মাদক ব্যবসায়ী পরিবারের কাছে অসহায় রতনপুরের মহিষকুড়
স্টাফ রিপোর্টার:
এলাকা জুড়ে মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছে ইয়াবা,ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য বেচাকেনা। সাথে আছে দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য। কেউ মুখ খুললেই চলে হেনস্থা, মারধর সহ নানা প্রতিবন্ধকতা। হত্যার হুমকি দেয়াসহ হত্যার চেষ্টা ও নানা ক্ষয়ক্ষতি করা হয় প্রতিবাদকারীকে। এই মাদক ব্যবসায়ী পরিবারের কথাই শেষ কথা এই এলাকায়। এমন পরিস্থিতিতে অসহায় কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের মহেষকুড়র গ্রামের সাধারণ মানুষ।
বলছিলাম এলাকার চিহ্নিত প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী ফরজ আলী সবুজ, ফারুক সাহাজি, আশরাফ আলী ও মনি সিন্ডিকেটের কথা। স্থানীয় স‚ত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের মহেষকুড় গ্রামের আফসার আলী সাহাজির মেজো ছেলে ফরজ আলী (সবুজ) ও ফারুক সাহাজিসহ তাদের আপন মামাতো ভাই রেজাব আলীর বড় ছেলে আশরাফ আলী এবং তাদের আপন বড় ভাইয়ের ছেলে মনিরুল ইসলাম মনি বর্তমানে এলাকায় মাদক সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করছে। স‚ত্র আরো জানায়, ফরজ আলী সবুজ সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ন আহŸায়ক পদ-পদবী ব্যবহার করে প্রশাসনের সাথে সক্ষ্যতা গড়ে তোলে। পরিবহন ব্যবসার আড়ালে এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাদক (ফেন্সিডিল) সরবরাহ করেন তিনি। অনুরূপভাবে তার মামাতো ভাই আশরাফ আলী মাছ ব্যবসায়ের আড়ালে চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা নিয়ে এসে এলাকায় সরবরাহ করে। এলাকায় কিছু এজেন্ট নিয়োগ করে মাদক বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে থাকে ফারুক ও মনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের মাদক ব্যবসায়ের হাতেখড়ি হয় তাদের আপন বড় ভাই আইয়ুব আলী সাহাজির মাধ্যমে। তথ্য মতে, রতনপুর ইউনিয়নের মহেশকুড় গ্রামের আফসার আলী সাহাজির বড় ছেলে আইয়ুব আলী সাহাজি প্রায় ২০ বছর আগ থেকে মাদক ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত হয়। ক্ষুদ্র মাদক ব্যবসায়ী থেকে বনে যায় মাদক স¤্রাট । অধিক লাভের আশায় দেশের বিভিন্ন জেলায় মাদকের বড় বড় চালান সরবরাহ করতে থাকেন তিনি। ধীরে ধীরে আইয়ুব আলী সাহাজি তার মাদক ব্যবসাকে বিশাল আকার দিতে আপন ভাই ফরজ আলী সবুজ, ফারুক, ভগ্নিপতি মোক্তার হোসেন, মামাতো ভাই আশরাফ আলী, ছোট ভাইয়ের ভাইরাভাই রহিম সাহাজি, ছেলে মনিসহ আরো অনেককে যুক্ত করে মাদক সিন্ডিকেটের আওতায় আনে। মাদক ব্যবসা পরিচালনাকালে আইয়ুব আলীসহ তার সিন্ডিকেটের প্রায় সকল সদস্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদকসহ আটক হয় ও প্রশাসনের কাছে সিন্ডিকেটটি চিহ্নিত হয়ে যায়। ফারুক পরিবারের আমলনামায়, ২০০৩ সালে ফেনসিডিলসহ ঢাকা সবুজবাগ থানায় আটক হয় আইয়‚ব আলী ও তার এক সহযোগী। দীর্ঘ হাজত বাসের পর, ২০১১ সালে বরগুনার পাথরঘাটা থানায় এক কোটিরও অধিক টাকার অবৈধ মালামাল পাচারকালে আটক হয় (মামলা নং- জিআর ০১/২০১১ (পাথর) এবং বিশেষ ক্ষমতা ১০/২০১৭)। ২০১৭ সালে আইয়‚ব আলী ও রতনপুর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু যুবক নির্যাতন ও সংখ্যালঘু নারী শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে গত ইং ৩-১০-২০১৭ এবং ৫-১০-২০১৭ তারিখে দৈনিক পত্রদ‚ত সহ স্থানীয় কিছু পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংখ্যালঘুরা চেয়ারম্যান আশরাফুল হোসেন খোকন ও আইয়‚ব আলী সহ আরও কয়েকজনের নামে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- সি.আর.পি ২৭৯/১৭ (কালি.), ১০৭/১১৭ এর (গ) ধারা) । ২০১৪ সালে রহিম শাহাজী খুলনা হরিণটানা থানায় ৬০ বোতল ফেনসিডিল সহ আটক হয় (মামলা নং-জিআর-৭/১৪) । আইয়‚ব আলীর ছোট দুলাভাই মোক্তার হোসেন গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে করে ফেনসিডিল পাচারকালে কালিগঞ্জ মন্টু হাজীর তেলবাহী গাড়ি গত ৫ মে ডিবির হাতে আটক হয় (মামলা নং- ৬৭২/১৫)। তাছাড়া ঐ সময় কালিগঞ্জ থানায় আইয়‚ব আলীর ছোট ভাই ফারুক শাহাজীর নামে গরু চুরির মামলাসহ মাদক ব্যবসার অনেক অভিযোগ ছিল। তৎকালীন প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযানের প্রভাবে এবং ক্রসফায়ার এর আশঙ্কায় আইয়ুব, ফারুক, আশরাফ আলী ও রহিম দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়। প্রশাসনের অভিযান স্বাভাবিক হলে তাদের মাদক ব্যবসায়ের হাল ধরে আইয়ুবের মেজো ভাই ফরজ আলী সবুজ। সবুজ পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া থেকে মামাতো ভাই আশরাফ আলীকে ফিরিয়ে এনে ভাতিজা মনিকে সাথে নিয়ে মাদক সিন্ডিকেটটি পুনরায় সচল করে। ফেনসিডিল সরবরাহের জন্য ইন্ডিয়ায় নিযুক্ত করে রেখেছে ছোট ভাইয়ের ভাইরা রহিম সাহাজিকে এবং ইয়াবা সরবরাহের জন্য চট্টগ্রামে নিযুক্ত রেখেছেন মামাতো ভাই আশরাফ আলীকে। এলাকায় এই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন ভাতিজা মনিরুল ইসলাম মনিসহ গ্রাম ভিত্তিক নিযুক্ত কিছু এজেন্ট। মাদকের এই সিন্ডিকেট নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য ফরজ আলী সবুজ আওয়ামীলীগ সরকারের সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিকলীগের রাজনৈতিক পদবী বাগিয়ে নেয়। হয়ে যায় সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহŸায়ক। উক্ত পরিচয়ে এতদিন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্যদের সহায়তায় নির্বিঘে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেএ বিষয়ে জানতে চাইলে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। পরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদক ব্যবসায়ী এই পরিবারের অপকর্মে আরো বিস্তারিত নিয়ে আসছি আগামি পর্বে।