এবার শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ সাতক্ষীরার আলোচিত সেই পাসপোর্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিনিধি:আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে কল করে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা পাসপোর্টের সহকারী পরিচালক উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক উত্তম কুমারের কাছে যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত থাকা শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ফোন করে কেন ভয়-ভীতি সহ বিভ্রান্ত করা হচ্ছে এমন বিষয় নিয়ে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, উত্তম কুমার দেব সম্প্রতি সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন । এর মধ্যে তিনি বিতর্কিত অনেকগুলো কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন। যোগদানের প্রথম দিনে তথ্য চাওয়ায় নারী সাংবাদিকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এই কর্মকর্তা। অফিস চলাকালীন সময়ে সহকারী পরিচালকের কক্ষটি ভেতর থেকে বন্ধ করে বসে থাকেন তিনি, এক্ষেত্রে সাধারণ সেবা গ্রহীতা থেকে শুরু করে কেউ তার কক্ষে প্রবেশ করতে পারেন না। একই সাথে তিনি যোগদানের পরপরই অফিসে সহকারী পরিচালকের কক্ষে সাংবাদিকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে দিয়েছে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা। সহকারী পরিচালকের অনুমতি ছাড়া অফিসের প্রবেশ মুখের তালা খোলা না হয়। সমগ্র বিষয়ে শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকায় এবং উত্তম কুমারের পূর্বের অপকর্ম ঢাকতে শিক্ষার্থীদের পৃথক পৃথক ভাবে মোবাইলে কল করে নাম ঠিকানা নেওয়া সহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এই কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের অফিসে চায়ের দাওয়াত দিয়ে ডেকে আনেন উত্তম কুমার। এ সময় শিক্ষার্থীরা সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের কাছে জানতে চান, শিক্ষার্থীদের কেন পৃথক পৃথকভাবে মোবাইলে কল করে ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ বিভ্রান্তি করা হচ্ছে? তবে এ বিষয়ে উত্তম কুমার দেব কোনো স্বদউত্তর দিতে পারিনি শিক্ষার্থীদের।সাতক্ষীরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রুপ লিডার তাহসিন হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার তার পরিচয় গোপন রেখে আমাকে ফোন করেন। ফোন করে নাম ঠিকানা, বাসা বাড়িসহ নানাবিধ প্রশ্ন করে ভীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তিনি যোগদান করেই নারী সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে আলোচনায় আসেন। তাছাড়াও উত্তম কুমার এরআগে জামালপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাকে ঘুষের টাকা ও অফিসের হিসাবসহ আটক করেন। সেখান থেকে বদলি হয়ে সাতক্ষীরায় এসেছে। সাতক্ষীরায় কর্মরত পূর্বের অফিসারকে নিয়ে একটি তদন্ত চলমান যেটিতে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত ছিলো। সেই তদন্ত কার্যক্রমটি পূর্বের অফিসারের বিরুদ্ধে নিতে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করতে উত্তম কুমার স্বয়ং নিজে পৃথক পৃথকভাবে ফোন করে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। উত্তম কুমারের ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন বন্ধ করেও রেখেছে। তিনি চায়ের দাওয়াত দিয়ে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে তদন্ত কার্যক্রমকে আগের অফিসারের বিরুদ্ধে নিতে এবং তার জামালপুরের অপকর্মসহ নারী সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মামলার ভীতি দেখাতে পিছপা হয়নি।একাধিক শিক্ষার্থী জানান, উত্তম কুমার পূর্বের অফিসারের একটি তদন্ত কার্যক্রম ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করেন। একই সাথে তিনি জামালপুরে ছাত্র আন্দোলনের সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ঘুষের টাকা সহ ধরা পড়েন। সাতক্ষীরায় নারী সাংবাদিককে লাঞ্ছিত, অফিসে দরজা বন্ধ করে বসে থাকা সহ একাধিক বিতর্কিত কর্মকান্ড ঘটিয়েছে, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা যেন কোনভাবে সম্পৃক্ত না হয় এবং তাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট বিভ্রান্ত করে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে পৃথক পৃথকভাবে মোবাইল ফোনে কল করে গম্ভীরভাবে কথাবার্তা বলেন এই কর্মকর্তা।সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার দেব বলেন, এ সকল বিষয়ে তিনি কোন তথ্য দিতে পারবেন না কিংবা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন প্রকার কথা বলবেন না।এদিকে, তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ, ঘুষ গ্রহণ করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে জামালপুর থেকে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগ দেন উত্তম কুমার দেব। রোববার (২৫ আগস্ট) যোগদানের প্রথম দিনেই তার অফিসে সংবাদ সংগ্রহকালে চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এর সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি আমিনা বিলকিস ময়নাকে লাঞ্চিত করে নতুন করে আলোচনায় আসেন পাসপোর্ট কর্মকর্তা উত্তম কুমার দেব। এরপর অফিস চলাকালীন সময়ে সরকারি পরিচালকের কক্ষ বেতর থেকে বন্ধ করে রাখার অভিযোগ ওঠে উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে একই সাথে পাসপোর্ট অফিসে সাংবাদিকদের প্রবেশে দেয়া হয়েছে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা।নারী সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পেরে গণমাধ্যমকর্মী আমিনা বিলকিস ময়নার কাছে ফোন দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জসিম উদ্দিন। তিনি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন।গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ( সুরক্ষা সেবা বিভাগ) মোঃ মশিউর রহমানের।তিনি বলেন, নারী সাংবাদিকের সঙ্গে সাতক্ষীরা পাসপোর্টের সহকারী পরিচালকের অশোভন আচারণের বিষয়ে অবগত রয়েছি। তাছাড়া অফিস চলাকালে পরিচালকের কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ রাখার বিষয়টি শুনলাম। এ সকল বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)