স্বজন ভেবে লাশ বাড়িতে নেওয়ার পথেই মৃত নারীর ফোন- তিনি মরেননি

ইমরান হোসেন :স্বজন ভেবে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত নারীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পরিবারের লোকজন। পথিমধ্যে নিহতের ফোন- ‘‘তিনি মরে যান নাই, বেঁচে রয়েছেন’’ জীবিকার তাগিদে জনৈক রাজমীস্ত্রির সহকারী হিসেবে দূরে রয়েছেন। তাই আজ বাড়ি ফিরতে পারবেননা। আকষ্মিক লাশবাহী ভ্যানে পিনপতন নিস্তব্দতা। পরক্ষণে ভ্যান ঘুরিয়ে নেয়া হয় থানায়।সোমবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে সড়কের তালা উপজেলার সীমান্তবর্তী আঠারোমাইলের কাঞ্চনপুর এলাকায় ঐ নারীকে রাস্তার পাশে গুরুতর আহতাবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জনৈক নজরুল ইসলাম নামের এক ভ্যান চালকের ভ্যান যোগে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিক লাশের পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি।এর কয়েক ঘন্টা পরে খবর পেয়ে তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জেয়ালা গ্রামের মৃত জনাব আলী নিকারীর সন্তানরা মৃতদেহটি তাদের বোন রাজিয়া (৩৫) এর বলে শনাক্ত করে। বাড়ি নেওয়ার দাবি জানায়।পরে তালা থানার এসআই আহাদুজ্জামান পরিবারের কারো কোন প্রকার অভিযোগ না থাকায় মৃতদেহটি রাজিয়ার বলে নিশ্চিত হয়ে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।এরপর রাজিয়ার মৃতদেহটি নিয়ে ভ্যান নিয়ে তালার জেয়ালাস্থ বাড়িতে নেওয়ার পথিমধ্যে বাধে বিপত্তি! বাড়ির পথে হাজরাকাটি বাজার পর্যন্ত পৌছালে লাশবাহী বোনের কাছে মোবাইলে ফোন আসে রাজিয়ার ব্যবহৃত ফোন থেকে- তিনি ‘জীবিত’ রয়েছেন। জীবিকার প্রয়োজনে এক রাজ মিস্ত্রীর সাথে দূরে গেছেন, তাই রাতে বাড়ি ফিরতে পারবেননা। ফোনের অপর প্রান্তের কন্ঠ শুনে চিনতে পারেন, জীবিত বোনের গলা। এরপর তারা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর চলে পিনপতন নিস্তব্দতা। এরপর শোকের ভ্যানে খানিকটা শান্তির পরশ, পরক্ষণেই লাশবাহী ভ্যানটিকে নেওয়া হয় ফের তালা থানায়।পরিবারের বক্তব্য, দূর্ঘটনায় লাশের মুখ বিকৃত হওয়ায় পরিধেয় বোরখা, ওড়না ও শরীরের গঠন দেখে তারা অনেকটা নিশ্চিত হন যে, লাশটি তাদের বোন রাজিয়ার।পরে থানা পুলিশ লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পিবিআইয়ের সহযোগীতা কামনা করেন। এর পর তারা নিশ্চিত হন যে, মৃতদেহটি পাইকগাছার কপিলমুনি ইউনিয়নের কাজিমুছা-রামচন্দ্র নগরের জহর হালদারের মেয়ে সেলিনা বেগম (৩৯) এর।সেলিনার ভাই বেলায়েত হালদার জানান, সেলিনা তাদের সবার ছোট বোন। সে মানষিক রোগী, বিভিন্ন সময় বাড়ির কাউকে না জানিয়ে এদিক-সেদিক চলে যায়। সর্বশেষ দু’দিন আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা-খুঁজি করেও সন্ধান পায়নি। শেষে জানতে পারলেন, মর্মান্তিক সদক দূর্ঘটনায় ওর (সেলিনা) মৃত্যু হয়েছে।এ বিষয়ে তালা থানার অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান জানান, পরিবারের লোকের কোন অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)