আওয়ামী লীগ পতনের নেপথ্যে

অনলাইন ডেস্ক:

* গণভিত্তি থেকে জনরোষ
* কর্তৃত্ববাদী শাসন ডেকে আনে পতন
* দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক-জনতার চাপা ক্ষোভ
* দল-সংগঠন নিষিদ্ধ করার প্রবণতা
* কোটা আন্দোলনে নির্মম শিক্ষার্থী হত্যা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে পতন হয় দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। জনরোষের মধ্যে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির সব স্তরের নেতাকর্মীরা রয়েছেন আত্মোগোপনে। ২০০৯ সাল থেকে টানা দেড় দশক রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল দলটি। কিন্তু ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ যেন হাওয়ায় মিলে গেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে- নেপথ্যে ঠিক কী ছিল বা কী ঘটেছে- যে কারণে টানা ক্ষমতায় থাকা ও নানা উন্নয়নের ইতিহাস লেখা আওয়ামী লীগকে হাওয়ায় মিলতে হলো?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে চরম সংকটে ফেলে দেন। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ধ্বংস করেছেন নির্বাচনী ব্যবস্থা। সরকারে থেকে একতরফা নির্বাচন দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি। ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ ছিল জনসাধারণের মধ্যে। রাজনৈতিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা- সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত ছিল আওয়ামী লীগ আমলে। উন্নয়নের আড়ালে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু তারা দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। শেখ হাসিনা সীমান্ত হত্যার বিষয়ে পুরোপুরি চুপ ছিলেন। সিন্ডিকেট নির্ভর অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে দিন দিন বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। এতে ফুঁসে ওঠে খেটে খাওয়া মানুষ। লম্বা সময় ক্ষমতায় থেকেও আশানুরূপ বেকারত্ব কমিয়ে আনতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। বিদায়ী সরকারের ওপরে শ্রমিকদের বড় অংশের অসন্তোষ ছিল। ক্ষোভ বাড়ছিল বেকারদের মধ্যে। এছাড়া দ্রব্যমূলের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এ কারণে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝেও আওয়ামী লীগবিরোধী চাপা ক্ষোভ ছিল। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবিকে উপেক্ষা করা হয়। আন্দোলন দমনে পুলিশ প্রশাসন ব্যবহার করে নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা করাই কাল হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার জন্য।

২০০৯ সাল থেকে টানা দেড় দশক রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল দলটি। কিন্তু ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ যেন হাওয়ায় মিলে গেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, পাপের ভারে ডুবে গেছে আওয়াম লীগ সরকার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে অপ্রতিরুদ্ধ মনে করতেন। তার মধ্যে দম্ভ ছিল। গত ১৫ বছরে দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র ছিল না। ছিল না জবাবদিহিতা। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও দেশের খেটে খাওয়া মানুষের আয় বাড়েনি। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে নানা কারণে ক্ষোভ জমেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার হটাতে মানুষজন একটা সুযোগ খুঁজছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সে সুযোগ এনে দেয়।

নেপথ্যে ঠিক কী ছিল বা কী ঘটেছে- যে কারণে টানা ক্ষমতায় থাকা ও নানা উন্নয়নের ইতিহাস লেখা আওয়ামী লীগকে হাওয়ায় মিলতে হলো?

তরুণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাংবাদিক সৈয়দ শিমুল পারভেজের মতে, দেশের তরুণ প্রজন্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বুঁদ হয়ে থাকলেও তারা সমাজ সচেতন। দীর্ঘ সময় তারা আওয়ামী লীগের শাসনামল দেখেছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কার্যকলাপ তারা প্রত্যক্ষ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বহুবিধ কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- টানা সাড়ে ১৫ বছরে অবাধ দুর্নীতি-অনিয়ম, লুটপাট ও অর্থ পাচার হয়েছে। মানুষ বিচারহীনতায় ভুগেছে। শেখ হাসিনা সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না। তিনি আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বকে শত্রু বানিয়ে ফেলেন। বাজার সিন্ডিকেট করে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে জিম্মি করে ফেলেন আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীরা। তারা বিরোধী মতের ওপর জুলুম-নির্যাতন করেন। কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাত্তা না দেওয়া। ভয়ংকর এমন পরিস্থিতির মধ্যে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা আওয়ামী লীগের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

আওয়ামী লীগকে চরম সংকটে ফেলে দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সরকারের ওপরে শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, গত সরকারের আমলে আমরা ২৩ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি দিয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ সরকার বলেছিল, রেশনিং ব্যবস্থা চালু করবে, তা আর চালু করা হয়নি। তখন মজুরি বোর্ডে সদস্য ছিল আওয়ামী লীগপন্থিরা। তারা এখন পালিয়ে গেছে। ২৩ সালের মজুরি আন্দোলনে চারজন গামের্ন্টস শ্রমিকে হত্যা করা হয়েছিল, ২০ হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল, অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এসব বিষয় নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ছিল।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)