ডুমুরিয়ায় তিন দপ্তরের গড়িমসিতে দেড় মাসেও চালু হয়নি ১০ সেচপাম্প !
আব্দুর রশিদ: ডুমুরিয়ায় বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত জটিলতায় সংযোগ পাইনি সেচযন্ত্রে। ফলে ঘাটে এসে গড়াগড়ি খাচ্ছে ১০টি সেচযন্ত্র। তিন দপ্তরের গড়িমসিতে ইতিমধ্যে পার হয়ে গেলো দেড় মাস। এতে হুমকীতে পড়তে যাচ্ছে ১৪টি বিলের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ। এদিকে সেচযন্ত্র স্থাপনসহ চালুর দাবীতে তিন দিনের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়েছে বিলের ভুক্তভোগী কৃষকরা। নইলে আন্দোলনে নামার হুমকীও দিয়েছেন তারা।জানা যায়, আকাশ বন্যায় প্রায় দেড় মাস হাবুডুবু খাচ্ছে ডুমুরিয়াসহ বিলডাকাতিয়ার কয়েক লাখ মানুষ। ভেসে গেছে হাজার হাজার মাছের ঘের। বৃহত্তর এই অঞ্চলে ৫০ হাজার হেক্টরের বেশি কৃষি ভুমি রয়েছে। মাছ ও সবজির ৫’শ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ জমিতে ইতিপূর্বে ব্যাপকভাবে বোরো আবাদ চাষাবাদ হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পানি নিষ্কাশনে সু-ব্যবস্থা না থাকায় হুমকীতে পড়েছে চলতি বোরো আবাদ। এদিকে বোরো আবাদ চাষাযোগ্য করতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষ ১০টি সেচযন্ত্র বরাদ্দ দিয়েছে গেল দেড় মাস আগে। ডুমুরিয়া সদরে গোলনা ফায়ার সার্ভিসের সামনে ২টি, চহেড়া স্লুইজ গেটে ৫টি, ষষ্ঠিতলা স্লুইজ গেটে ১টি, নরনিয়া স্লুইজ গেটে ১টি ও দহকুলা গেটে ১টি সেচপাম্প স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত জটিলতায় আজো পাম্পগুলো চালু হয়নি। সময়মতো পাম্প চালু না হলে চলতি বোরো মৌসুমে গোলনা, খলসী, কোদালকাটা, উখড়া, মেছাঘোনা, মির্জাপুর, বিলসিংগা, জোয়ারের বিল, নরনিয়া, বাদুড়িয়া, ঘোষড়া, মাগুরাঘোনা ও দহকুলা বিলে বোরো চাষাবাদ হুমকীতে পড়বে। এদিকে শোলমারী ১০ ভেন্ট রেগুলেটর দিয়ে রংপুর, বিলডাকাতিয়া, গুটুদিয়া, রঘুনাপুর ইউনিয়নের পানি নামছে। তাছাড়া বিকল্প পথে ময়ুর নদী দিয়েও পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।এদিকে বিদ্যুতের রেট নিয়ে দ্বিধাদন্ধে পড়েছে কৃষকরা। সেচ রেট প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ২৫ পয়সা এবং পানি নিষ্কাশন রেট ৯ টাকা ৭৫ পয়সা। তবে বিএডিসি, কৃষি ও পল্লি বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের গড়িমসিতে বিলম্ব হচ্ছে সেচযন্ত্র চালু হওয়া। এমনটাই মনে করছেন কৃষকরা। তবে আগামী তিন দিনের মধ্যে পাম্পস্থাপন সহ চালু না হলে আন্দোলনে নামার হুমকী দিয়েছেন বিলের কৃষক সমাজ।সিংগা বিলের কৃষক জামির হোসেন জানান , আমরা দু’মাস ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিচ্ছি। কারও মন গলছে না। বিএডিসি এবং পল্লী বিদ্যূৎ রেট নিয়ে যে যার অবস্থানে রয়েছে। এখন নিরুপায় হয়ে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হচ্ছি। খর্ণিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল হোসেন দিদার জানান, আমাদের বিল সিংগার পানি নিষ্কাশনে ৫টি সেচপাম্প বরাদ্দ দিয়েছে দেড়মাস হয়ে গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিলের রেট সংক্রান্ত জটিলতা এবং সংযোগ না পাওয়ায় পাম্পগুলো এখনো চালু করতে পারেনি।সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আমান উল্লাহ বলেন, সেচ রেটে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া আছে। কিন্তু আমাদের কেন জটিলতা হচ্ছে বুঝলাম না। তবে সময় মতো পানি নিষ্কাশন করতে না পারলে এ বিলে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।এ বিষয় খুলনা পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির ডুমুরিয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী কাজী রমজান আলী জানান, বিদ্যুতের রেট সংক্রান্ত একটা বিষয় নিয়ে জটিলতা ছিলো। বিএডিসি এবং কৃষি অধিদপ্তরের সাথে আমাদের সমন্বয় হয়ে গেছে এবং ডিমান্ডনোটও পেয়েছি। নিষ্কাশন রেট অর্থাৎ ৯ টাকা ২৫ পয়সা ইউনিট প্রতি বিল করা হবে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) এনিয়ে বিএডিসি ও কৃষি অধিদপ্তরের সাথে আমাদের চুক্তিপত্র হওয়ার কথা রয়েছে। হলেই দ্রæত সংযোগ দেয়া হবে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, আগে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আজই(সোমবার) পল্লী বিদ্যুৎকে অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করা যায় দু’এক দিনের মধ্যে সেচ পাম্প চালু করা সম্ভব হবে।