নরেন্দ্র মোদীর দেয়া শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে কালি মায়ের মাথার স্বর্ণের মুকুট চুরি
রঘুনাথ খাঁ:
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী মন্দিরের কালি মায়ের মাথায় থাকা স্বর্ণের মুকুট চুরির অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে পুরোহিত ও সেবায়েতের অনুপস্থিতির সুযোগে দুর্ধর্ষ এ চুরির ঘটনা ঘটে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২১ সালের ২১ মার্চ উক্ত মন্দির পরিদর্শনকালে কালি মায়ের মাথায় উপকৌটন হিসেবে উক্ত মুকুট পরিয়ে দিয়েছিলেন। এখবর জানার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে মন্দিরে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে দেখা গেছে ২৪/২৫ বছরের এক যুবক দুপুর দুইটা ৪৯ মিনিটে মন্দিরে প্রবেশ করে। এসময় স্বাভাবিকভাবে সে মন্দিরে ঢুকে ‘কালি মা’য়ের পিছনে দাড়িয়ে মুহুর্তের মধ্যে মুকুট খুলে নিয়ে ‘টি’ শার্টের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়। জিন্সের প্যান্ট ও সাদা ‘টি’ শার্ট পরিহিত ঐ যুবক মুকুট খুলে নেয়ার আগে এক সেকেন্ডের জন্য পাশে কেউ রয়েছে কিনা পর্যবেক্ষন করলেও তাকে কোন রকম বিচলিত মনে হয়নি। সমগ্র ঘটনা মাত্র ১০/১২ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটেছে বলে ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট প্রমান মিলেছে। মন্দিরে প্রবেশ করে মুকুট নেয়া যুবককে বেশ প্রশিক্ষিত ও পরিকল্পনামাফিক সে কাজটি করেছে বলে ধারনার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রসংগত উল্লেখ্য সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে ‘মা কালি’র একান্ন পীঠের এক পীঠকে কেন্দ্র করে শ্যামনগর উপজেলা সদর থেকে মাত্র কিলোমিটার দুরবর্তী ঈশ্বরীপুর গ্রামে গড়ে ওঠে শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী মন্দির। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশ বিদেশের অসংখ্য সনাতন ধর্মের দর্শনার্থী উক্ত মন্দিরে থাকা ‘কালি মা’য়ের দর্শনসহ পূজা দিতে আসেন।
জানা যায় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মন্দিরে তালা লাগিয়ে বাড়িতে চলে যায় পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জী। একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্বে থাকা রেখা রানী পূজার কাজে ব্যবহৃত প্লেট ও গ্লাস পরিস্কারের জন্য মন্দিরের প্রবেশদ্বারের চাবি খুলে। এসময় তিনি কিছু সরঞ্জামাদী পাশের ভবনে রেখে বাকি জিনিসপত্র নিতে পুনরায় মন্দিরে ঢুকে ‘কালি মা’য়ের মাথার মুকুট দেখতে না পেয়ে বিষয়টি সকলকে জানান।
এবিষয়ে পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জী বলেন তিনি দুপুর দুইটার একটু আগে মন্দিরে তালা লাগিয়ে বাড়িতে যান। এসময় সেবায়েতের দায়িত্বে থাকা রেখা রানীকে চাবি দিয়ে ভিতরের অপরিস্কার সরঞ্জামাদীসমুহ পরিস্কারের নির্দেশনা দেন। দিলীপ ব্যানার্জী আরও জানান তিনি বাড়িতে যাওয়ার প্রায় ৩০/৪০ মিনিট পরে দর্শনার্থীদের একজনের মাধ্যমে মা’য়ের মাথার মুকুট চুরির খবর পান।
সেবায়েতের দায়িত্বরত রেখা রানী বলেন তিনি মন্দিরের মুল গেটের চাবি খুলে অপরিস্কার জিনিসপত্র পাশের কক্ষে রাখতে যান। দুই/তিন মিনিটের মধ্যে ফিরে অপরাপর জিনিসপত্র নিতে এসে মায়ের মাথার মুকুট চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন।
এদিকে ঘটনার পর স্থানীয়রা ‘কালি মা’য়ের মুকুট চুরি জন্য পুরোহিতকে দায়ি করেছেন। ঈশ্বরীপুর এ সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপন মন্ডল জানান চুরির বিষয়টি তিনটার আগে সবাই জানলেও পুরোহিত প্রায় দুই আড়াই ঘন্টা বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। এমনকি শুরুতে তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখাতে আপত্তি করেন। ঘটনার পরপরই ভিডিও ফুটেজ দেখার সুযোগ মিললে উপস্থিত দর্শনার্থীদের সহায়তায় হয়তবা চোরকে চিহ্নিত করা সহজ ছিল।
এদিকে স্থানীয় একাধিক সুত্র নিশ্চিত করে জানায় মন্দিরের সেবায়েত পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ চলছে। প্রায় এক বছর পূর্বে মন্দিরের দেখভালকে কেন্দ্র করে সেবায়েত চারু বালাকে পিটিয়ে আহত করারও ঘটনা ঘটেছিল। চারু বালাকে মন্দির থেকে বিতাড়িত করতে একটি পক্ষ অনেকদিন ধরে তৎপর ছিল। এছাড়া মন্দিরের অনুকুলে উপার্জিত অর্থ-কড়ির মালিকানা নিয়েও স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে দ্বন্দ চলছে বলেও একাধিক সুত্রের দাবি। চারুবালাকে পুরোহিত দীলীপ বের করে দেয়। এ বিষয়টি নিয়ে কোটে মামলা চলমান রয়েছে।
এসব বিষয়ে শ্যামনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক ফকির তাইজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্মখর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছে রহস্য উম্মোচনে কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর কালিগঞ্জ-শ্যামনগরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগন ঘটনাস্থলে পৌছে তদন্ত শুরু করেছেন বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।