তেলাপিয়া মাছ কি সত্যিই বিষাক্ত, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
স্বাস্থ্য ডেস্ক:
তেলাপিয়া মাছ খাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এক নারী হাত-পা হারিয়েছেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। তখন থেকেই তেলাপিয়া মাছ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাজার থেকে তেলাপিয়া মাছ কিনে সেটিকে আধা সেদ্ধ করে এক বিশেষ খাদ্য উপকরণ বানিয়েছিলেন লরা বাজারাস (৪০)। কিন্তু সেই খাবার খেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। একে একে তার সব অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে থাকে। এক মাস হাসপাতালে থাকার পর তার অস্ত্রোপচার করা হয়। অবশ্য ওই নারীর অসুস্থতার কারণ তেলাপিয়া মাছ নয় বলে জানানো হয়েছে। ওই মাছে থাকা একটি প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া আসলে দায়ী।
তারপরও প্রশ্ন উঠছে, আসলেই কি তেলাপিয়া মাছ বিষাক্ত? মূলত যেকোনো মাছ বা সি-ফুড থেকে মারাত্মক খাদ্য বিষক্রিয়া হতে পারে। পানিতে ভিব্রিও ভালনিফিকস ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা মানুষের শরীরে সংক্রমিত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষ এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হন।
এ ব্যাকটেরিয়া ঠান্ডা পানিতে বংশ বিস্তার করতে পারে না। তবে যে পানিতে এই ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেখানে থাকা মাছ ও সব জলজ প্রাণীর শরীরে থাকে এটি। কিন্তু জলজ প্রাণীর জন্য ব্যাকটেরিয়াটি ক্ষতিকর না হলেও মানবদেহের জন্য এটি ক্ষতিকর।
ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম আর করিম রেজা এ ব্যাপারে কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। এবার তাহলে ব্যাকটেরিয়াটি কীভাবে ছড়ায়, এর লক্ষণ এবং প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
যেভাবে ছড়ায়
কাঁচা, অর্ধ-সিদ্ধ বা কম রান্না করা মাছ বা সি-ফুড খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এই ব্যাকটেরিয়া। তবে শেলফিস ও ওয়েস্টার থেকে বেশি সংক্রমিত হয় এটি। এছাড়া পানি থেকে ত্বকের ক্ষতের মাধ্যমেও সরাসরি শরীরে প্রবেশ করে থাকে।
লক্ষণ
এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে খাবার খাওয়ার পর বমি, পাতলা পায়খানা, প্রচণ্ড পেটব্যথা ও জ্বর হয়। এসব মূলত খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ। তবে ত্বকে সংক্রমিত হলে আক্রান্ত জায়গা গরম অনুভূতি, লালচে হয়ে ব্যথা হওয়া ও ফুলে কালচে হয়ে যেতে পারে। আর সংক্রমণ যদি রক্তে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে মৃত্যুর শঙ্কা থাকে।
সাধারণত যাদের ইমিউনিটি কম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও লিভারজনিত রোগ রয়েছে, তাদের ঝুঁকির পরিমাণ বেশি থাকে। এ ছাড়া রক্তনালীতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের থেকে কমে যাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা ও গ্যাংরিন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন রোগীদের মৃত্যু হয় সেপটিক শকে।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মাছ, সি-ফুড কিংবা অর্ধ-সিদ্ধ বা কম রান্না করা খাবার খাওয়া যাবে না। বিরত থাকাই শ্রেয়। পানিতে নামলে ত্বকের কোথাও কালচে, ফুলে যাওয়া কিংবা ব্যথা হলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর ত্বকে যদি ক্ষত থাকে তাহলে পুকুর, নদী বা সমুদ্রে নামা যাবে না। কারও মাঝে যদি মাছ বা সি-ফুড খাওয়ার পর এসবের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তাৎক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অবশ্যই পরামর্শ নিতে হবে।