কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত গাজীসহ ৫ জন গ্রেপ্তার
রঘুনাথ খাঁ ঃ সাতক্ষীরা জেলা সাব রেজিষ্টার অফিসের মূল ভলিউম রেজিষ্টার থেকে পাতা ছিঁড়ে তাতে জাল সত্যায়িত কাগজ জুড়ে প্রমান লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেন , নকল নবীশ অনল কৃষ্ণ রায়সহ পাঁচজনকে আটক করে জনতা পুলিশে সোপর্দ করেছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা নাব রেজিষ্ট্রি অফিসে এ ঘটনা ঘটে। বৃহষ্পতিবার বিকেলে পুলিশ তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেন, তার ভাইপো ইয়াছিন আরাফাত ওরফে শাওন, সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের বরখাস্তকৃত দলিল লেখক এসএম শাহজাহান, সাতক্ষীরা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহকারি কাজী আবুল বাসার ও জেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের নকল নবীশ অনল কৃষ্ণ রায়। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম তার সমুদয় সম্পত্তি রেজিষ্ট্রি কোবালা দলিল ৪৫২০/৯৩,৩০৭৭/৯৩, ৪৫১৫/৯৪ ও৩৭৬১/৯৫ এর মাধ্যমে তার স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে হস্তান্তর করে যান। ওই জমির মধ্যে মৌখালি মৌজার তিনটি খতিয়ানে পাওয়া ১৪ বিঘা জমি জাহানারা খাতুন ও লতিফা খাতুন বিঘাপ্রতি বার্ষিক ১২ হাজার টাকায় তাদের দুই ভাই গাজী শওকত হোসেন ও জাফর আলী গাজীর কাছে ২০১৯ সালে ইজারা দেন। ইজারা গ্রহীতা শওকত হোসেন বোনদের প্রথমে কিছু টাকা দিলেও পরবর্তীতে কোন টাকা দেন নাই। এ ঘটনায় শ্যামনগর উপজেলার ভুুরুলিয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা শিকারীর ছেলে ইমরান হোসেন তার মা ও খালার সাত লাখ ৯২ হাজার বকেয়া ইজারার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে মামা গাজী শওকত হোসেন ও জাফর গাজীসহ তাদের পরিবারের সাত সদস্যের বিরুদ্ধে গত ১০ অক্টোবর সাতক্ষীরার ২নং আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিচারক মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। মামলার বিষয়টি জানতে পেরে দুই বোনের নামীয় জমির দলিলের প্রমান নষ্ট করতে জেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে চারটি দলিলের ভলিউম রেজিষ্টার খাতা থেকে চার থেকে পাঁচটি করে পাতা ছিঁড়ে নষ্ট করে শওকত হোসেনর পরিকল্পনায় তাতে জাল সত্যায়িত ভলিউমের কপি জুড়ে দেয়া হয়। বিষয়টি বুধবার সন্ধ্যার পর ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শওকত চেয়ারম্যানের ভাগ্নে ইমরান হোসেনসহ কয়েকজন জেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ছুঁটে আসেন। আটককৃত ভাইপো শাওনকে ছাড়াতে আসেন গাজী শওকত হোসেন। চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেনসহ বুধবার সন্ধ্যায় তার ভাইপো ইয়াছিন আরাফাত শাওন, নকলনবীশ অনল কৃষ্ণ রায়, বরখাস্তকৃত দলিল লেখক এসএম শাওজাহান ও অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারি হয়েও বিশেষ দায়িত্বে থাকা কাজী আবুল বাসারকে জনতা আটক করে গোয়েন্দা পুলিশে সোপর্দ করে। পরে দুদকে মামলার প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেনসহ ৫ জনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহষ্পতিবার বিকেলে আদালতে পাঠায় পুলিশ।সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের রেজিষ্টার রিপন মুন্সির সঙ্গে তার ০১৭১৬-৮৯২২৪৪ নং মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি নাম্বারটি সিলেটের এক ব্যক্তির বলে উল্লেখ করেন।তবে জেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের রেকর্ড কিপার প্রদীপ ঘোষ চারটি দলিলের ভলিউম রেজিষ্টারের পাতা ছেঁড়া ও তাতে সত্যায়িত কপি সংযোজনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি প্রথমে বাদি হয়ে মামলা করলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। মামলাটি দুদকে করা হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাংলাদেশ সুবিধাবাদি দলের একজন বিশিষ্ঠ নেতা। রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে সাথে নতুন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হাতে ফুলের তোড়া ও মুখে মধু দিয়ে ওই দলে যোগদান করতে ওস্তাদ গাজী শওকত হোসেন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে শওকত হোসেন আওয়ামী লীগের তৎকালিন সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহম্মেদ এর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে যোগদান করেছেন। প্রথমে তিনি নৌকা প্রতীক পেলেও পরে আওয়ামী লীগ নেতা স্বজল মুখার্জী তার প্রতীকে কেড়ে নিয়ে নির্বাচন করে হেরে যান। বদলা নিতে গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরপরই গাজী শওকত হোসেনের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা স্বজল মুখার্জীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, লুটাপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তার প্রতিবন্ধি বোন শ্যামলী মুখার্জী। পরে তার বাড়ির ইট পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়। মাদকাটির চÐি চরণ মÐলের দুই শতাধিক বিঘা জমি দখল করে নেন গাজী শওকত হোসেন। যদিও গাজী শওকত হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, জেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের রেকর্ড কিপার প্রদীপ কুমার ঘোষ বৃহষ্পতিবার গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিলেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দুদকের এক্তিয়ারে পড়ে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় সদর সাব রেজিষ্টিার রিপন মুন্সিকে দুদকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একপর্য়ায়ে বৃহষ্পতিবার বিকেলে ওই পাঁচজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।