পর্যটন জমাতে কক্সবাজারে নানা আয়োজন
অনলাইন ডেস্ক:
বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে কার্যত শুরু হয়েছে চলতি বছরের পর্যটন মৌসুম। কিন্তু দেশে গত ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর নানা কারণে পর্যটনেও দুরবস্থা চলছে। তবে, গত দুমাসে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্যটনও জমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে অনেক তারকা হোটেল। রুম ভাড়ায় ৪০-৫০ শতাংশ ছাড়ের পাশাপাশি শরৎ প্যাকেজ ও ইলিশ উৎসবের আয়োজন করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এরপরও আশানুরূপ পর্যটক মিলছে না কক্সবাজারে, এমনটি দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। তবে আগামী সপ্তাহে দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিনদিন বন্ধ থাকায় এ সময়ে পর্যটন স্বরূপে ফিরতে পারে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, অতীত নিয়মে কাগজে-কলমে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে সপ্তাহ পার হলো। ফেলে আসা শরতের এ সময়ে মেঘ-রোদ্দুর খেলা দেখতে ভ্রমণপিয়াসীরা কক্সবাজারে ভিড় করতেন। কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতিতে এখনো ঘরবন্দি প্রকৃতিপ্রেমীরা। তাই এক প্রকার নিষ্প্রাণ হয়ে আছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। তবে, অনেক হোটেল নানা আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে পর্যটক আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের কক্সবাজার অফিস প্রধান ইমতিয়াজ সোমেল জানান, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসা মন্দ যাচ্ছে। এরপরও মৌসুম শুরুর পর নিষ্প্রাণ পর্যটনে সতেজতা ফেরাতে আমরা সাশ্রয়ী দামে দুই রাতের শরৎ প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছি। যারা এ প্যাকেজে হোটেলে আসবেন তারা নিয়মিত সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে একটি ডিনার ও লাঞ্চ ফ্রি পাবেন। প্যাকেজ ছাড়া আসা অতিথিরা ৪০-৫০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন। পর্যটকদের ভ্রমণ আরও জমিয়ে তুলতে ৩ অক্টোবর থেকে তিনদিনের ইলিশ উৎসবের আয়োজন করেছে আমাদের হোটেল। ভোজন রসিকরা চাইলে স্বল্পমূল্যে ৮ ক্যাটাগরির রান্নার স্বাদ নিতে পারেন।
সূত্রমতে, সৈকত তীরে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ রয়েছে চার শতাধিক। এসব হোটেলে দৈনিক প্রায় সোয়া লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এবারের পর্যটন মৌসুমটা চাঙ্গা হয়ে উঠবে এমনটি বিশ্বাস হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতি নেতাদের।
হোটেল সি-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, এখন ন্যূনতম ভাড়াতে রাত্রিযাপনের সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা। এরপরও উল্লেখ করার মতো অতিথি নেই। সবখানেই একই অবস্থা। অতীত পর্যালোচনা করে বলা যায়, দুর্গাপূজার ছুটিতে পর্যটকের ভিড় বাড়বে কক্সবাজারে। এসময় টানা ছুটি কাজে লাগাবেন ভ্রমণপ্রেমীরা।
তারকা হোটেল লং বিচের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজার এ.এম.ডি শহিদুল আলীম বলেন, গত ছয় মাস ধরে আশানুরূপ ব্যবসা নেই। এখন শুক্র-শনি ও বন্ধের দিনে ৪০ শতাংশ আর অন্য দিনগুলোতে ৫০ শতাংশ ছাড়ে রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। কোনোমতে প্রতিষ্ঠান চালু রাখা যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষ লাভের আশা করতে পারছেন না।
হোটেল সায়মনেও একই অবস্থা উল্লেখ করে হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান নুর বলেন, স্বাভাবিক নিয়মেই সব চলছে। কোনো প্যাকেজ নেই।
দেখা গেছে, প্রতিবছরই ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের জায়গা কক্সবাজারের নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত। মৌসুমের পর্যটক আগমন বাড়বে এটা মাথায় নিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সাজিয়ে আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। অনেকে পরিবর্তন করছে পুরোনো জিনিসপত্র। পর্যটক যাই আসুক সব পর্যটন স্পটগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত ট্যুরিস্ট পুলিশ। নিরাপত্তা জোরদারে স্পটে স্পটে লাগানো হচ্ছে সর্তকতামূলক সংকেত ও সাইনবোর্ড।
জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ সব পর্যটন স্পটগুলো অতিথি বরণে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন জানান, পর্যটক হয়রানি রোধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টাঙানো রয়েছে কি না সবসময় তদারকি করা হচ্ছে। সৈকতের লাবনী-সুগন্ধা-কলাতলীসহ একাধিক পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্র। যে কোনো অভিযোগ এখানে করতে পারবেন পর্যটকরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তক পুলিশ। পর্যটকরা যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন সেজন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশে পুরুষ-নারী পুলিশ মাঠে রয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে থাকবে টহল ও সাদা পোশাকের পুলিশ। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার পুরো সৈকত পুলিশের নজরদারির আওতায় আছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। পর্যটকদের সেবাতেই এ শিল্পের প্রসার। মৌসুমে কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে জেলা প্রশাসন।