সাতক্ষীরায় স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে এসে নির্যাতনের স্বীকার কেশবপুরের টুম্পা

রঘুনাথ খাঁঃ মোবাইলে প্রেমের ফাঁদে পড়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি নিতে আসা এক নারীর নগদ টাকা, মোবাইল ও সোনার গহনা কেড়ে নিয়ে নির্যাতনের পর তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই নারীকে সাতক্ষীরা সদর হগাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।নির্যাতিত নারীর নাম টুম্পা রানী সরদার (২১)। সে যশোর জেলার কেশবপুর পৌরসভার বেয়াজডাঙা গ্রামের সুমন সরদারের মেয়ে।সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন টুম্পা রানী সরদার জানান, সে কয়েক বছর যাবৎ ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে চাকুরি করে আসছে। চাকুরির সুবাদে সে ঢাকায় থাকে।মোবাইল ফোনে এক বছর আগে সাতক্ষীরা সদরের বল্লী ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের নিজামউদ্দিন সরদারের ছেলে সৌরভ সরদারের(ভগবেনে) সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে নিজের স্ত্রী ও সন্তানের কথা গোপন রেখে সৌরভ তাকে হিন্দু ধর্মমতে বিয়ে করে। সাতক্ষীরা থেকে মাঝে মাঝে সৌরভ ঢাকায় যেয়ে তার বাসায় অবস্থান করতো। তাকে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রাত্রিযাপন করতো। ইতিমধ্যে সে রায়পুরে একবার সে সাতক্ষীরায় সৌরভের সঙ্গে দেখা করতে এলেও তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়নি। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে সৌরভের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। এরপরও সৌরভের সঙ্গে কথা বলে মোবাইলে কথা হয় তার স্ত্রী দীপার সঙ্গে। দীপার অনুমতি নিয়েই রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে রায়পুর গ্রামের সৌরভের বাড়িতে স্ত্রীর দাবি নিয়ে আসে সে। বাড়ির উঠানে দাঁড়ানো মাত্রই দীপা ও তার মা তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল, ৫০ গাজার টাকা ও গলা থেকে সোনার চেইন ও কানের দুল ছিঁড়ে নেয়। পরে তার পরিহিত কাপড় খুলে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রবিবার রাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ( মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড -৩) একস্ট্রা-৩ নং শয্যায় ভর্তি করে।
বল্লী গ্রামের মান সিং, শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, সৌরভ কয়েক বছর যাবৎ তার ভগ্নিপতি কলারোয়ার বোয়ালিয়া বাজারের মুনসুরের দোকান নিয়ে স্বর্ণকারের কাজ করতো। তার বিরুদ্ধে অনেক নারীর অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। চার বছর আগে সৌরভ কলারোয়ার কুশোডাঙা গ্রামের বিমল মোল্লার(ভগবেনে) স্ত্রী ও যশোরের মনিরামপুর গরুর হাটের পাশে রং ব্যবসায়ি সদানন্দ সরদারের মেয়ে দীপাকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। এর এক বছর যেতে না যেতেই সৌরভ কেশবপুরের একটি মুসলিম মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে বাবা ও স্বজনদের উপস্থিতিতে মোটা অংকের টাকা লেনদেন এর মাধ্যমে কেশবপুর থানায় মুচলেকা দিয়ে সেযাত্রায় রক্ষা পায়। বিয়ের কথা গোপন রেখে ঢাকায় যমুনা ফিউচার পার্কে কর্মরত এক নারীকে বিয়ে করা টুম্পা রানী সরদারে গত রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে স্ত্রীর দাবিবেতে রায়পুর গ্রামে সৌরভের বাড়িতে আসে। এ সময় সৌরভের স্ত্রী দীপা ও তার শ্বাশুড়ি টুম্পার কাছে থাকা ব্যাগ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোন ও কানের সোনার দুলসহ গলা থেকে সোনার চেইন ছিড়ে কেড়ে নেয়। এরপর তার পরিহিত কাপড় কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হলে বাড়িতে তালা মেরে সৌরভ, তার স্ত্রী দীপা ও শ্বাশুড়ি আত্মগোপন করে।
বল্লী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ নজিবুল্লাহ জানান, সৌরভের যথেষ্ট সুনাম নেই। রবিবার বিকেলে কেশবপুরের এক নারী স্ত্রীর দাবিতে সৌরভের বাড়িতে এলে তাকে নির্যাতন ও তার জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তিনি।
তবে টুম্পার মা নিজের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, মেয়েকে নিয়ে তিনি বুধবার বাড়ি যাবেন। তারপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ আক্তার মাহমুদ জানান, রবিবার রাতে ৯টার দিকে টুম্পাকে ভর্তি করা হয়। তার বামহতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে।এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)