সাতক্ষীরাসহ দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ ও ৮ দফা দাবীতে শ্যামনগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
রঘুনাথ খাঁ:দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে ও হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের প্রতিবাদ ও ৮ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সনাতনী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকালে সনাতনী ছাত্র/ছাত্রী, যুব গণজাগরণ মঞ্চ ও অভিভাবক বৃন্দের আয়োজনে ৫ সহস্রাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট শ্যামনগর উপজেলা শাখা এতে অংশগ্রহণ করে। দুপুরের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নকিপুর সরকারি হরিচরণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। পরে তারা সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ডে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।সমাবেশ থেকে রাজবাড়ী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী পবিত্র মন্ডলের সভাপতিত্বে ঢাকা কলেজের নবেন্দু মণ্ডল, মুন্সিগনজ কলেজের গজেন্দ্র নাথ সরকার, শিক্ষক জয়দেব বিশ্বাস বলেন, ৫ আগস্ট রাত থেকে সারা দেশে বিভিন্ন পাড়ায়-মহল্লায় হিন্দুদের বাসাবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি করেন তারা।
সমাবেশে ‘সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিপাত যাক নিপাত যাক’, ‘হিন্দুদের উপর আক্রমণ কেন মানিনা মানবো না’, ‘পূর্বপুরুষের দেশ, এখানেই হব শেষ’, ‘স্বাধীন দেশে হুমকি কেন? শুনতে হবে দেশ ছাড়ো’, ‘দেশে যদি হয় স্বাধীন হিন্দু কেন পরাধীন’, ‘আমার মাটি আমার মা এই দেশ ছাড়বো না’, ‘দেশ তো হলো পূর্ণভূমি ছাড়বো কেন জন্মভূমি’, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছ’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা। ।
এ সময় আট দফা দাবি তুলে ধরেন সনাতন শিক্ষার্থীরা দাবিগুলো হলো-
১। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাপোযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ২। অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রনয়ন করতে হবে। ৩। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। ৪। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টিকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। ৫। ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা রুম বরাদ্দ করতে হবে। ৭। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড, আধুনিকায়ন করতে হবে। ৮। শারদীয় দুর্গাপুজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে।বক্তরা বলেন, আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা এ দেশের নাগরিক। এ দেশ থেকে আমরা অন্য দেশে যাব না। সকল ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে এই বাংলাদেশ সবার। স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। সংখ্যালঘুদের ওপর কেন হামলা করা হচ্ছে। আমাদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।