দেবহাটায় সাংবাদিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে গড়ে তুলেছে বিএনপি অফিস!
স্টাফ রিপোর্টার:
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা প্রেসক্লাবের বারবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজ ভাংচুর, লুটপাট ও জবরদখলের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও জবরদখলকারী যুবদল-ছাত্রদল নেতা ও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা চিহ্নিত অস্ত্রধারী দুষ্কৃতিকারীদের কবল থেকে অদ্যবধি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির দখল ফিরে পায়নি ভুক্তভোগী সাংবাদিক পরিবার।
গত ৫ আগষ্ট দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগের পরপরই দেশব্যাপী সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতির সুযোগে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে নানা অপকর্মের কারণে পত্রপত্রিকায় সমালোচিত এক আওয়ামীপন্থী ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে দেবহাটা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কামরুজ্জামান কামরুল (৪২) ও উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ইমরান ফরহাদ (৩৫)-এর নেতৃত্বে অন্তত ৩০/৪০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী সখিপুর বাজারস্থ সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওনের আইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজে ব্যপক ভাংচুর, লুটপাট শেষে তালা লাগিয়ে জবরদখল করে নেয় হয়। সেসময় যুবদল নেতা কামরুজ্জামান কামরুল ও ছাত্রদল নেতা ইমরান ফরহাদের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওই আইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে এয়ারকান্ডিশনার, থাইগøাস ডোর, ৪ টি ডেক্সটপ ও ২টি ল্যাপটপ, ২টি ভিডিও ক্যামেরা, ডিএসএলআর ক্যামেরা, স্মার্ট এলইডি টিভি, ইন্টারনেট সরঞ্জামাদি, বেশ কয়েকটি টেবিল ও চেয়ার, একাধিক পোর্টেবল হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, বৈদ্যুতিক সংযোগের মিটার ভাংচুর ও লুটপাট করে নুন্যতম ৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা সংবাদকর্মী শাওনের ব্যক্তিগত পাসপোর্ট, এনআইডি কার্ড, ব্যাংকের চেকবই সহ অন্যান্য মুল্যবান কাগজপত্র অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। এনিয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে অভিযুক্ত দুই যুবদল ও ছাত্রদল নেতার ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসীরা ওই সাংবাদিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে তড়িঘড়ি করে শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি টাঙিয়ে সেটিকে স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ের রূপ দিয়ে গত দেড় মাস সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জবরদখলে রেখেছেন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন বলেন, ‘বিগত সময়ে নানা অপকর্মের কারনে মিডিয়ায় বিতর্কিত আওয়ামীপন্থী এক ইউপি চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে মাদক চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কামরুজ্জামান কামরুল এবং চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অন্যতম নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদলের আহবায়ক ইমরান ফরহাদকে নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের কারণে তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে তারা আমার ক্ষতিসাধন, এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও দিয়ে আসছিলেন। তবে সেসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় তারা আমার ক্ষতিসাধণের সুযোগ পাননি। গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করার পরপরই সারাদেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে ভেঙে পড়লে সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাৎক্ষনিক ওই আওয়ামীপন্থী ইউপি চেয়ারম্যানের ইন্ধনে যুবদল নেতা কামরুজ্জামান কামরুল ও ছাত্রদল নেতা ইমরান ফরহাদ ৩০/৪০ জনের একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারীকে নিয়ে মিছিল ও ¯েøাগান সহকারে গিয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যপক ভাংচুর, লুটপাট শেষে তালা লাগিয়ে প্রাথমিকভাবে জবরদখলে করেন। এঘটনার দু’দিন পর আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির দখল আমাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য এক আত্মীয়ের মাধ্যমে আমি তাদেরকে প্রস্তাব দিলে ওই যুবদল নেতা কমরুজ্জামান কামরুল ও ছাত্রদল নেতা ইমরান ফরহাদ আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ফেরত দিতে ওই আত্মীয়ের মাধ্যমে আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে আমি আইনি সহায়তা পেতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর সহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তারা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের ছবি টাঙিয়ে তা পুরোপুরি জবরদখল করে নেয় এবং অদ্যবধি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি জবরদখলে রেখে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশ ও হয়রানিমুলোক মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’
জবরদখলকারীদের মুর্হুমুহু হুমকিতে বর্তমানে বাড়ি ছাড়া উল্লেখ করে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন আরও বলেন, একজন সংবাদকর্মী হওয়া স্বত্তে¡ও জবরদখলকারীদের হুমকিতে প্রাণভয়ে গত দেড় মাস স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এলাকা ছেড়ে বাইরে অবস্থান করছি। তবুও আমি ও আমার পরিবার নিরাপদ নই। যাতে আমি ও আমার পরিবার এলাকায় না ফিরতে পারি সেজন্য তারা প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি ধামকি দেয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে উষ্কানীমুলোক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ভাংচুর ও লুটপাট করে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন, এমনকি আমার পরিবারের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমিটুকু জবরদখল করেও তারা এখনো ক্ষ্যান্ত হয়নি। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-ও দুঃচিন্তা ও আতঙ্কে একাকি দিনযাপন করছেন। আমি দেবহাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের চেষ্টা করলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমার অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এটি কোনভাবেই একটি স্বাধীন রাস্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা শাসন ব্যবস্থা হতে পারেনা। জবরদখলে নিয়ে বিএনপি’র অফিস বানানো সখিপুর বাজারস্থ আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজের জমিটুকু পেরীফেরীভুক্ত সরকারি সম্পত্তি, যা আমার নিজনামে ডিসিআরকৃত। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ২৪৯/২০২২-২৩ নং চান্দিনা কেসের মাধ্যমে ডিসিআর নিয়ে আমি সেখানে আইটি ব্যবসা পরিচালনা করছিলাম। সরকারি বিধি মোতাবেক বিগত বাংলা ১৪২১ সাল থেকে চলতি বাংলা ১৪৩১ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ডিসিআরকৃত জমির যাবতীয় সরকারি রাজস্ব উপজেলা ভুমি অফিসের মাধ্যমে পরিশোধ করেছি এবং আমার ডিসিআরও নবায়ন রয়েছে, তবুও ক্ষমতার দাপটে তারা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি এখনও জবরদখলে রেখেছেন।’
সংবাদকর্মী মাহমুদুল হাসান শাওন জবরদখলকৃত তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দখল ফিরে পেতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একইসাথে ভাংচুর ও লুটপাটে জড়িত যুবদল ও ছাত্রদল নেতাসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএনপি ও যুবদল-ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শাওনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, লুটপাট ও জবরদখলের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু জবরদখলকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমিটি সরকারি পেরিফেরীভুক্ত সম্পত্তি এবং সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন বৈধভাবে ডিসিআর নিয়ে সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। সেজন্য তদন্তপূর্বক ডিসিআর গ্রহীতার অনুকূলে দখল বুঝিয়ে দেয়া সহ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এসিল্যান্ড ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও সে নির্দেশনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওনের জবরদখল হওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে গিয়ে তদন্তকালে তা ভাংচুর, লুটপাট ও জবরদখলের সত্যতাও পেয়েছেন সখিপুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত ইউনিয়ন সহকারি (ভূমি) কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার। শিগগিরই তিনি বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধত্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
সাংবাদিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, লুটপাট ও জবরদখলের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা ইমরান ফরহাদ মুঠোফোনে বলেন, ৫ আগষ্ট কে বা কারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ভাংচুর করে তা আমার জানা নেই। আমাদের স্থানীয় কোন পার্টি অফিস না থাকায় আমরা ভাংচুরকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে দলের সিনিয়র নেতাদের ছবি টাঙিয়ে অফিস করে বসেছি।