৫ আগষ্ট পরবর্তী সহিংসতায় আলীপুর ও কালিগঞ্জে অনেকেই ঘরছাড়া

রঘুনাথ খাঁঃ গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সাতক্ষীরা সদরের আলীপুরে ও কালিগঞ্জে বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর অনেকেই জীবন বাঁচাতে ঘর ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। আবার কেই কেউ বাড়িতে ফিরেছেন।বৃহষ্পতিবার সরেজমিনে সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে যেয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর ৫ আগষ্ট বিকেল থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে আলীপুর, মাহমুদপুর, বাদামতলা, তালবাড়িয়া, ডাকাতপোতা, গাংনিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে। ওইদিন বিকেল ৬টার পরপরই স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির লাঠিয়াল বাহিনীর ৭০/৮০জন সদস্য আলীপুর (বাঁকাল) গ্রামের রুপচাঁদ সরদারের সার, বীজ , কীটনাশক, মাছের খাদ্য ও পশুখাদ্য বিক্রির জন্য “ সরদার কৃষি সেবা” প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে তাদের রাইস মিলে ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন দুপুরে রাইস মিলে দ্বিতীয় দফায় আগুন দেওয়া হয়। পাঁচ লাখ নগদ টাকাসহ ৬০ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট ও ৪০ লাখ টাকার জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ৫ আগষ্ট দিবাগত রাত একটার দিকে রফিকুল ইসলামের বাড়ি ভাংচুর করতে গেলে স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়। ৫ আগষ্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মাহমুদপুর গ্রামের আকরাম মোড়লের ছেলে কামরুল ইসলামের গুদামের তালা ভেঙে এক হাজার বস্তা ধান আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ৫ আগষ্ট রাত ৭টার দিকে বাদামতলা মার্কেটে কওছার আলীর মালিকানাধীন রওশান আরা মার্কেট ভাঙচুর শেষে ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়। একই রাতে তালবাড়িয়া গ্রামের মোজাম সরদারের ছেলে মিজানুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই সময়ে একই গ্রামের বাসারত ঢালীর ছেলে বাবলু ঢালীর বাড়ি ও বাদামতলার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট শেষে ভাঙচুর করা হয়। একই রাতে কওছার শেখের ছেলে মিন্টুর বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। মাহদুদপুরের বাপ্পির কম্পিউটার দোকান ভাংচুর ও লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই দিনে একই গ্রামের কওছার আলীর ছেলে গ্রাম ডাক্তার জাকির হোসেনের মাহমুদপুরস্থ ফার্ম্মেসীতে লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয়। গাংনিয়া গ্রামের আব্দুল করিম গাজীর ছেলে আমীর হোসেনের বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। ভাংচুরজ করা হয় আওয়ামী লীগ অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা সাংসদ। একই সময়ে ডাকাতপোতা গ্রামের নুরুজ্জামানের বাড়ি, মাছের ঘের ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও মাছের ঘেরে লুটপাট করা হয়। একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে মোশাররফ হোসেনের বাড়ি, গাংনিয়া গ্রামের সোলায়মান কারিগরের ছেলে কাদের কারিকরের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। ঘেরের মাছ লুট করা হয় ৬ আগষ্ট একই গ্রামের বাসারত ঢালীর ছেলে হাসানুরের মাছের ঘেরে লুটপাট করা হয়। আলীপুর ঢালীপাড়ার আতিয়ার সরদারের ছেলে মহিবুল্লার ঘেরের মাছ লুট, গাংনিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে জাকির হোসেনের বাড়ি ও মাছের ঘের লুটপাট করা হয়। আলীপুর পূর্বপাড়ার আফছার সরদারের ছেলে সিরাজউদ্দৌলার ঘেরের মাছ লুটপাট শেষে ঘেরের বাসায় আগুন দেওয়া হয়। আলীপুর দীঘিরপাড়ের সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুলের ভাই মনিরুল ইসলামের মটর সাইকেলে আগুন দিয়ে তার পেকেটে থাকা টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। ৫ আগষ্ট মাহমুদপুর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে খোকনের বাড়ি, অহেদ আলীর ছেলে আবু বক্করের বাড়ি ভাংচুরসহ লুটপাট ও ঘেরের মাছ লুটপাট করা হয়। একই দিনে একই সময়ে মাহমুদপুরের জলিল বৈদ্যের ছেলে জাহিদুর রহমান বাবুর বাড়ি, মুনসুর আলীর ছেলে আব্দুর রহমান বাবুর রাইস মিল, আবু তাহেরের ছেলে আমিনুর রহমানের বাড়িঘর ভাঙচুর ও মাহদুদপুর বাদামতলার অঅব্দুল গফুরের ভাংয়ড়ির দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তবে আলীপুরের রফিকুল ইসলাম জানান, ৫ আগষ্ট রাত থেকে তারা বাড়ি ছাড়া হলেও বুধবার বাড়ি ফিরেছেন। আরো কয়েকটি পরিবার বাড়ি ফিরেছে।কালিগঞ্জ উপজেলার শ্রীধরকাটি গ্রামের শেখ রহমতুল্লাহ’র ছেলে শিখ ছিদ্দিকুর রহমান জানান, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর তাদের উপর হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন। রাত ১০টার দিকে তিনি ও তার ভাই শেখ সাদেকের পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন। সাড়ে ১০টার দিকে তিনি জানতে পারেন যে, একই গ্রামের আলাউদ্দিন, ফারজানা, সালাম শেখ, কালাম শেখ, তামিম শেখ, তারাবিন, রুহুল আমিনসহ ২৫/৩০ জন তার ও তার ভাই সাদেকের বাড়ির তালা ভেঙে ফেলে। নগদ টাকা, সোনার গহনা, বাড়ির ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ তার ২৫ লাখ ও সাদেকের ২০ লাখ টাকার মালামাল লুটপট শেষে বাড়িতে ভাঙচুর করে। চলে যাওয়ার আগে হামলাকারিরা প্রেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। মঙ্গলবার তারা বাড়িতে ফিরেছেন। বিষয়টি সেনা ক্যম্পে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।একই উপজেলার ভাঙানমারি গ্রামের রুস্তুম আলী পাড়ের ছেলে ইব্রাহীম পাড় জানান, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে তাদের উপর হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা করে ৬ আগষ্ট বিকেলে তিনি বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে আসেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সন্ন্যাসীর চকের মজিদ গাজী, কুমড়োরচকের আবু তালেব মোল্লা, আবুল কালাম, আব্দুর রহমান, গোলাম, কাজলার আব্দুস সালাম, কুদ্দুস, শাকিল, রাসেল, আলমগীর, রনি, ফয়জুল্লাহ ও ইন্দ্রনগরের আব্দুল বারীসহ ৩০/৩৫ জন তার বাড়িতে ঢোকে। তাকে না পেয়ে দরজার তালা ভেঙে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। বাড়ি থেকে ব্যংকের চেকের পাতা, সোনার গহনাসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। যাবার আগে তাকে (ইব্রাহীম) যেখানে পাবে সেখানে খুন করে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা সন্নাসীর চক বাজারে এসে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। দোকানে থাকা, নগদ টাকা, টিভি, ফ্রিজ, মুদিখানার মালামালসহ তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করা হয়েছে। এরপরও জীবনের ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)