সাতক্ষীরা জেলার সাবেক যুবদল নেতাকে সদর থানা ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেপ্তার
রঘুনাথ খাঁ:
সাবেক যুবদল নেতা নাসিম ফারুখ খান মিঠুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাত ১২টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তার বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর তাকে আটক করে। রবিবার বিকেল ৫টার দিকে তাকে সাতক্ষীরা সদর থানা ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
নাসিম ফারুখ খান মিঠু দক্ষিণ পলাশপোলের মৃত আব্দুস সোবহান খানের ছেলে ও সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি।
নাসিম ফারুখ খান মিঠুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সেনা ক্যাম্পের প্রধান লেঃ কর্ণেল আশরাফুল হকের নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর সদস্যরা শনিবার রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে মিঠু খানের বাড়িতে অভিযান চালায়। পরে তাকে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাকে সাতক্ষীরা সদর থানায় সোপর্দ করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক শামীম রেজা জানান, নাসিম ফারুখ খান মিঠুকে জিজ্ঞাবাদে জানা যায় যে, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরবর্তী সন্ধার পরপরই সাতক্ষীরা সদর থানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন পুলিশ পরিদর্শক তুহিনুজ্জামান বাদি হয়ে ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৪৪৭/৪৪৮/৩৩২/৩৫৩/৩০৭/১৮৬/৩৭৯/৩৮০/৪৩৬/৪২৭/৫০৬/৩৪/১০৯/১১৪ ধারা তৎসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩)/১৬(২)/২৫(ডি) ধারায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর ১০০০ থেকে ১২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪২ নং মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মিঠু খানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, মিঠু খান তার ছবি ব্যবহার করে ফেক আইডি খুলে এক ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে ছেলে সাফিন আহম্মেদকে শনিবার বিকেল চারটার দিকে সাতক্ষীরা সদর থানায় পাঠিয়ে ২৫২ নং সাধারণ ডায়েরী করেন।
প্রসঙ্গতঃ সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা গ্রামের রুহুল কুদ্দুস গাজীর ছেলে মামা ভাগ্নে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আজাহারুল ইসলাম গত পহেলা সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা আমলী প্রথম আদালতে এক মামলা দায়ের করেন। মামলায় নাসিম ফারুক খান, তৎকালিন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ও গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত খান বাবলুর রহমান খানের বিরুদ্ধে অপহরণ , চাঁদাবাজি ও পুলিশ হেফাজতে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়। বিচারক নয়ন কুমার বড়াল মামলাটি পুলিশ ব্যূরো ইনভেস্টিগেশনের সাতক্ষীরার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। মামলাটি পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক আক্তারুজ্জামান তদন্ত করছেন। মামলায় মিঠু খানের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ সকাল ১০টার দিকে আজাহারুলকে লোক মারফৎ তার শহরের চেম্বার অব কমার্সের অফিসে ডেকে ১০ কোটি টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ করা হয়। টাকা দিতে অপারহতা প্রকাশ করায় তাকে তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামনের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খান ওই বছরের ২৭ মার্চ বাড়ি থেকে তুলে এনে অফিসে নিয়ে যাওয়ার পর সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার দুটি চেক বইয়ের ১৩০টি পাতা নিয়ে পরবর্তীতে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়। ২৭ মার্চ তাকে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে নগদ ৩২ লাখ টাকা, পাঁচ ভরি সোনার গহনা নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে তার কাছ থেকে ১৩০টি চেকের পাতার মধ্যে ১৬টিতে সাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। বাকী টাকা না দিলে ভিন্নœ ব্যক্তিদের বাদি বানিয়ে আজাহারুলের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দেন নাসিম ফারুখ খান মিঠু।