সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষার্থীরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত: দুই দিনের ছুটি ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিনিধি :
পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষার্থীরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পক্ষে বিপক্ষে আন্দোলন করেছে ক্লাস না করে। রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের মারধরের গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে উসকানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিক্ষোভ করছে তাদের দাবী শিক্ষক কবির হোসেন তাদের মারধর করেছে। অনেকে অভিযোগ করছে, দুই তলা থেকে কোন এক শিক্ষক শিক্ষার্থীকে নিচে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী কাকে ফেলে দিয়েছে সঠিকভাবে নাম বলতে পারিনি। অপার দিকে শিক্ষার্থীর অপরাংশ দাবি করেছে প্রধান শিক্ষক গাজী আব্দুল মালেক সুপরিকল্পিতভাবে সহকারী শিক্ষক কবির হোসেনের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে মারধরের অভিযোগ এনে কবির স্যারকে নির্যাতন করেছে।
নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিরিনা, রুবাইয়া, তাসফিয়া, মাহিয়া, ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছারিয়া, সানজিদা ও অন্তরা এ প্রতিবেদককে জানান, কিছু শিক্ষার্থীদের উস্কানী দিয়ে গাজী আব্দুল মালেক স্যার কিছু শিক্ষার্থী দিয়ে আমাদের মারধর করেছে। আমরা ক্লাস বর্জন করতে রাজি না হওয়ায় আমাদের মারধর করে উল্টো কবির স্যারকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে তাকে জোর করে পদত্যাগের জন্য ষড়যন্ত্র করছে। আমরা এ দাবী মানি না। এর আগে আফিয়া ও ইরানীসহ শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রধান শিক্ষক গাজী আব্দুল মালেককে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার দাবীতে সড়ক ও ক্লাস বর্জন করে এবং বলতে থাকে কবির স্যার আমাদের শিক্ষার্থীদের মারধর করে ও অপর সহকারী শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয়তলা হতে নিচে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু সহকারী শিক্ষক কবীর হোসেন বলেন সকালে ঘন্টা দেওয়ার পরে কিছু শিক্ষার্থীরা হৈচৈ করতে থাকে ও বলতে থাকে গাজী আব্দুল মালেক স্যারকে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে ও সহকারী শিক্ষক কবীর হোসেনকে পদত্যাগ করাতে হবে। এক পর্যায়ে সহকারী প্রধান শিক্ষককের কথা মতো আমি অফিস রুমে বসে থাকি। কিন্তু গাজী আব্দুল মালেক স্যার পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর করার গুজব ছড়িয়ে মালেক স্যারের অনুগত কিছু অভিভাবককে দিয়ে আমাকে মারধর করে। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে মারার যে অভিযোগ করেছে সঠিক না। আমি অফিস থেকে বের হয়নি। কোন শিক্ষার্থীর সামনে আমার ফেসটুফেস কথা হয়নি। বিদ্যালয়ে ৬০ টির অধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে যার ভিডিও দেখলে আমি কোন শিক্ষার্থীকে মেরেছি, কথা বলেছে কিনা প্রমান পাবেন। আপনাদের কাছে একটায় অনুরোধ বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ভিডিও যেন ডিলিট না হয়। মূলত সমস্যা হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য ও ভূয়া সার্টিফিকেটসহ শিক্ষাবোর্ডে পাঠাই। সেই কারনে তদন্ত প্রমানিত হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কারন হিসেবে আজকে শিক্ষার্থীদের একাংশ ও তার অনুগত কিছু অভিভাবকদের দিয়ে গুজব ছড়িয়ে আমাকে মারধর করেছে। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হালিমা জানান, ঘন্টা দেওয়ার পর কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে নিচে আসার সময় সহকারী শিক্ষক কবির হোসেন অফিস কক্ষে ছিলো। কিন্তু কিছু অভিভাবক এসে কবির স্যারকে মারধর করে ও পদত্যাগ করতে চাপ দিতে থাকে। কবির স্যার মূলত কোন জায়গায় যায়নি অথচ শিক্ষার্থীদের মারধরের গুজব ছড়িয়ে কবির স্যারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
বিদ্যালয় আসা অভিভাবকরা জানান মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলা হয়েছে আপনার মেয়েকে মারধর করেছে কবির স্যার। এসে দেখি এটা সঠিক না। গাজী আব্দুল হান্নান নামে এক অভিভাবক বলেন আমার মেয়ে বলছে মারার বিষয় সঠিক না।
এ বিষয়ে প্রধান গাজী আব্দুল মালেক বলেন, এডিসি স্যার আমাদের সভাপতি, তিনি আমাকে ছুটি নিতে বলায় আমি তিন দিনের ছুটিতে ছিলাম কিন্তু সকাল ১০ টার পরে ফোন যায় বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করছে। এর ঘন্টা পরে এডিসি স্যার আমাকে বিদ্যালয় যেতে বলায় আমি এসেছি। সহকারী শিক্ষক কবির হোসেন ও তার অনুসারী শিক্ষকরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমি ছুটি থাকায় চুক্তিভিত্তিক ২০ জনের অধিক শিক্ষকরা বিদ্যালয় আসেনি। তাই শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে রাজি না হওয়ায় কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গরম দিলে পরিস্থিতি খারাপ হয়। একপর্যায়ে দুপুরের পরে শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়ার বিষয়ে বলার সময় একজন শিক্ষার্থী স্যারের সমালোচনা করলে প্রধান শিক্ষক গাজী আব্দুল মালেক বলেন ওকে ধরে নিয়ে আয়। এখন এই শিক্ষার্থী তার পাশে গেলে প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীর রোল নাম্বার, শাখা ও শ্রেণী লিখে রাখতে বলে। পরে দুই গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে নবারুণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দুদিনের ছুটি ঘোষণা করে প্রধান শিক্ষক গাজী আব্দুল মালেক।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)