তালায় ভুল চিকিৎসায় দুই প্রসূতির মৃত্যু,এলাকায় উত্তেজনা
ফারুক সাগর: তালা উপজেলায় বেসরকারী এক ক্লিনিকে অপচিকিৎসার কারণে দুই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে।শুক্রবার (১৮অক্টোবর) দিবাগত রাতে উপজেলার পাটকেলঘাটা বাজারে অবস্থিত লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। ফলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।অন্যদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে রাতেই ভুক্তভোগীর দুই পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেছে ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী পুলক পাল বলে এলাকায় গুজ্ঞন শোনা যাচ্ছে। এছাড়া ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা চালু রাখতে সকাল থেকে দশ লক্ষ টাকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে দৌঁড় ঝাপ করতে দেখা গেছে।মৃত প্রসূতিরা হলেন,খলিশখালী ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (২২) এবং গনেশপুর গ্রামের ফয়সাল হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা বেগম(২৪)।সরোজমিনে গেলে ভুক্তভোগীর স্বামী গনেশপুর গ্রামের ফয়সাল হোসেন বলেন,দুপুরে তার স্ত্রীকে সন্তান প্রসূতির জন্য ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরে রাতে তার স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হলে সাতক্ষীরার আর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
অপরদিকে আরেক ভুক্তভোগীর স্বামী এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুল ছালাম বলেন,তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার সকালে পাটকেলঘাটার লোকনাথ ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করা হয়। রাত ১০টার দিকে স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাতক্ষীরার বেসরকারী ক্লিনিক হার্ডফাউন্ডেশানে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তবে ময়নাতদন্তের ছাড়া স্ত্রীর দাফনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নাই।নাম না জানানোর শর্তে ওই ক্লিনিকে সাবেক এক কর্মচারী বলেন, পুলক পাল বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে কম টাকায় চিকিৎসা করা হয় বলে তার ক্লিনিকে রোগী ভর্তি করিয়ে থাকে। পরে অপচিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। এছাড়া তার ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের অধিকাংশ করেন ওই ক্লিনিকের কিংকর নামে এক কর্মকর্তা। পরে অবস্থা বেগতিক হলে মৃত্যুর দায় এড়াতে তাদের পাঠানো হয় শহরের নামি দামী হাসপাতালে। তার অপচিকিৎসার স্বীকার হয়ে ইতিমধ্য প্রসূতি মা,শিশু সহ প্রায় ডজন খানেক মানুষের প্রানহানী ঘটেছে। কিন্তু সুচতুর পুলক সকল হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত।
অভিযোগ অস্বীকার করে লোকনাথ নাসিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বাধিকারী পুলক পাল বলেন,বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলবেন। পরবর্তীতে একাধিক বার ফোনে কল দিলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ওই ক্লিনিকে এক কর্মচারী বলেন, ডাক্তার শাহরিয়ার কবির ইমন এবং বরকত সিজার করেছেন। পরে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাদের আত্মীয়দের জানিয়ে সাতক্ষীরার হার্ডফাউন্ডেশানে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের।সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আব্দুল সালাম বলেন, ঘটনাস্থলে তদন্ত করার জন্য তালা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।