সাতক্ষীরার থানাঘাটা খন্দকারপাড়ার মুর্তিমান আতঙ্ক ইলিয়াছ ধর্ষণের ঘটনা চাপা দিতে চুমকিকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা!
রঘুনাথ খাঁ: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার থানাঘাটা খন্দকারপাড়ার ইকরামুল হকের ছেলে ইলিয়াছ ছিল মুর্তিমান আতঙ্ক। যে কোন সময় সে কারো উপর হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় মার খেয়েও কেউ তার প্রতিবাদ করতে পারতো না।এদিকে শুক্রবার রাতে রাস্তা থেকে ধরে বাড়িতে নিয়ে চুমকিকে ধর্ষণের ঘটনা চাপা দিতে ইলিয়াছ পরিকল্পিতভাবে ঠাÐা মাথায় চুমকিকে খুন করেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরেজমিনে সোমবার সকালে থানাঘাটা খন্দকার পাড়ায় যেয়ে দেখা গেছে এলাকায় চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিহতের বোন সকিনা খাতুনের দায়েরকৃত মামলায় ইলিয়াছ, তার মা মনোয়ারা, বোন, নার্গিস, ভগ্নিপতি খন্দকার আবু সালেমসহ ছয়জন জেল হাজতে গেলেও খন্দকার আবু সালেম এর ছেলে ও মেয়েসহ স্বজনরা পাড়ার বিভিন্ন স্থানে আাঁড়ি পেতে কারা আসছে, কারা যাচ্ছে তাদের সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করছে। কারাগারে থাকলেও ইলিয়াছ জামিনে মুক্তি পেয়ে বাঘ হয়ে উঠতে পারে। ঘটতে পারে আরো কোন হত্যা। মামলার বাদি ও সাক্ষীরা হতে পারে তার অন্যতম শিকার। ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে চাননি। দুলা ভাই তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের পিওন খন্দকার পাড়ার খন্দকার আবু সালেম প্রকাশ্যে ইলিয়াছকে মদত দেওয়ায় সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বাসায় গেলে কথা হয় পা ভ্যান চালক আবুল কালামের সাথে। পাশে ছিলেন তার পাগলপ্রায় স্ত্রী। তার প্রতিবন্ধি মেয়ে রোজিনা খাতুন চুমকিকে কিভাবে হুমকি দিতো ইলিয়াছ তার বর্ণনা করে বলেন, জামিনে মুক্তি পেয়ে ইলিয়াছ তাদেরকে মেরে ফেলতে পারে। এখনই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ আসছে। মামলার বাদি সকিনা খাতুন বলেন, তার বোন শনিবার সকালে তার মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে মোবাইলে গান বাজাতে বাজাতে যাচ্ছিল এমন খবর বেশ কয়েকটি পত্রিকায় এসেছে। আসালে ওইদিন তার(সকিনা) বোন ফোনটি বাড়িতে রেখে যায় তারই মেয়ে ফতেমার জন্য খাবার ও বেলুন কিনতে। বেলুন ফোলানোর একপর্যায়ে সটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরপরই ইলিয়াছ তার চুমকির মাথায় উপর্যুপরি কয়েকটি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর রক্তাক্ত হয় রাস্তা। আলামত মুছে ফেলতে ইলিয়াছের মা মনোয়ারা পানি দিয়ে রক্ত ধূয়ে ফেলতে থাকেন। ইলিয়াছকে আটকের পর তার ভাগ্নে শাওনের মিলবাজারের কয়েকজন বন্ধু অস্ত্রসহ চারটি মটর সাইকেলে ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসে। তবে সেখানে ইলিয়াছের উপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। শনিবার সন্ধ্যায় মনোয়ারার গোয়োলে থাকা চারটি গরু পরানদহা এলাকার তাদের এক আত্মীয় নিয়ে গেছে।
ইলিয়াছ ইতিপূর্বে থানাঘাটার ইসরাইল সরদারের ছেলে বুলু, শওকতের ছেলে হেলালকে মারপিট করেছে। তিন মাস আগে আলাউদ্দিনের ছেলে শামীম ও সেলিম ড্রাইভারের ছেলে নাজমুলকে রাস্তায় ফেলে পেটায়। ইলিয়াছের বিরুদ্ধে এরকম হামলা ও তাড়িয়ে ধরার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটি। তা ছাড়া নেশার টাকা যোগাড় করতে ইলিয়াছ তার মায়ের গরু চুরি করে বিক্রি করায় তার মায়েরই দায়েরকৃত মামলায় জেলে ছিল সে। আবার সেই মা ও বোন তাকে জামিনে মুক্ত করলেও এখনো মামলা চলমান।
তবে শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে মাধব স্বর্ণকারের বাড়ির পাশে তিন রাস্তার মোড়ে মাহফিল শুনতে যাওয়ার সময় ইলিয়াছ জোরপূর্বক চুমকিকে ধরে তাদের বাড়ির মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে জানালেন স্থানীয় দুই ব্যক্তি। বিষয়টি জানাজানি হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এমন আশঙ্কায় চুমকিকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। তবে সাতক্ষীরা সদর হাপসাতালের একজন চিকিৎসক চুমকিকে ধর্ষণ করা হয়েছে মর্মে জানালেও প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত তার নাম ব্যবহার করা যাবে না বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক সোহরাব হোসেন জানান, তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।