টানা দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক:
প্রথমার্ধে গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল আদায় করে নেয় দুই দল। প্রথমে মনিকা চাকমার গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। এরপর দ্রুত সমতা ফেরায় নেপাল। দুই গোলের পর বেড়ে যায় গ্যালারির উত্তাপ। ঋতুপর্ণা চাকমার চোখ ধাঁধানো নিশানাভেদে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তুলেছে বাঘিনীরা।

কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বুধবার সন্ধ্যায় গ্যালারি ভর্তি দর্শক উপভোগ করছেন টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এক ফাইনাল। আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়ে লড়াই জমিয়েছে বাংলাদেশ ও নেপাল। যদিও কোনো দল প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি।

আক্রমণের হিসাবে লাল-সবুজের দল তুলনামূলক কিছুটা এগিয়ে থাকলেও স্বাগতিকরা ছাড় দিতে নারাজ। প্রথম মিনিটেই বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছিল। মনিকা চাকমার পাসে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট তহুরার, ম্যাচের মেয়াদ তখন ৫২ সেকেন্ড। দেড় মিনিটের মাথায় আবারো সুযোগ । পোস্টের সামনে থেকে শট নিয়েছিলেন গিতা রানা। এ সময় ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান। বল পায়ে নেন তহুরা, তার দূরপাল্লার শট পোস্টের উপরের বারে লাগে। ফিরতি বলে হেড নিলেও বল লুফে নেন নেপালি গোলরক্ষক অঞ্জলি।

নেপাল দশম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো। সাবিত্রা ভান্ডারি বল নিয়ে এগিয়ে যান। সামনে এসে গোলরক্ষক রূপনা চাকমা তা ঠেকান। ফিরতি বলে আমিশা কারকি গোলরক্ষকের নিজের অবস্থানে না থাকা অবস্থায় দূরপাল্লার নেন। বল উপরের বারে লেগে ফিরলে বাংলাদেশ এ যাত্রায় বেঁচে যায়।

২০তম মিনিটে মারিয়া মান্দাকে বাজেভাবে ফাউল করায় নেপালি ফুটবলার অমৃতা হলুদ কার্ড দেখেন। পাঁচ মিনিট পর মাসুরা পারভীনের দূর থেকে নেওয়া শট তেমন কোনো পরীক্ষা নিতে পারেনি নেপালি গোলরক্ষকের পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশ গোলরক্ষক রূপনার ভুলের পরও বিপদ ঘটেনি।

৩৩ মিনিটে নেপাল বক্সের ঠিক বাইরে শামসুন্নাহার জুনিয়র ফাউলের স্বীকার হলে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। মারিয়ার শট বারের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। মিনিট দুয়েক পর মনিকার সেট পিস থেকে নেয়া শট অনেক উঁচু দিয়ে যায়। এরপর ডি বক্সের জটলার ভেতর বল কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে না ঋতুপর্ণা চাকমার কাছে যায়। পোস্ট ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও তিনি ভলিতে বল জালে জড়াতে পারেননি।

খেলার ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশের জন্য ঘটতে পারতো বিপদ। আনিতা তাদের পোস্টের কাছ থেকে লম্বা গোল কিক নেন। পোস্টের অনেক সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রূপনা বল ধরতেই পারেননি। তার মাথার উপর দিয়ে অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভেদ হয়নি।

প্রথমার্ধের পর অবশেষে ভাঙে ডেডলক। আক্রমণের ধারায় ৫২ মিনিটে এগিয়ে যায় লাল-সবুজের দল। দারুণ এক আক্রমণে তহুরা খাতুনের পাসে নেপালের রক্ষণ ভেদ করে বাংলাদেশ এগিয়ে দেন মনিকা চাকমা। তিন মিনিট পরই অবশ্য নেপাল সমতায় ফেরে প্রীতি রাইয়ের অসাধারণ একপাস ধরে লক্ষ্যভেদ করেন নেপালি ফরোয়ার্ড আমিশা।

৬১ মিনিটে সাবিত্রা ভান্ডারির শট জালে ঢোকেনি। গোল হজম থেকে বেঁচে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। বাঘিনীদের গোলরক্ষক রূপনা ৬৬ মিনিটে রক্ষণভাগ ভেঙে সাবিতার শট সামান্য ডানে ঝাপিয়ে ধরেন। নেপালি গোলরক্ষক অঞ্জলি ৬৯ মিনিটে মারিয়ার দূরপাল্লার বুলেট গতির শট লাফিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান।

রূপনা ৭৬ মিনিটে দুইবার দলকে রক্ষা করেন। সাবিত্রা পোস্টের সামনে বিপদজনকভাবে বল নিয়ে এগিয়ে যান। দৌড়ে সামনে এসে ক্লিয়ার করেন বাংলাদশি গোলরক্ষক। বদলি খেলোয়াড় রেশমির কিকে বল দ্রুততার সঙ্গে ধরেন।

ঋতুপর্ণার দারুণ ক্রসে শেষ মুহূর্তে বল মাথায় ছোঁয়াতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র, তাই ৭৮ মিনিটে বাঘিনীদের এ যাত্রায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি। তবে ৮১ মিনিটে গ্যালারির দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন ঋতুপর্ণা। বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ এক শটে নেপালি গোলরক্ষককে পরাস্ত করে সাফ জয়ের অগ্রিম বার্তা দেন।

ম্যাচের বাকি সময়টাতেও ছিল টানটান উত্তেজনা। একের পর এক আক্রমণ দুই দল গড়লেও আর কেউ জালের দেখা পায়নি। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পর আবারো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে ভাসে সাবিনা খাতুনের দল।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)