বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা, টহল বৃদ্ধি

অনলাইন ডেস্ক:

মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা চলছেই। এর ফলে রোহিঙ্গা যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। নাফ নদ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল থাকলেও প্রায় ৫০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা অরক্ষিত থাকায় রোহিঙ্গারা এখন বঙ্গোপসাগর হয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও উপকূলে দৃশ্যমান টহল না থাকায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের খুরের মুখ থেকে শিলখালী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে রোহিঙ্গারা।

সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, এত বড় সীমান্ত আসলে পুঙ্খানুপুঙ্খ টহল দেওয়া কঠিন। তার ওপর টাকার বিনিময়ে স্থানীয় দালালরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে। বর্তমানে সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করেছি।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দালালদের তালিকা তৈরি করে তাদের ধরছি। ১০ দালালকে আটক করা হয়েছে। নাফ নদে টহলে কড়াকড়ি করেছি। উপকূল এলাকায়ও টহল জোরদার করা হবে।

বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল অপ্রতুল। তাই সুযোগ বুঝে স্থল ও জলপথ দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। রাতের আঁধারে সাঁতরেও তারা বাংলাদেশে আসছে। তবে এটাও সত্য যে, বেশির ভাগই দালালদের মাধ্যমে এপারে ঢুকছে বলে জানান সীমান্তের বাসিন্দারা।

জানা যায়, দালালরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে নৌকায় রোহিঙ্গাদের এপারে জলসীমায় নিয়ে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল নেই এমন জায়গায় তাদের নামিয়ে দেয়। এর পর তীরে ঝাউবনে লুকিয়ে রাখে। সেখান থেকে গন্তব্য স্থানে পাঠিয়ে দেয়। দালালদের সঙ্গে কিছু মাছ ধরার নৌকাও জড়িত রয়েছে।

জানা গেছে, দালালরা ২০ হাজার থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গাদের এ দেশে নিয়ে আসে। এ কাজে যুক্ত রোহিঙ্গাসহ বেশ কিছু দালাল সক্রিয় রয়েছে।

হ্নীলা সীমান্তের এক বাসিন্দা জানান, সীমান্তে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয়দেরও রোহিঙ্গা ঠেকাতে সোচ্চার হতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় তারা খুব সহজে ঢুকে পড়ছে। টেকনাফে স্থানীয়দের চেয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বহু গুণ। ফলে স্থানীয় মানুষের বেকারত্ব বাড়ছে। ফলে অনেকে নিরুপায় হয়ে মানব পাচার, মাদক ও অস্ত্র বহনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

টেকনাফের এক ব্যবসায়ী বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অনেকটা অরক্ষিত হওয়ার কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। তার ওপর দেশের কথা চিন্তা না করে অর্থের লোভে রোহিঙ্গা ঢোকাচ্ছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, বিজিবি-কোস্টগার্ডের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়দের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা পারাপারে জড়িত দালালদের ধরতে অভিযান চলছে। নাফ নদের পাশাপাশি উপকূলেও টহল জোরদার করা হবে।

বিজিবির সদরদফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। গত এক মাসে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী ৪ হাজার ৫০৬ জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিজিবির অভিযানে মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৩ জন চোরাচালানি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ১২৫ জন বাংলাদেশিকে আটক করে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)