নিজের গড়া ট্রাইব্যুনালেই বিচার হবে শেখ হাসিনার
অনলাইন ডেস্ক:
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ‘গণহত্যার’ বিচারের দাবি উঠে। প্রচলিত আদালতের বদলে ট্রাইব্যুনালে বিচার সম্ভব কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। আর এর মধ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তদন্তের আবেদন পড়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, যেটি তিনি নিজেই গড়ে ছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য।
বুধবার একই দিনে সহিংসতার ঘটনায় শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতে একটি হত্যাসহ দুই মামলার পর গণহত্যার অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়। এ আবেদনে তদন্তের কার্যক্রম এগোলে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নিজের গড়া ট্রাইব্যুনালেই বিচার হবে আওয়ামী লীগ সভাপতির।
এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও গুলির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হতে পারে। এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, যারা আদেশ দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।
এদিকে ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রবাসী সরকার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। আইন হয় ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই। আইনটির উদ্দেশ্যই ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা। তাই ট্রাইব্যুনালে বর্তমান সময়ে সংঘটিত অপরাধের বিচার হতে পারে না। ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার জন্য দণ্ডবিধি এবং সাক্ষ্য আইন প্রযোজ্য নয়। শুধু যুদ্ধাপরাধীর বিচারের উদ্দেশে এ বিধান রাখা হয়েছে। এসব কারণে ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারের যৌক্তিকতা নেই।
তবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে ৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে কী কী অপরাধের বিচার করা যাবে। এ অনুচ্ছেদের ২(ক) ধারায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক, বর্ণ বিদ্বেষ, জাতিগত কিংবা ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে কোনো বেসামরিক নাগরিকের ওপর হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, গুম, অপহরণ, নির্যাতনসহ অন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে। অপরাধ কখন সংঘটিত হয়েছে, তা আইনে বলা নেই। ফলে যেকোনো সময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ট্রাইব্যুনালে সম্ভব।