যে উপজেলায় ধানের চেয়ে খড়ের দাম বেশি
অনলাইন ডেস্ক:
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় এ বছর খড়ের দাম বাড়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তারা জানিয়েছেন, খড়ের একটি আঁটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমির খড় বিক্রয় করে তারা আয় করছেন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। যা থেকেই উঠে আসছে ধান চাষের খরচ। গবাদিপশুর পালন বেড়ে যাওয়ায় খড়ের দামও বেড়েছে।
লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউপির মরিচ পাশা গ্রামের কৃষক গোলজার মৃধা বলেন, এক বিঘা জমি থেকে খড় পাওয়া যায় ২৫০ থেকে ৩০০ আঁটি। যার মূল্য প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই খড় বিক্রি করেই আমাদের ধান চাষের খরচের টাকা উঠে আসছে। তাই এখন ধানের চেয়ে খড়ের কদর বেশি।
গোলজার মৃধা আরো বলেন, অথচ কয়েক বছর আগে অনেককে খড় বিনামূল্যে দিয়েছিলাম। ধান দিতে রাজি কিন্তু খড় দিতে রাজি না। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ধান চাষে লাভবান হচ্ছি।
লোহাগড়া উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, লোহাগড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে এবার ১১ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
লোহাগড়া উপজেলার নাওরা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর ৬ বিঘা জমি থেকে প্রায় ২ হাজার খড়ের আঁটি পেয়েছি। ২টি গরুর জন্য ১ হাজার আঁটি রেখে দিয়ে বাকি ১ হাজার আঁটি প্রতি পিস ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ধান চাষে লাভবান হচ্ছি।
উপজেলার বাবরা গ্রামের কৃষক আনিচুর রহমান বলেন, ধান চাষ করে তেমন লাভ না হলেও খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুশি। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এ বছর ৫ বিঘা জমির খড় বিক্রি করে পেয়েছি ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। আমার কাছে এখন খড়ের কদর অনেক বেশি।
উপজেলার লক্ষীপাশা লোহাগড়া ফিলিং স্টেশনের সামনে খড় বিক্রেতা কামরুল সরদার ও জেসমিন বেগম বলেন, আমরা কৃষকের কাছ থেকে প্রতি আঁটি খড় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় ক্রয় করে তা আমরা গরুর খামারির কাছে প্রতি আঁটি খড় ৫০ টাকায় বিক্রয় করে থাকি।
উপজেলার মরিচ পাশা গ্রামের গরু পালনকারী ইমদাদুল মোল্যা বলেন, খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় হতাশ। বাজারে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। আমার ৬টি গাভী আছে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫৫টি আঁটি খড় লাগে।
তিনি আরো বলেন, আগে আশেপাশে খালি জমি ছিল। ঘাসের অভাব ছিল না। এখন জমি পতিত থাকে না। তাই ঘাসের জমির অভাব।
উপজেলার কাউড়িখোলা গ্রামের কৃষক প্রসাদ গাইন বলেন, প্রায় এক বিঘা জমি থেকে ৩০০টি খড়ের আঁটি পেয়েছি। ৩টি গাভী আছে। বাকী খড় ক্রয় করে প্রায় ৩ হাজার খড়ের আঁটি মজুদ রেখেছি। আগের চেয়ে গরু ও দুধের দামও বেড়েছে।
লোহাগড়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চিকিৎসক লেলিন প্রধান বলেন, লোহাগড়া উপজেলায় গরু রয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার। প্রতিটি গরুকে গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ আঁটি খড় খাবার হিসেবে দিতে হয়। বিশেষ করে দুধেল গাভির জন্য খড় খুবই উপকারী। এজন্য কৃষকরা বাজার থেকে কেনা গো-খাদ্যের চেয়ে ধানের খড়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
লোহাগড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হৃদয় হোসেন বলেন, কৃষকরা এখন ধানের খড়ের প্রতি খুবই যত্নশীল হয়েছেন। অনেকে খড় বিক্রি করেই ধান চাষের খরচ তুলছেন। এখন তারা ধান চাষে আরো বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।