কলারোয়ায় জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা প্রদানে মতবিনিময়
Post Views:
৮৪২
কামরুল হাসানঃ কলারোয়ায় ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের ‘জরায়ুমুখ ক্যান্সার’ প্রতিরোধক এইচপিভি টিকা পাদানের নিমিত্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সমন্বয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৪অক্টোবর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইচপিভি(হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস)টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হতে যাচ্ছে, যেটি চলবে ৩০দিন। ওই সময়ে পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী অথবা ১০-১৪ বছর বয়সী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভুত কিশোরীদেরও বিনামূল্যে এইচপিভির টিকা প্রদান করা হবে। এই টিকা নিতে হলে আগে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে।মঙ্গলবার(২২ অক্টোবর) বেলা ১১ টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে এ টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে কলারোয়া প্রাথমিক শিক্ষক মিলনায়তনে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় এম.টি.পি আই কাজী নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে নির্ধারিত বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার বাপ্পী কুমার দাস। এ সময় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জয়নাল আবদীন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার এইচ.এম.রোকনুজ্জামান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষক আমানুল্লাহ আমান, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান, প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন, প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক রাশেদুল হাসান কামরুল, শামসুল হক, জাহাঙ্গীর হোসেন, সহিদুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, মুজিবুর রহমান, ইসরাইল হোসেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান, জিয়াউর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, সুপার মুজিবর রহমান, মোনায়েম হোসেনসহ উপজেলার ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ। সভায় জানানো হয়, জরায়ু ক্যান্সারে বছরে বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ নারী মারা যান, যার মধ্যে ৯০ ভাগ মৃত্যুই ঘটে উন্নয়নশীল দেশে।বাংলাদেশে প্রতি লাখ নারীর মধ্যে ১৬ জন জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং ৬ হাজার ৫৮২ জন নারী বছরে মারা যান। অথচ এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সার। এইচপিভি টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আরো বলা হয়, জরায়ুমুখ ক্যান্সার (সার্ভিক্যাল ক্যান্সার)ভাইরাসজনিত একটি প্রাণঘাতী প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। এই রোগ বাংলাদেশের নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুতে দ্বিতীয়। অতিরিক্ত সাদা স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, অনিয়মিত রক্তস্রাব, শারীরিক মিলনের পর রক্তপাত, মাসিক বন্ধ হওয়ার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমর, তলপেট, উরুতে ব্যাথা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। তবে বাল্যবিবাহ, ঘন ঘন সন্তান প্রসাব, একাধিক যৌনসঙ্গী, ধুমপায়ী, এইডস রোগী, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন নন এমন নারীরা এই রোগের ঝুঁকিতে থাকে। তাই কিশোরী বয়সে এইচপিভি(হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) টিকা নিলে নারীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত নয় এমন ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের এক ডোজ এইচপিভি টিকা দেওয়া হবে। এইচপিভি টিকা নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট তারিখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা স্থায়ী বা অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে আসতে হবে। এজন্য নির্দিষ্ট বয়সী ও নির্ধারিত শ্রেণিতে অধ্যয়নরত কিশোরীরা www.vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে টিকাকার্ড সংগ্রহ করতে পারবে।পরে এই কার্ড দেখিয়ে টিকার ডোজ গ্রহণ করা যাবে। রেজিস্ট্রেশনকৃতরা নিজ এলাকা ছাড়াও দেশের যে কোন স্থান থেকে টিকা নিতে পারবে।তবে এইচপিভি টিকা অত্যন্ত নিরাপদ। যা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত। তারপরও টিকার স্থানে লালচে ভাব বা ব্যাথা বা ফুলে যাওয়া হলে এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। কোন ধরণের ভয় বা আতঙ্কের কিছু নেই। ইতোপূর্বে গাজীপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এই টিকা প্রদানে কোন প্রকার সমস্যা দেখা যায়নি। টিকা দেয়ার পর যে কোন সমস্যা বা অসুবিধা হলে সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর্মীকে খবর দিতে হবে। প্রয়োজনে ছাত্রী বা কিশোরীকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। টিকা নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে সরকার সবধরণের চিকিৎসার খচর বহন করবে। এইচপিভি টিকা দেয়া শেষ হলে টিকা কার্ডটি দ্রুত সহকারে সংরক্ষণ করতে হবে। ভবিষ্যতে বিদেশযাত্রাসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা এবং টিকা পাওয়ার প্রমাণস্বরূপ টিকা কার্ডটি প্রয়োজন হতে পারে বলেও জানানো হয়।