সাতক্ষীরায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের মৃত্যু
রঘুনাথ খাঁ ঃ মসজিদের মিটার থেকে বাজারের ব্যবসায়িদের বৈদ্যুতিক লাইন দেওয়া বাবদ পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আব্দুল মান্নান নামের এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুল মান্নান (৫৬) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের ইন্দিরা গ্রামের মৃত আমিনউদ্দিনের ছেলে ও আগরদাঁড়ি রায়তুর নূর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
এদিকে ময়না তদন্ত ছাড়াই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে লাশ বাড়িতে আনার পর ুনহত আব্দুল মান্নানের স্বজনরা নির্যাতনকারি তজিবর রহমানের বাড়িতে হামলা , ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।আগরদাঁড়ি গ্রামের আব্দুস সোবহান, জুলফিকার আলীসহ কয়েকজন জানান, আগরদাঁড়ি রায়তুর নূর জামে মসজিদটির এক সময় গোলপাতার ছাওনি ছিলো। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নানের একান্ত প্রচেষ্টায় ও সকলের সহযোগিতায় মসজিদটি আজ মোজাইক টাইলস দিয়ে নির্মিত হয়েছে। এ মসজিদের মিটার থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা প্রতি হাটে ২০ টাকার বিনিময়ে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব ও স্থায়ী ব্যবসায়িরা দুটি বাল্ব ও একটি ফ্যান চালানোর সুবিধার্থে মাসে এক হাজার করে টাকা মসজিদ কমিটিকে দিয়ে থাকেন। ওই টাকা দিয়ে সমজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেমের মাসিক সম্মানির টাকা পরিশোধ ও মসজিদের উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়।
তারা আরো জানান, আগরদাঁড়ি গরুর হাটের রুটি ব্যবসায়ি আশিকের কাছে চার মাসের বিদ্যুৎ বিলের টাকা বাকী ছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বকেয়া টাকা দেওয়ার জন্য আশিককে বলেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান। এ সময় মাদক ব্যবসায়ি শাহজাহান তড়িঘড়ি করে বাজারের ব্যবসায়ি সুজাউদ্দিনের ছেলে তজিবরকে ডেকে আনেন। এ সময় আব্দুল মান্নান ও তজিবরের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এরপর কথাকাটাকাটি হয় আব্দুস সালামের চায়ের দোকানের পাশে। এতে আব্দুল মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে ছুঁটে আসে আব্দুল মান্নানের ছেলে সুলায়মান রাজু ও তার এক বন্ধু। রাজুর সাথে তজিবরের হাতাহাতি হয়। খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত সোয়া সাতটার দিকে তজিবরের তিন ভাই সাকিব, জব্বার ও হবিবর ছুঁটে এসে আব্দুল মান্নানকে মারপিট করে। এতে আব্দুল মান্নান মাটিতে পড়ে যান। মান্নানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রæত তাকে মতিউর রহমান সাগরের দোকানে ও পরে স্থানীয় গ্রাম ডাক্তার প্রশান্ত নারায়ন ঘোষের চেম্বারে নেওয়া হয়। প্রশান্ত নারায়নের পরামর্শে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। জরুরী বিভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা শেষে রাত আটটার দিকে মান্নানকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ খবর পাওয়ার আগেই সদর হাসপাতাল থেকে আব্দুল মান্নানের লাশ রাত সাড়ে আটটার দিকে বাড়িতে আনা হয়। পরে মান্নানের স্বজনরা তজিবরের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে। রাতেই সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামান, সদর থানার উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সরকারসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শে বুধবার দুপুরে সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে মান্নানের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ইন্দিরা গ্রামের সুলায়মান রাজু জানান, তার বাবা আব্দুল মান্নান ২০০২ সাল থেকে আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত ইউপি সদস্য ছিলেন। ২০১৩ সালে চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ার পর তার বাবা প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উপনির্বাচনে তার বাবা জয়লাভ করে আড়াই বছর ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কোন কারণ ছাড়াই মারপিট করে মেরে ফেলা হয়েছে। তবে এ নিয়ে তিনি কোন মামলা করতে চান না।
এ ব্যাপারে তজিবর রহমান মারপিটের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আব্দুল মান্নান ছিলেন হার্টের রোগী। জোরে চিৎকার করার ফলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মান্নানের স্বজনরা তাদের বাড়িতে ভাংচুর, ৫০ হাজার নগদ টাকা ও একটি মটর সাইকেল লুট করেছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে কোন পক্ষই বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।