সাতক্ষীরায় সাবেক পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, জজ কার্টের পিটি অ্যাড. আব্দুল লতিফসহ ১৮জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
রঘুনাথ খাঁঃ ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার সদরের কুচপুকুর গ্রামের মোক্তার আলীর ছেলে পরিবহন চালক হুমায়ুন কবীরকে ঢাকা থেকে তুলে এনে আটক রেখে চাঁদা আদায়, নির্যাতনের ১০দিন পর ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ভোরে বাইপাস সড়কে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুত মিস, সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার আলী ও সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি র্অ্যাড. আব্দুল লতিফসহ ১৮জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই আজগার আলী বাদি হয়ে রবিবার সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন কুমার বড়াল বাদির লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে (১৫৬(৩) ধারা মতে) এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে একজন সহকারি পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলার তদন্ত করানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।মামলার অপর আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরা সদরের কুচপুকুরের নেছারউদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলাম, তার ভাই রবিউল ইসলাম, নজরুল ইসলামের ছেলে নবের আলী, রণি, জনি, ইমামুল হক পলাশ, আব্দুল খালেকের ছেলে আনারুল ইসলাম, কওছারের ছেলে শিমুল, ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম, বালিয়াডাঙা গ্রামের নূর আলমের ছেলে রবিউল ইসলাম, দেবনগর গ্রামের নেছার আলীর ছেলে মুনসুর আলী ও হামজার আলী, কাশেমপুরের ইমান আলীর ছেলে জাফরসহ অজ্ঞাতনামা৭/৮ জন।মামলার বিবরনে জানা যায়, কুচপুকুর গ্রামের মোক্তার আলীর ছেলে হুমায়ুন কবীর একজন পরিবহন শ্রমিক। ২০১৯ সালের ২৫ আগষ্ট তৎকালিন পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুতমিস, সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার আলী ও সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি র্অ্যাড. আব্দুল লতিফ অন্যান্য আসামীদের সাথে যোগসাজসে ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে হুমায়ুন কবীর, মামলার সাক্ষী রাজু, উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম, ও মধু ড্রাইভারকে আটক করে সাতক্ষীরায় নিয়ে পুলিশ হেফাজতে রাখে। পথিমধ্যে উপপরিদর্শক মফিজুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সাক্ষী রাজুকে নির্যাতনের পর কোর্টে সোপর্দ করা হয়। মধুকে টাকার বিনিময়ে পুলিশসুপারসহ চারজন পুলিশ কর্মকর্তা ছেড়ে দেন। হুমায়ুন কবীরকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ ২০ লাখ টাকা দাবি করে ৫ লাখ টাকা আদায় করে। পরে অঅসামী ওই চার পুলিশ কর্মকর্তাসহ পিপি লতিফ হুমায়ুন কবীরের স্ত্রী চম্পা খাতুনের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করেন। এরপর হুমায়ুন কবীর কে অজ্ঞাতস্থানে রেখে নির্যাতনের পর ৫ সেপ্টেম্বর ভোরে হুমায়ুনের পিঠের বাম পাশে ও বুকে গুলি করে হত্যার পর বাইপাস সড়কে ফেলে রাখা হয়। পরে ক্রসফায়ারে কবীর মারা গেছে মর্মে স্থানীয় আসামীরা উল্লাস করে। ওইদিন বিকেলে সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে হুমায়ুন কবীরের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলার বিলম্বের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।বাদিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. মশিউর রহমান। তিনি চারজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৮জনের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।