শ্যামনগরে দুই সপ্তাহ পর দখলমুক্ত হলো বয়ারসিং কালিমন্দির ও দুর্গামন্দির
রঘুনাথ খাঁ ঃদুই সপ্তাহ পর দখলমুক্ত হলো সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের বয়ারসিং গ্রামের বয়ারসিং কালিমন্দির ও দুর্গামন্দির। বুধবার দুপুরের দিকে উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে দখলবাজদের মন্দির থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। বিরোধপূর্ণ জমিতে মন্দির থাকার অভিযোগ তুলে পাশের চিংড়িঘের দখলকারীরা গত কয়েকদিন ধরে মন্দিরের একটি কক্ষ দখল করেছিলেন। জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকালে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোগদখলীয় ৯০ বিঘা জমির চিংড়ি ঘের দখল করে নেয় নওয়াবেঁকীর সিরাজুল ইসলাম ও জামায়াত কর্মী সৈয়দ কামালের লোকজন। এসময় দখলবাজরা যাতায়াতের রাস্তা কেটে দিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য মন্দিরে ও প্রধান সড়কে যাওয়ার পথও আটকে দেয়। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌছে উভয়পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরামর্শ দেন। অভিযোগ, নেতৃবৃন্দের নির্দেশনার পরও চিংড়িঘের পাহারায় নিয়োজিত ভাড়াটে শ্রমিক আহাদুল্লাহ, আব্দুল আলিম, আজিজুল ও আব্দুর রশিদসহ অন্যরা মন্দিরের একটি কক্ষ দখলে রেখে পূজা অর্চনায় আসা হিন্দুদের ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এমনকি ২২ আগস্ট বুধবার সকালে মন্দিরের পার্শ্ববর্তী নিজেদের পুকুরে মাছ ধরতে গেলে লাঠিশোটা নিয়ে ইতিকা রানী বিশ্বাস নামে এক গৃহবধুকে ধাওয়া করে তারা। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পেরে বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌছে মাওলানা আব্দুর রহমান দখলবাজদের মন্দির এলাকা থেকে সরিয়ে দেন। মন্দির কমিটির সভাপতি গনেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান তাদের ভোগদখলীয় চিংড়িঘের দখলে নিয়ে এখন প্রতিদিন মাছ লুট করছে। রাতে নানাভাবে উপদ্রবের পাশাপাশি মন্দিরে যাতায়াতকারী স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বীদের উক্ত মন্দিরে যেতেও বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিষয়টি তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানানোর পর নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌছে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিষ্ণুপদ মন্ডল বলেন চিংড়িঘের পাহারায় নিয়োজিতরা স্থানীয় হিন্দুদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। বুধবার সকালেও তারা এক নারীকে ধাওয়া দিয়ে বাড়িতে ঢুকিয়ে দেয়। বিষয়টি জানার পর মাওলানা আব্দুর রহমানের সাথে তারা ঘটনাস্থলে যেয়ে ঘের পাহারায় নিয়োজিতদের মন্দির থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। কাগজপত্র দেখে পরবর্তীতে চিংড়িঘেরের মালিকানার বিষয়টি নিস্পত্তি করা হবে। মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, স্থানীয় হিন্দুরা যাতে নির্বিঘ্নে মন্দিরে যাতায়াতসহ শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অর্চনা করতে পারে সে ব্যস্থা নেয়া হয়েছে। কেউ নির্দেশনা না মানলে তাকে আইনের হাতে উঠিয়ে দেয়া হবে।ঘের দখলকারী সিরাজুল ইসলাম বলেন তার লোকজন মন্দির এলাকায় আসা হিন্দুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে জানতে পেরেছেন। সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে পরবর্তীতে আর মন্দির এলাকায় না যাওয়ার জন্য। তবে ঘের নিজের দাবি করে তিনি অবৈধ দখলদার থেকে তা মুক্ত করেছেন বলেও দাবি করেন। এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক রনজিৎ দেবনাথ, প্রাক্তন শিক্ষক রামরঞ্জন মন্ডল,বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ শ্যামনগর উপজেলা শাখার আহবায়ক অনাথ মন্ডল, সদস্য সচিব উৎপল মন্ডল প্রমুখ।