দেবহাটার খলিষাখালীতে ভূমিহীন নেতা কামরুলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিন দিনে ও মামলা হয়নি, হামলাকারি চেয়ারম্যান আজিজুর ও মাছ আনারুলসহ ভূমিদস্যুরা প্রকাশ্যে
রঘুনাথ খাঁঃ শুক্রবার ভোরে সেনাবাহিনীর টহল শেষে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের ভ‚মিদস্যু আরিজুল ইসলাম ও গোলাম ফারুক বাবুর নেতৃত্বে ভ‚মিহীন নেতা কামরুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যাসহ ২০ জন ভ‚মিহীন নারী ও পুরুষকে জখম করার ঘটনায় তিন দিনেও মামলা হয়নি। ফলে হামলাকারি বহুল আলোচিত র্ভমিদস্যু কালিগঞ্জের নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ও তারই ব্যবসায়িক পার্টনার আনারুল ইসলাম (মাছ), পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলামস ফারুক বাবু, সাবেক চেয়ারম্যান শেখ সিরাজসহ দেড় শতাধিক ভ‚মিদস্যু প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।অপরদিকে হামলার পর নির্যাতন করে হামলার জন্য প্রস্তুত রাখা দা, ককটেলসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া ছয়জন ভ‚মিহীনকে শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। নিহত কামরুল ইসলামের স্ত্রী মর্জিনা বেগম জানান, গত শুক্রবার ভোরে সেনাবাহিনী খলিষাখালি ও নোড়ারচক এলাকায় টহলে আসে। একই সময়ে গাজীর হাট, ডেলটা মোড়, পারুলিয়া ও বাবুরাবাদ থেকে নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, তার ব্যবসায়িক পার্টনার আনারুল ইসলাম (মাছ), পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু, সাবেক চেয়ারম্যান শেখ সিরাজ, আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম, সুরুজ কাজী, সখীপুরের আব্দুল আজিজ, রামনাথপুরের জব্বার গাইনের ছেলে আলিম গাইন ও আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদের নেতৃত্বে শীর্ষ সন্ত্রাসী তালার মাছিয়াড়া গ্রামের পাখরা হালিম, কৃষ্ণনগরের বাহার আলী, ইন্দ্রনগরের শহীদুল ইসলাম, তার ভাই রবিউল ইসলাম বুল্লা, নোড়ার ইসাদ আলীর ছেলে আনারুল ইসলাম, শাহাজাহানের ছেলে রবিউল ইসলাম, আটশত বিঘার শওকত হোসেন , পলগাদার ষেখ আব্দুল মাজেদের ছেলে খোঁড়া শফি, একই গ্রমের ইউসুফ মুন্সির ছেলে সেলিম, শহীদুল, শফিকুল, জেহের আলীর ছেলে শহীদুল, , বসিরাবাদ মৌখালির সৈয়দ ঢালীর ছেলে সাঈদুল ঢালী, অঅকবর সরদারের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম, ইন্দ্রনগরের সেকেন্দার, মকিম শেখের ছেলে রেজাউল শেখ, জিয়াদ গাজীর ছেলে আব্দুল বারি, নওশের গাজীর ছেলে সবুর গাজী, এসহাক গাজীর ছেলে আদম গাজী, সামাদ শেখের ছেলে আইয়ুব শেখ, পূর্ব নলতার ইমান আলী মোল্লার ছেলে মাষ্টার শহীদুল, বাবুরাবাদের জেহের আলীর ছেলে আব্দুস সবুর, ইন্দ্রনগরের হামিজউদ্দিন শেখের ছেলে মানুরল ইসলাম ওরফে ডাকাত মনি, আশাশুনির গোদাড়ার পুলিশের দালাল মহিউদ্দিন, বালিয়াপুরের মোক্তার হোসেন, মহাজনপুরের ট্যারা হাবিব ওরফে বেলচা হাবিবসহ দুই শতাধিক শসস্ত্র সন্ত্রাসী ট্রাকে, মটর সাইকেলে ও পায়ে হেঁেট খলিশাখালিতে যায়। তারা তথ্য গোপন করে সেনাবাহিনী দিয়ে অভিযান পরিচালনা শেষে ভ‚মিদস্যু সুরুজ কাজীর দাবিকৃত বাসায় ও পার্শবর্তী এলাকায় ভ‚মিহীনদের উপর হামলা চালায়। এ সময় তারা নোড়ারচকের কয়েকটি বাড়ি থেকে পাঁচটি মটর সাইকেলসহ ভ‚মিহীনদের ঘর থেকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করে। হামলায় খলিষাখালির ভ‚মিহীন নেতা তার স্বামী কামরুলসহ ২০ জন মারাত্মক জখম হয়। নিজেদের মজুত রাখা দা, বোমা ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ ভ‚মিহীন রবিউল, মহরব, নুরুজ্জামান, হাসিবসহ ছয়জনকে ধেের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয় ভ‚মিদস্যুরা। ভ‚মিদস্যুদের হাতে নিহত কামরুলকে সেনাবাহিনীর গাড়ির পিছনে পিছনে মটর সাইকেলে বসিয়ে বাবুরাবাদের জেহের আলীর ছেলে আব্দুস সবুর ও পূর্ব নলতার মাষ্টার শহীদুল সখীফুর স্বাস্থ্য কমপ্লেস্কের জরুরী বিভাগের সামনে ফেলে চলে আসে। আজিজুর রহমান ও মাছ আনারুলের নেতৃত্বাধীন হাফ প্যান্ট পরিহিত সন্ত্রাসীরা নতায় মাছ আনারুলের অফিসের পাশের ঘরে অস্ত্র শস্ত্র ও একটি ব্যাগ ভর্তি মোবাইল রেখে সুন্দরখালিতে চলে যায়। ওই ছয় ভ‚মিহীনদের বিরুদ্ধে দেবহাটার রামনাথপুরের জব্বার গাইনের চেলে আব্দুল আলীম গাইন বাদি হয়ে গোলাম কাজীর ঘেরের লীজ গ্রহীতা হিসেবে ২ নভেম্বর মামলা করেছে।মর্জিনা বেগদ জানান, শনিবার রাত ৮টার দিকে তিনি ও তার ছেলে দেবহাটা থানায় একটি এজাহার জমা দেন থানার পুলিশ পরিদর্শক নুর মোহাম্মদের কাছে। তিনি আশ্বাস দেওয়ার পরও রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা রেকর্ড হয়নি। ফলে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি মাছ আনারুল তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নিজেরা বাঁচতে বাদিকে (মর্জিনা) ম্যানেজ করে হত্যার ভার ভ‚মিহীনদের উপর চাপাবে বলে প্রচার দিচ্ছে। তবে মামলা নেওয়ার ব্যাপারে তার ছেলে ও জামাতা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেছে। তিনি দ্রæত মামলা রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
প্রসঙ্গত,জাল জালিয়াতের মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরী করে দেবহাটার শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, সুরুজ কাজী, সখিপুরের আব্দুল আজিজ ও একই এলাকার বেসরকারি সংস্থা আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম, পারুলিয়ার ইকবাল মাসুদ সহ বেশ কয়েকজন ভ‚মিদস্যূ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে চÐি চরণ ঘোষের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি ১৯৫৫ সাল থেকে দখল করে আসছিলো। ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই জমি লাওয়ারিশ হিসাবে ঘোষনা করে। এরপর ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে সাপমারা খালের দুই ধার থেকে উচ্ছেদ হওয়া প্রায় ৮০০ পরিবার সেখানে বসবাস করে আসছিলো। প্রশাসন যাতে তাদের উচ্ছেদ না করতে পারে সেজন্য ভ‚মিহীনদের পক্ষ থেকে মহামান্য হাইকোর্টে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি ১৫০০/২২ নং রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়। আদালত ভ‚মিহীনদের বসবাসের সুবিধার্থে স্থিতাবস্থা জারি করে। যাহা আজও চলমান। স্থিতাবস্থা জারি থাকার পরও ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের সহায়তায় ভ‚মিদস্যুরা ভ‚মিহীনদের ৭৮৫টি বাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এরআগে ভ‚মিদস্যূদের দায়েরকৃত মামলায় খালাস পাওয়া আসামী শরিফুল, কামরুল (শুক্রবার নিহত) ও মুর্শিদকে আদালত থেকে ধরে এনে ডাকাতির চেষ্টা ও অস্ত্র মামলায় কোর্টে পাঠায় পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও নির্যাতনের খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শহরের পিএন হাইস্কুল এর পাশ থেকে তুলে নিয়ে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালান তৎকালি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। এ সময় রঘুনাথ খাঁর নামে একটি নাশকতা ও একটি চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়। একই দিনে ভ‚মিহীন ইউনুসকে বদরতলা মাসের সেট থেকে তুলে এনে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশের বিরুদ্ধে জমির মালিক দাবিদাররা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে সিভিল রিভিউ পিটিশন দাখিল করলে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওই রিভিশন খারিজ করে দেন।
২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ সদেস্যর বিচারপতিদের বেঞ্চ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারকের বেঞ্চ ওই জমি লাওয়ারিশ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও গত নয় মাসে তা কার্যকর না করায় শুক্রবার কামরুলকে পিটিয়ে হত্যা সহ ২০ জনকে পিটিয়ে জখম করতে সাহস পেয়েছে আজিজুল বাহিনী।