কপোতাক্ষ বেড়িবাঁধ ভেঙে তালা’র খেশরা ইউনিয়ন প্লাবিত; পানি বন্দি ৪০ হাজার মানুষ
তালা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙে ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট, মাছের ঘের, ধানের ক্ষেত, সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। এলাকাজুড়ে পানি থাকায় স্যানেটারি ব্যবস্থায় পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এছাড়াও বেড়ে গেছে চর্ম, ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত নানান রোগ।
বন্যা ও জলাবদ্ধতা অসহনীয় জনদুর্ভোগ ও মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে।সবই পানিতে একাকার হয়ে আছে ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, খাল-বিল, লোকালয়। শোয়ার ঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘরে পানি।উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামও বন্যা কবলিত।এই এলাকায় লিলি খাতুন ও আশারাফ নামে দুইজন পানিতে ডুবেও মারা গেছেন।এসব এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে না থাকায় গ্রামের দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তবে জীবন বাঁচানোর মতো খাওয়া-দাওয়াটুকুও তাদের নেই। বন্যা কবলিত মানুষের কাছে এখনও ত্রাণ পৌঁছায়নি, তাছাড়া গ্রামের প্রায় সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সহযোগিতা করার মতোও কেউ নেই। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে তালার খেশরা ইউনিয়নের বানভাসী মানুষ।
এমতাবস্থায় বন্যার্তদের দুর্দশা লাঘবে এগিয়ে এসেছেন শাহপুর গ্রামেরই ছেলে খায়রুল ইসলাম খাঁন। তিনি প্রতিনিয়ত ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন।খায়রুল অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মীরজাহান আলী খাঁনের ছেলে। তিনি ব্যাংকের ছোট একটি পদে চাকুরি করে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লালটু জানান, খেশরা ইউনিয়নে মোট ২২টি গ্রাম আছে। তার মধ্যে ৯ টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আর ২টি গ্রাম আধা ক্ষতি এবং বাকী ১১টি গ্রাম আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ৯টি গ্রামের মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আবস্থান করছে। তবে এদের খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন বলেন, উপজেলাব্যাপী কৃষি ফসলের ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের কাজ এখনও চলমান রয়েছ।তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আমন, ঘেরের ফল ও অন্যান্য ২ হাজার ৫শ ৫৩ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমান দাড়িয়েছে ২৭ কোটি ৬ লাখ টাকার মত। তবে এখনি যদি পানি কমে যায় তাহলে ক্ষতির পরিমান স্থিতিশীল থাকবে। আর যদি পানি কমতে বিলম্ব হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে তিনি ধারনা করছেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধা খাঁ বাবলি বলেন, উপজেলায় ১০২৭ টি মাছের ঘের সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আয়তন ৯০৫ হেক্টর। তবে এর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা হবে বলে এই মৎস্য কর্মকর্তা জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোঃ রাসেল জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নিম্মাঞ্চল ভারী বর্ষন ও বাঁধভেঙ্গে তলিয়ে গেছে। এতে তালাবাসীর একটি অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমরা নদী বা খাল থেকে অবৈধ নেটপাটা অপসারণ করেছি। আমাদের উপজেলার ২ টি পয়েন্ট দিয়ে পানি সরবরাহ হয়। একটি হল শালিখা, অন্যটি আশাশুনি।