চট্টগ্রাম সনাতনীদের বিশাল সমাবেশ, ঢাকায় লংমার্চের ঘোষণা
অনলাইন ডেস্ক:
গত পাঁচ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশব্যাপী মন্দির, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগের প্রতিবাদ এবং আট দফা দাবি বাস্তবায়নে চট্টগ্রামে গণসমাবেশে করেছে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ শেষে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর লালদিঘি মাঠে গণসমাবেশে চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা থেকে সনাতনীরা মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশের প্রধান বক্তা বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, সনাতনীদের এ দেশ থেকে উৎখাতের চেষ্টা হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। যে মঞ্চ থেকে স্বাধীনতার ছয় দফা দাবি উঠেছিল, সেই মাঠে বাংলাদেশে সব মঠ মিশনের সাধুরা সমবেত হয়েছেন সনাতনীদের দাবি আদায়ে। সনাতনীদের ওপর যতোই নিপীড়ন হবে, আমরা ততো বেশি ঐক্যবদ্ধ হব। দাবি আদায়ে বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ শেষে আমরা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করবো।
তিনি বলেন, কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান, সিরিয়া হবে। সাম্প্রদায়িক আচরণ করে বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, সহনশীলতা লুপ্ত হওয়ায় বারবার ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলেও দেশে স্থিতিশীলতা আসছে না। এতে সম্মানবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকবো না।
সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে আসন দাবি করে তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের নামে প্রহসনকে মেনে নেবো না। কেউ যদি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনায় জড়িত থাকে, তাদের আসামি করুন, বিরোধিতা করবো না। কিন্তু বেছে বেছে মামলায় আসামি করা হচ্ছে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে সংবিধান সংশোধনকে মানবো না। জেএম সেন হলে মামলায় আসামিদের জামিন হয়ে গেলো। আমাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানলে জামিন পায়। আর হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, এটা সুশৃঙ্খল আন্দোলন, রাজনৈতিক আন্দোলন না। আজকের সমাবেশে নানা প্রোপাগান্ডা করা হয়েছে। আমাদের সমাবেশকে রাজনৈতিক ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ তপনানন্দ গিরি মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ, কৈবল্যধামের মহারাজ কালিপদ ভট্টাচার্য, স্বামী গোপীনাথ মহারাজ প্রমুখ।
তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে সনাতনীরা শুধু অবহেলিত ছিল। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু সনাতনীদের ভাগ্য বদলায় না। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা সনাতনীদের দুঃখ দুর্দশাকে লুকানোর চেষ্টা করে। সনাতনীদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়, নির্যাতন লুকিয়ে স্বাভাবিকতার কথা বলে। গত ৫৩ বছরে এদেশে হওয়া হিন্দু নির্যাতন, খুনের কোনো বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা বারবার এই ধরণের ঘটনায় উৎসাহিত হয়েছে। প্রতিবার ভোট পরবর্তী বা ক্ষমতার পালাবদলের সময় নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে হিন্দুদের ওপর।
এর আগে গত ১১ ও ১২ আগস্ট সারাদেশে সহিংসতা, মন্দির ভাঙচুর ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ থেকে আচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবি দাবিগুলো হলো-
- সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপযুক্ত শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে।
- ‘সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করতে হবে।
- হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করার পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
- ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
- প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
- ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করতে হবে।
- শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দিতে হবে।
এরপর সাত সেপ্টেম্বর খুলনায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে কলেজছাত্র উৎসব মণ্ডলকে হত্যাচেষ্টাসহ দেশব্যাপী সংখ্যালঘু নির্যাতন, মঠ-মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেন চট্টগ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।