্যাড:মো: হাফিজুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।