বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ ভারত পাকিস্তানের চেয়ে বেশি

প্রযুক্তি ডেস্ক:

আজকের বিশ্বে, সাশ্রয়ী মূল্যের ডেটা পাওয়া মানুষের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা, বিলাসিতা নয়। একজন মা আর তার বিদেশে থাকা সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, একজন কৃষক টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করছেন, অথবা প্রত্যন্ত গ্রামের একজন শিক্ষার্থী ঢাকার শিশুর মতো একই মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করছেন এই মোবাইল ইন্টানেটের মাধ্যমে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশের মোবাইল ডেটার দাম এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যা পাকিস্তান, ভারত এমনকি ফ্রান্স ও ইতালির মতো উন্নত দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশের রাজস্ব বোর্ড মোবাইল অপারেটরদের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপ করেছে, যা উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণকে নিরুৎসাহিত করে। কারণ অপারেটররা করের উচ্চ হার বহন করতে করতে ক্রমবর্ধমান ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে রীতিমত সংগ্রাম করছে।

এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে, বাংলাদেশ স্বল্পমেয়াদী রাজস্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে। এটি এমন একটি দেশ যেখানে সম্পদের ব্যবধান অনেক বেশি, সেখানে মোবাইল ডেটার উচ্চ মূল্য একটি ডিজিটাল বিভাজন তৈরি করে।

যখন ডেটার খরচ বেশি হয়, তখন আমরা শুধু দাম বাড়াই না, আমরা অগ্রগতি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের প্রতিবন্ধকতা বাড়াই।

উচ্চ হারের করের বোঝা

বাংলাদেশের টেলিকম শিল্প বাংলাদেশের সরকারের কাছে করের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। টেলিকম কোম্পানিগুলি ভ্যাট (১৫ শতাংশ), সম্পূরক শুল্ক (১৫ শতাংশ), এবং গ্রাহক পরিষেবার উপর ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করেছে যা থেকে তাদের রাজস্বের ২৫ শতাংশ অর্জিত হয়। এর উপরে, তারা কর্পোরেট ট্যাক্স, সিম ট্যাক্স, শুল্ক, এবং রাজস্ব ভাগাভাগি (৫.৫ শতাংশ), সামাজিক বাধ্যবাধকতা তহবিল (১ শতাংশ), এবং স্পেকট্রাম অ্যামোর্টাইজেশন খরচের মতো নিয়ন্ত্রক ফি বহন করে। এই ফি তাদের খরচে আরো ১৫ শতাংশ যোগ করে। টাওয়ারকো, এনটিটিএন, আইআইজি এবং অন্যান্যদের পেমেন্ট সহ ইকোসিস্টেম খরচ ১৮ শতাংশ, যেখানে নেটওয়ার্ক অপারেশন, মার্কেটিং, মূলধন ব্যয় এবং আর্থিক খরচ প্রায় ২৬ শতাংশ। এত কর পরিশোধ করার পর অপারেটরদের লাভ খুব কম থাকে, যা পরিষেবার মান উন্নত করা বা দাম কমানো কঠিন করে তোলে।

কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক প্রয়োগের অভাব

বাংলাদেশের কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্কের (সিডিএন)যথাযথ প্রয়োগের অভাব ডেটা খরচ বাড়ায়এবং ইন্টারনেটের গতি ধীর হয়ে যাওয়াতে অবদান রাখে। বিটিআরসি ঘোষণা করেছে যে আইআইজি অপারেটর, এনআইএক্স, এএনএস এবং দেশব্যাপী আইএসপিগুলোকে বিটিআরসির অনুমতি সাপেক্ষে ক্যাশিং সার্ভার সেট আপ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সিডিএনএস ব্যবহারকারীদের কাছাকাছি ডেটা সঞ্চয় করা, আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে, যা ইনটারনেটের গতি বাড়ায় এবং খরচ কমায়।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সিডিএন কে সম্পূর্ণরূপে গৃহীত হতে বাধা দিয়েছে। সিডিএন বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে, ভোক্তাদের জন্য ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে পারে এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা উন্নত করে।

কী পরিবর্তন করা প্রয়োজন

ভারত এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে সস্তা, দ্রুত ডেটা অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশকে ধীরগতিতে ফেলে দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সাশ্রয়ী মূল্যের মোবাইল ডেটার সরবরাহ করতে, বাংলাদেশকে অবশ্যই কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।

করের বোঝা হ্রাস: কম ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এবং নিয়ন্ত্রক ফি কমিয়ে অপারেটরদের সাশ্রয়ী মূল্যের ডেটা প্ল্যান অফার করার অনুমতি দিতে হবে। নেটওয়ার্কের উন্নতি করার জন্য বিটিআরসি এর ইকোসিস্টেম খরচ এবং স্পেকট্রাম ফি কমানো উচিত।

উদ্ভাবনের প্রচার: কম কর অপারেটরদের ফাইভ জি-এর মতো প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করবে, পরিষেবার গুণমান উন্নত করবে এবং দাম কমবে৷

সিডিএন গ্রহণ ত্বরান্বিত করতে হবে: বিটিআরসি-কে অবশ্যই দ্রুত সিডিএন প্রয়োগের অনুমতি দিতে হবে। আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ খরচ কমাতে হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)