পানিতে ভাসছে তালরা খেশরা ইউনিয়ন ১৮ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি

মতিয়ার রহমান মধু: পানিতে ভাসছে কপোতাক্ষ নদী দ্বারা বেষ্টিত সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়ন। ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে কপোতাক্ষ নদের তীর ঘেঁসে গড়ে উঠা ইউনিয়নটির ২১টি গ্রামের মধ্যে ১৮টি গ্রামই তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নটির উত্তরে জালালপুর, পূর্বে-কপোতাক্ষ, দক্ষিণে- আশাশুনি উপজেলা এবং পশ্চিমে সাতক্ষীরা সদর অবস্থিত। গত ১৫ দিন ধরে ইউনিয়নটির ৪০ হাজার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মাদিয়ার খাল, শালিকা খাল, ছোট চর এবং বালিয়ার খাল পলিপড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া অবৈধ দখলদারা এসব খালে নেট-পাটা বিছিয়ে মাছ চাষ করায় পানি সরবরাহ সিমীত হয়ে আসায় অল্প বৃষ্টি পাতেই এলাকাটি পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ৩৫ হাজার ১৭০.৮৩ বিঘা জমি দ্বারা বেষ্টিতি ইউনিয়নটির ২৫ হাজার বিঘা জমি এখন পানির তলে। কয়েকশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসা সমূহে। ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সেবা। দেখা দিয়েছে রোগব্যাধি। দ্বিপের উপর প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়নটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে এসেছে স্থবিরতা। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন ও খেলাধুলায় ইউনিয়নটির বিশেষ সূনাম থাকলেও পানি বদ্ধতায় ইউনিয়নটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। কালের স্বাক্ষী ৫০০ বিগার পাখিমারা বিল, ঐতিহ্য বাহী বটগাছ, বাবলা গাছের সুসজ্জিত র্দীর্ঘ ৫ কিঃ মিঃ রাস্তা, শাহাজাতপুর গ্রামের মোড়ল পাড়ায় অবস্থিতিত কয়েকশ বছরের একটি পূরনো মসজিদ, শালিখা গ্রামের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ১২ টি গেট সম্বলিত ১২ ফোকড় ব্রিজ সবই যেন তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। প্রত্যন্ত এ অঞ্চলটি ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে নগদ টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। এসময় থানা জামায়াতের আমীর মাওলানা মুফিজুল ইসলাম, ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মাওলানা ওয়াজেদ আলীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীতে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ ফেরানো, সাতক্ষীরা পৌরসভাকে পুরোপুরি ড্রেনেজ নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রাণসায়ের খালের দুই মুখ উন্মুক্ত করে স্বাভাবিক প্রবাহ ফেরানো, আন্তঃনদী সংযোগ বিশেষ করে ইছামতি, মরিচ্চাপ, খোলপেটুয়া, বেতনা, শালিখা ও কপোতাক্ষকে খননের আওতায় এনে পানিপ্রবাহ সচল করণ, নদীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলো পুনঃখনন করে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি, অকেজো হয়ে পড়ে থাকা ¯øুইসগেটগুলো সংস্কারকরণ, পৌর এলাকার মধ্যে মৎস্য ঘের নিষিদ্ধকরণ, নদীগুলো খননের সঙ্গে সঙ্গে সংলগ্ন বেড়িবাঁধগুলোও টেকসই করে বেড়িবাঁধ বাঙন রোধ, বেড়িবাঁধে বনায়নের উদ্যোগ গ্রহণ, নদী ও খালেরপ্রবাহ বিঘিœত হয় এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করা, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগেই পানি নিষ্কাশনের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিরুপণের মাধ্যমে জলবায়ু ফান্ডের অর্থ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে পুনর্বাসনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবী ভুক্ত ভোগীদের।
খেশরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ কামরুল ইসলাম (লাল্টু) জানান, তার ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এলাকার বেশিরভাগ ঘের ও ফসলি জমি ভেসে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দির এমনকি মানুষের বাড়ি-ঘরে পানিতে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়ন যুব বিভাগ সভাপতি শিমুল হোসেন ও সেক্রেটারী আলি হুসাইন জানান, ইউনিয়নের মৎস্য ঘের, আমন ধান এর আবাদ, কাঁচা সবজি, হলুদ ক্ষেত, ঝাল বেগুনসহ বিল অঞ্চল বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কৃষকদের কৃষি ফসল ও মৎস্যঘের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। বহু মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। মানুষের স্বাবাভিক জীবন যাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোঃ রাসেল জানান, প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে পানি সরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিজে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন খাস খাল দখলমুক্ত করে পানি নামানোর ব্যবস্থা করছেন। এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সকল ইউপি ও সরকারি দফতরে তথ্য চাওয়া হয়েছে। জেলাপ্রশাসকের কাছে দ্রæত সমাধানের জন্য আর্থিক চাহিদা দেয়া হয়েছে। পানি দ্রæত নামানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করছি। তিনি আরো জানান, পার্শ্ববর্তী জেলা যশোর থেকে আমাদের উপজেলার পানি আসার কারণে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মফিজুল ইসলাম জানান, অপরিকল্পিত নদী খনন, সংযোগ খাল উন্মুক্ত না থাকা এই উপজেলায় জলাবদ্ধতার মূল কারণ। এখনই যদি পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে খেশরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেকাংশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, শুধু খেরশা ইউনিয়নটিতে কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধ্যা খা বাবলি জানান, উপজেলায় ৫২০টি মাছের ঘের সম্পূর্ণরুপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৮২৭ দশমিক ৪৫ টন মাছ ভেসে গেছে। মাও ওয়াজেদ আলী জানান, ভয়াবহ পানিবদ্ধতায় এলাকাজুড়ে পানি থাকায় স্যানেটারি ব্যবস্থায় পড়েছে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। সুপ্রিয় পানির অভাবের পাশাপাশি, চর্ম রোগ, পানিবাহিত রোগ, ডায়রিয়া জনিত রোগের আক্রান্ত বেড়ে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি আমন মৌসুমে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাঁচ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)