বন্যা নিয়ে যা বলছে ভারত

ডেস্ক রিপোর্ট:এবারের বন্যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে একদিকে যেমন আকস্মিক অন্যদিকে অকল্পনীয়। একই সঙ্গে দুটি বিভাগ তলিয়ে যাওয়া বিশেষ করে চট্টগাম বিভাগে বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ আগে কেউ দেখেনি। শুধু ফেনী নয়, এর আশপাশের জেলাগুলোতে বন্যা আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। বহু জায়গায় বন্যার পানি ঘরের চাল ছুঁয়েছে কিংবা উপচে গেছে।
ফেনীর পাশের জেলা কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বন্যার তীব্রতা অনেককে হতবাক করেছে। ভারত সীমান্তের লাগোয়া ফেনী জেলায় এ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১৫টি জেলা, যেগুলোর মধ্যে আছে কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম। ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরামে কয়েকদিন ধরেই অতি বৃষ্টিপাত ও বন্যার খবর গণমাধ্যমে এলেও বাংলাদেশে এ নিয়ে খুব বেশি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তবে দুদিন আগে ফেনী ও কুমিল্লা অঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করলে বেশ সরব হয়ে ওঠে বাংলাদেশের জনগণ।
বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত সবাই অভিযোগের তীরটি তাক করে ভারতের দিকে। বলা হচ্ছে, ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে তলিয়ে গেছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।তবে বাংলাদেশের এ দাবিকে পুরোপুরিভাবে নাকচ করে দিয়েছে ভারত। তারা বলেছে, পানির পরিমাণ বাঁধের ধারণ ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেলে পানি তার নিজস্ব গতিতে বাঁধ উপচে এ পারে চলে আসে। তাছাড়া অতি ভারী বর্ষণ এবং নদীগুলো তাদের নাব্যতা হারিয়ে শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পানি ধরে রাখতে না পারায় এ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।বাংলাদেশের অনেক এলাকায় মাত্র দুইদিনে প্রায় এক মাসের সমান বৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কুমিল্লা শহরে ২১ আগস্ট থেকে ২২ আগস্টের মধ্যে ২৩৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেখানে মাসিক গড় ৩৪৭ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (FFWC), বাংলাদেশ অনুযায়ী, এ মাসে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৮৬০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।একইভাবে, চট্টগ্রাম জেলার নারায়ণহাটের আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রে দুইদিনে ৩৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাধারণত পুরো আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাতের তুলনায় মাত্র ৩২ শতাংশ কম।

ভারতের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের সম্প্রচার ও তথ্য উপদেষ্টা ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, পূর্ব সর্তকতা ছাড়াই ত্রিপুরার সিপাহিজালা জেলায় অবস্থিত ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত ‘অমানবিকতার’ পরিচয় দিয়েছে।গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ অভিযোগ ঘুরপাক খাচ্ছে।ডম্বুর বাঁধ থেকে বাংলাদেশে পানি বহনকারী গোমতি নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ বন্যা হয়েছে বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারত বাঁধটি খুলে দেয়নি এবং বাঁধের পার্শ্ববর্তী হ্রদে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাঁধের উপর দিয়ে এ পাশে চলে এসেছে।ভারত এ ব্যাপারে দ্বিপাক্ষিক প্রটোকলের অধীনে বাংলাদেশকে গোমতী নদীর পানির মাত্রার প্রকৃত তথ্য সরবরাহ করেছে।

বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক
বাংলাদেশের ১১টি জেলায় বন্যায় কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৩০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পিটিআই জানিয়েছে।
ঢাকার আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা প্রবল বর্ষণ, নদীর পানি ধরে রাখতে না পারা, এল নিনো এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে বন্যার জন্য দায়ী করেছেন।
ত্রিপুরায় গত কয়েকদিনে বৃষ্টি সংক্রান্ত ঘটনায় অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। হিসাব মতে, বৃষ্টির কারণে তাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাজ্যের ৪৫০টি ত্রাণ শিবিরে ৬৫,৪০০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)