গভীর রাতে উপদেষ্টাদের আশ্বাসে হাসপাতালে ফিরলেন আহতরা

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর গভীর রাতে চার উপদেষ্টার আশ্বাসে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে বিক্ষোভরত গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে ফিরে গেছেন।চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিয়ে বিক্ষুব্ধ আহতদের শান্ত করতে বুধবার রাত আড়াইটায় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে আসেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় সহকারী (স্বাস্থ্য) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. সায়েদুর রহমান।এ সময় উপদেষ্টারা ভুল স্বীকার ও দুঃখপ্রকাশ করেন। তারা আহতদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সচিবালয়ে বৈঠকে বসার কথা বলেন। আহতদের প্রতিনিধি দলের যাওয়ার জন্য দুটি গাড়িও পাঠাবেন বলে জানান।
এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থা না হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, আপনাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে। এত রাতে এখানে আপনাদের কথা শোনার মতো উপযুক্ত সময় নয়। আগামীকাল ২টার সময় সচিবালয়ে আসেন। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। সেই রূপরেখা ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের ভুল আছে। কিন্তু চেষ্টার দিক দিয়ে আমাদের ঘাটতি ছিল না। যেকোনো কারণেই হোক আমরা পারিনি। আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আমরা একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা দেব, লিখিত দেব।পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, একটা ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আসুন আমরা আলোচনার ভিত্তিতে একটা রূপরেখা তৈরি করি। সেটা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য আপনারা একটা টিম করবেন।উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আমরা কথা দিচ্ছি, আপনাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করবো। না পারলে তখন যা ইচ্ছা করবেন, কোনো আপত্তি থাকবে না।স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সহকারীর দায়িত্বে আসা ড. মো. সায়েদুর রহমান আহতদের দেশের সেরা চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।এরপর আহতরা হাসপাতালে ফিরতে রাজি হন। তখন উপদেষ্টারা তাদের নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন। রোগীদের হাসপাতালের শয্যায় পৌঁছে দিয়ে পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের দেখে রাত সোয়া ৪টার পর উপদেষ্টারা ফিরে যান।বুধবার দুপুর ১টা থেকে হাসপাতালটির সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আহত ব্যক্তিরা। তাদের কারো এক পা নেই, কেউ হুইলচেয়ারে বসা, আবার কারো চোখে ব্যান্ডেজ রয়েছে। সন্ধ্যার পর হাসপাতালে ফিরে যেতে রাত ১০টার মধ্যে চার উপদেষ্টাকে সেখানে উপস্থিত হওয়ার শর্ত দেন। তাদের শর্ত অনুযায়ী উপদেষ্টারা না যাওয়ায় রাত ১২টার পর হাসপাতাল থেকে বিছানাপত্র এনে সামনের ঐ সড়কে অবস্থান চালিয়ে যান আহত ব্যক্তিরা।এর আগে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে যান জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করেন, তবে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেননি। স্নিগ্ধ তাদের বলেন, আপনারা আন্দোলন করছেন, যতক্ষণ দরকার আমি থাকব।এরপর রাত ৯টার দিকে প্রথম দফায় আহতদের সাথে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, তিন মাস পর আমার ভাইয়েরা এখনো রাস্তায় আছে, এটাই সবচেয়ে লজ্জার। এর সমাধান কিভাবে করা যায়, সেজন্য আমাকে একটু সময় দেন। যে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এতদিনে আহতদের চিকিৎসায় টাকা দিতে পারে না, সেই ফাউন্ডেশন রাখার দরকার আছে বলে মনে হয় না।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)