সাতক্ষীরায় অহেদ আলীকে নির্যাতনের পর হত্যা সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্উদ্দিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ ৫৬জনের বিরুদ্ধে মামলা
রঘুনাথ খাঁ ঃ ২০২০ সালের ২৬ মার্চ দিবাগত রাত একটার দিকে সাতক্ষীরার সদরের ধুলিহরে বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট শেষে অহেদ আলীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ পার্শ্ববর্তী আমবাগানে ফেলে রেখে যাওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী পারুল বেগম বাদি হয়ে মঙ্গলাবার সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের তৎকালিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহউদ্দিন, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সহসভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদসহ ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা দায়ের করেন।বিচারক নয়ন কুমার বড়াল বাদির লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে (১৫৬(৩) ধারা মতে) এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে একজন সহকারি পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলার তদন্ত করানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলায় অন্যতম আসামীরা হলেন, তৎকালিন সাতক্ষীর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ, ধুলিহর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে বাবু সানা, বর্তমান চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী, বৈকারী ইউনিয়নের তৎকালিন চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অছলে, জেলা স্বেচ্ছসেবক লীগের সভাপতি কাজী ফিরোজ হাসান, সুলতানপুরের বারি খানের ছেলে শরিফুল ইসলাম খান, মুনজিতপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মনোয়র হোসেন অনু, পৌরযুবলীগের নেতা কাটিয়ার রাকিবুল হাসান রাকিব, জেলা ওলামালীগের সভাপতি মুনজিতপুরের রউফুজ্জামান লাদেন। এ ছাড়াও রয়েছে ৩৯ জনের নাম।মামলার বিবরনে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর গ্রামের বাড়িতে ঢুকে আসামী মীর্জা সালাহ্উদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিদুলের নির্দেশে অহেদ আলীর স্ত্রীর কাছে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা , ছয় ভরি সোনার গহনা ও একটি মটর সাইকেল ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সাত লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে। পরে প্রায় সাত লক্ষাধিক টাকার মালামাল ভাঙচুর করে। আসামী মিজানুর রহমান ওরফে বাবু সানা অহেদ আলীর শিশু সন্তানকে পানিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। পর অহেদ আলীকে মারতে মারতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে নির্যাতন করে খুন করে লাশ পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে ফেলে রেখ যায়। পরদিন সকালে লোকমুখে শুনে অহেদের লাশ দেখতে পান পারুল বেগম ও তার স্বজনরা। পরে ওই লাশ পুলিশ ও আসামীরা তড়িঘড়ি করে দাফন করতে বাধ্য করে।ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলার বিলম্বের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. মশিউর রহমান ফারুক চারজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫৬জনের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় এফআইআর হিসেবে গণ্য করার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।