অক্টোবর মাসে দেশে ৪৪৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৬৯
অনলাইন ডেস্ক:
সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসে দেশে ৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪৬৯ জন নিহত ও ৮৩৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭৪ জন নারী ও ৬৬ শিশু রয়েছেন। একই সময়ে ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ২১টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন।
৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে ৪৬ দশমিক ৯৫ শতাংশই (২০৮টি) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, এতে নিহত হয়েছেন ১৯৬ জন, যা মোট নিহতের ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অক্টোবরের সড়ক দুর্ঘটনায় ১০২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এছাড়া যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৭ জন, যা মোট নিহতের ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংগঠনটি।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৬ জন, বাসের যাত্রী ৩১ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, পিকআপ-ট্রলি-লরি আরোহী ২০ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১২ জন রয়েছেন। এছাড়া থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি অটোরিকশা-অটোভ্যান-টমটম) ৯৪ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-ধান মাড়াই গাড়ি-পাওয়ারটিলার) ১০ জন এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ৪ জন রয়েছেন।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-১৮ চাকার লরি ২৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বাস ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, থ্রি-হুইলার ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ, বাইসাইকেল-রিকশা এক দশমিক ৮১ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২ দশমিক ৭১ শতাংশ।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ভোরে ঘটেছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, সকালে ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ, দুপুরে ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বিকেলে ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং রাতে ২৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক শূন্য ৬ শত্ংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ১১ শতাংশ। রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং প্রাণহানি ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩১ দুর্ঘটনায় ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২২ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৪ জন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩৪ দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম মাগুরা, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পঞ্চগড় জেলায়। এ ৪ জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি। ঢাকায় ২৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ৩৪ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৩ জন, আনসার সদস্য ২ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৯ জন, সাংবাদিক ৪ জন, প্রকৌশলী ২ জন, বিভিন্ন ব্যাংক-বিমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৭ জন, বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৬ জন। এছাড়া ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২১ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৭ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৪ জন, পোশাকশ্রমিক ১১ জন, নির্মাণশ্রমিক ৬ জন, প্রতিবন্ধী ৪ জন এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রীসহ দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসা ও কলেজের ৫৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ-এর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজির মতো কারণও রয়েছে।