সাবেক সাংসদ ডাঃ রুহুল হক ও মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষসহ ৬৩ জনের নামে সাতক্ষীরা আদালতে মামলা
রঘুনাথ খাঁঃ রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ কুলিয়া গ্রামের ও উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ডাঃ আ,ফ,ম রুহুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষ, সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সাতক্ষীরা র্যাব ক্যাম্পের মেজর আহম্মেদ হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রেজাউল হক ও দেবহাটা বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার গোলজারসহ ৬৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার নিহত আবুল কালামের ভাই শফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক চাঁদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন ২০১৩ এর ৫(৫) ধারা অনুযায়ী ডিআইজি খুলনাকে একই আইনের ২(৩), ২(৪),২(৫), ২(৭), ৭(১), ৮(১), ১৩(১), ১৪(১) ধারা মতে উল্লেখিত আইনে বর্ণিত ধারার আলোকে তিনি নিজে অথবা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নীচে না এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত করে আগামি ২৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অপর আসামীদের মধ্যে রয়েছেন দেবহাটা থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারক চন্দ্র বিশ্বাস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান, কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হক, পারুলিয়ার মনিরুজ্জামান মনি, সখীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, দেবহাটার নজরুল ইসলাম।
মামলার বিবরনে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ কুৃলিয়া গ্রামের আকবর আলীর ছেলে ও দেবহাটা উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলো। কুলিয়া ইউপি’র তৎকালিন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুল হক তাকে নির্বাচনী প্রতিপক্ষ ভাবতেন। এ কারণে আসামী আসাদুল হক সাংসদ ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক ও তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের সঙ্গে পরামর্শ করে আবুল কালামকে হত্যার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তৎকালিন সাংসদ ডাঃ রুহুল হকের সুপারিশে ও পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে ৬ থেকে ৩৩ নং আসামী ও ৪৬ থেকে ৬৩ নং আসামীরা ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আসামী গ্রাম পুলিশ মঞ্জুরুল ইসলামের কাছ থেকে ভিকটিম মারুফের অবস্থান নিশ্চিত করে ভিকটিম আবুল কালামের বাড়িতে আসে। এ সময় বাড়ির বারান্দায় ভিকটিমের মা লতিফা খাতুন ও বোন জান্নাতুল ঝর্ণা বসে থাকা অবস্থায় আসামীরা ভিকটিমের বাড়ি ঘিরে ফেলে। গ্রাম পুলিশ মঞ্জুরুলসহ কয়েকজন পুলিশ বাড়িতে ঢুকে আবুল কালামকে ধরে ফেলে চোঁখ বেঁধে ফেলে। অস্ত্র তল্লাশির নামে তার বাড়িতে ভাংচুর করে আসামীরা। এ সময় পুলিশ ভিকটিমকে এলোপাতাড়ি বুট দিয়ে লাথি মারে। আসামীরা সেখান থেকে তাকে পুলিশ পিকআপে করে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে দেবহাটা থানায় নিয়ে যায়। থানা লকআপে থাকা সাক্ষী হাফেজ আরিজুল ও ইলিয়াস মোল্লার উপস্থিতিতে আবুল কালামের পা মেরে ভেঙে দেওয়া হয়। এ সময় তাকে হত্যার পরিবর্তে অস্ত্র দিয়ে চালান দেওয়ার কথা বলে আসামী আসাদুল হক ও পুলিশ কর্মকর্তা তারক বিশ্বাস পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। গ্রাম পুলিশ মঞ্জুরুলের মাধ্যমে ৪ ও ৬ নং আসামীকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। ভিকটিমের বোন জান্নাতুল ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি রাত থেকে ২৫ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত ভিকটিমকে থানা লকআপে কয়েক বার খাবার দেয়। ২৫ জানুয়ারি দুপুরে থানায় খাবার নিয়ে গেলে কালামকে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পর কালামকে না পেয়ে চেয়ারম্যান আসাদুলের বাড়িতে গেলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
২৬ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নারিকেলী গ্রামের জিয়ার বাড়ি থেকে ১০০ গজ দূরে ইটের রাস্তার উপর উপর্যুপরি গুলি শব্দে প্রত্যক্ষদর্শী খায়রুল ইসলাম ও মাসুম বিল্লাহ মামলায় বর্ণিত আসামীদের ঘটনাস্থলে দেখে। কালাম ও অজ্ঞাত একজনকে পুলিশ পিকআপ হইতে জখম অবস্থাঢ নামাইয়া রাস্তার উপর দাঁড় করাইয়া ডাঃ রুহুল হক, চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও পুলিশ পরিদর্শক তারক বিশ্বাস এর পরামর্শে দুইজনকে গুলি করিয়া নির্জীব অবস্থায় পিকআপে তুলে সাতক্ষীরার দিকে নিয়ে যায়। ২৭ জানুয়ারি সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যেয়ে কালামসহ দুইজনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায় স্বজনরা। একপর্যায়ে ওই দিন বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়না তদন্ত শেষে কালামের লাশ তার চাচা ইমান আলী ও চাচাত ভাই কওছার আলীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে নামাজে জানাযা শেষে কালামের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।কালামকে হত্যার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে উপপরিদর্শক জিয়াউল হক ২৬ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় দেবহাটা থানায় ভিকটিমসহ ৫০/৬০জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করে সরকারি কাজে বাধা, ১৮৭৮ সালের অস্ত্র ও ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা(জিআর-২৩/১৪ দেব) দায়ের করে। ২০১৪ সালের ২৭ আগষ্ট আদালতে দুটি অভিযোগপত্র ১৪(ক) ও ১৪(খ) দাখিল করা হয়। বর্তমানে এসটিসি ১৮৭/১৭, ১৮৮/১৭ মামলা দুটি জজ কোর্টে বিচারাধীন। তখন পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় বর্তমানে মামলা করার অনুকুল পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় এ মামলা দায়ের করা হলো।
সফিকুল ইসলামের দায়েরকৃত মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. হাফিজুর রহমান।
প্রসঙ্গত, একইসাথে নিহত মারফ হোসেনকে হত্যার ঘটনায় একই আদালতে গত ৫ সেপ্টেম্বর পিটিশন -৩ নং মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ৬০ জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে।