সাতক্ষীরার নবম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্র আবু হানিফ হত্যায় সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরসহ ২৬ জনের নামে মামলা 

রঘুনাথ খাঁ ঃ ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পদ্মশাখরা গ্রামের এজাহার আলী গাজীর ছেলে নবম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্র আবু হানিফকে হত্যার দায়ে  সাবেক  পুলিশ সুপার  চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরসহ ২৬ জনের নামে  হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই শহর আলী গাজী বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম  প্রথম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন বড়াল মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। মামলার আসামীরা হলেন, সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি এনামুল হক, ডিবি প্রধান আব্দুল হান্নান, এসআই আব্দুল মালেক, এসআই আবুল কালাম, ভোমরার মৃত সোনা গাজীর ছেলে ওহিদুল ইসলাম, ভোমরা দাসপাড়ার আব্দুস সোবহানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম, হাড়দ্দহার মৃত বাদল গাজীর ছেলে শহিদুল ইসলাম গাজী, মৃত মোহম্মদ মোল্লার ছেলে আব্দুল গনি, পদ্মশাখরার মৃত আব্দুর রহিম গাজীর ছেলে মফিজুল ইসলাম, খানপুরের নজরুল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম খলিল, চৌবাড়িয়ার মফিজ উদ্দীন সরদারের ছেলে আব্দুস সাত্তার সরদার, আব্দুল গনির ছেলে মোশারফ হোসেন, পদ্ম শাখরার মৃত এমাম বক্স গাজীর ছেলে রেজাউল ইসলাম, ভোমরার মৃত মোকসেদ গাজীর ছেলে আনারুল ইসলাম গাজী, লক্ষ্মীদাড়ীর মৃত কাদের মোল্লার ছেলে জালাল উদ্দীন, হাড়দ্দহার আব্দুস সামাদ সরদারের ছেলে খলিলুর রহমান, হাড়দ্দহার আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ছেলে তরিকুল ইসলাম, হাড়দ্দহার মৃত নেছার উদ্দীনের ছেলে এমাদুল ইসলাম, পদ্মশাখরার মৃত আব্দুর রহিম বক্সের ছেলে শহীদুল ইসলাম, ভোমরার আবু শেখের ছেলে আনসার আলী, পদ্মশাখরার সায়েদ ফকিরের ছেলে আবু বক্কর ফকির, ভোমরার আনসার আলীর ছেলে ইসমাঈল হোসেন, ভোমরার হারু কাপালীর ছেলে সুবাস ডাঃ, লক্ষ্মীদাড়ীর মৃত কাদের মোল্লার ছেলে জালাল মোল্লা, বিজয় কৃষ্ণ ঘোষের ছেলে হারু ঘোষ, পদ্মশাখরার রমজান গাজীর ছেলে আব্দুল গফুর গাজীসহ অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জন। মামলার বিবরনে জানা যায়,  তৎকালিন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানসহ ২৬ জন ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি সকালে আসামী অহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ব্যতীত সাধারন আসামীরা বাদির   ভোমরা বাড়িতে  সভা করে। তারা উক্ত মিটিং এ বাদীকে অথবা বাদীর পরিবারের যেকোন একজনকে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তারা ১ হতে ৩নং আসামীর সাথে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত করে। আসামীদের পরিকল্পনার বিষয় স্বাক্ষীর মাধ্যমে বাদী খবর পায়। খবর পাওয়া মাত্র ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি   দুপুরে বাদী নিকটস্থ প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাদীর অপর তিন ছেলে আশেপাশের প্রতিবেশির বাড়িতে লুকিয়ে থাকে।

বাড়িতে বাদীর স্ত্রী ও ছোট ছেলে মৃত আবু হানিফ ছোটন ছিল। গত ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারী বিকাল অনুমান ৫:৩০ টার সময় ওসি এনামুল হকের নেতৃত্বে পুলিশ ও অন্যান্য আসামীরা বাদীর বাড়ি ঘেরাও করে। বাদি কোথায় জানতে চাইলে আবু হানিফ ছোটন জানায়, তার আব্বু ও ভাইয়েরা  কেউ বাড়িতে নেই।

ওসি সাহেবের নেতৃত্বে পুলিশ  ঘর, রান্নাঘর, গোয়াল ঘর, বৈঠক খানায় খোঁজাখুজি করে কাউকে না পেয়ে আবু হানিফ ছোটনকে ১নং আসামীর নির্দেশে ধরে নিয়ে যায়। আবু হানিফ ছোটনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্বাক্ষীদের দারস্থ হয়ে তাকে ছাড়িয়া আনবার জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু বাদীর শিশু ছেলেকে পুলিশ কোথায় রেখেছে তার কোন সন্ধান দেয়নি।পরদিন ভোর অনুমান ৫:৩০টার সময় ভোমরা স্থলবন্দর এর লাভলু স্কেল এর সামনে মেইন রাস্তার উত্তর পার্শ্বে ফাঁকা জায়গায় ১নং আসামীর উপস্থিতিতে তার নির্দেশে ও হুকুমে ২ ও ৩নং আসামী পিস্তল দিয়া বাদীর শিশু ছেলে হানিফ ছোটনের বুকের বার পার্শ্বে, ডান হাতের বাহুতে এবং বাম হাতের কনুইয়ে পরপর ৩টি গুলি করে। পরে অধিক রক্তক্ষরণে হানিফ মারা যায়। গুলি করার সময় ঘটনাস্থলে (৭-১৩) নং আসামীগন সেখানে উপস্থিত ছিল বলে জানা যায়। সদর হাসপাতালের মর্গে বিকাল অনুমান ৫টার সময় স্থানীয় মেম্বর জাকির হোসেন নিকট পুলিশ  হানিফের লাশ হস্তান্তর করে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তৎকালীন সময়ে মামলা করার কোন সুযোগ ছিল না। বর্তমান পরিবেশ অনুকুল হওয়ায় মামলা করা হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)