সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট অগ্নি সংযোগের প্রতিবাদ, জীবনের নিরাপত্তা ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ মিছিল

রঘুনাথ খাঁ: সাতক্ষীরাসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ, ক্ষতিপূরণ, হিন্দু সম্প্রদায়ের জীবনের নিরাপত্তা ও হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোডের মোড়ে সনাতনী ছাত্রজনতার ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমন্বায়ক মিলন বিশ^াস। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ , জেলা মন্দির সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ আমিন, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ব্রহ্মা মÐল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শ্রীজিৎ মÐল, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অরিন্দম মুখার্জী, সুমন সাহা প্রমুখ। বক্তারা বলেন, গত ৫ আগষ্ট বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আন্দোলনকারিদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মৌলবাদি গোষ্ঠী, বিএনিপি ও জামায়াতের নেতা কর্মীরা বেছে বেছে হিন্দু বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। তারা সাতক্ষীরা সদরের ঘোষপাড়া, ধুলিহর, ফিংড়ি, মহাদেবনগর, মাধবকাটি, ঝাউডাঙা, লাবসাসহ বিভিন্ন হিন্দু বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তারা কালিগঞ্জের কাকশিয়ালীর ব্যবসায়ি বরুন কুমার ঘোষ, ধলবাড়িয়ার স্বজল মুখার্জীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট শেষে প্রেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াই করছেন স্বজন মুখাজীর প্রতিবন্ধি বোন শ্যামলী মুখার্জী। কৃষ্ণনগরের গোবিন্দঘোষসহ কমপক্ষে ১০টি বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয়েছে। ডাকাতি ও লুটপাটে পাটে বাধা দেওয়ায় মাধাই ঘোষের দুই ছেলেসহ ছয়জনকে গুলি করে জখম করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোবিন্দ মÐলের বাড়ি। শ্যামনগরের পরানপুরের নিমাই রপ্তান, মুন্সিগঞ্জের অসীম মৃধা, বুড়িগোয়ানির ডালিম ঘরামী, সাবেক চেয়ারম্যান ভবতোষ মÐলসহ কমপক্ষে দুই শতাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয়েছে। তালার সনৎ কুমার ঘোষ, প্রণব ঘোষ বাবলর বাড়ি ও ধানদিয়ার পার্থ চক্রবর্তীর বাড়ি, পাটকেলঘাটার বিশ্বজিৎ সাধু ও কুমিরার বাসুদেব দাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তালার কমপক্ষে তিন শতাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আশাশুনির নাকতাড়া কালী মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। দরগাহপুর ইউনিয়নের খড়িয়াটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হোসেনপুর গ্রামের তারপদ সরকার ও একই বিদ্যালয়ের অবঃ প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার রাহা’র বাড়িতে হামলা , ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয়েছে।সব মিলিয়ে জেলায় দুই হাজারের বেশি সংখালঘুর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তিন হাজারের বেশি সংখ্যালঘুর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে। চাঁদা না পেয়ে গোয়াল থেকে গরু খুলে নেওয়া হচ্ছে। জবরখল করা হচ্ছে হিন্দুদের জমি, চিংাড় ঘের ও ব্যবসনা প্রতিষ্ঠান। অনেকেই স্বর্বস্ব হারানোর পর বা চাঁদা দিতে না পেরে আত্মগোপন করে আছেন। থানা পুলিশের কার্যক্রম না থাকায় এ সব ঘটনায় নামমাত্র কয়েকজন অভিযোগে জানিয়েই মনের আশা মিটিয়েছেন।ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। হামলার ভয়ে আত্মরক্ষায় পালিয়ে থাকা সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সকল সংখ্যালঘুদে ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করে বিচারিক কার্যক্রম দ্রæত করতে হবে। এ ছাড়া সংখ্যালঘু কমিশন গঠণসহ আট দফা দাবি করা হয়। আইনগত সুবিধা না পেলে হামলাকারিদের চিহ্নিত করে আইনশঙ্খলারক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
পরে খুলনা রোডের মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্কে যেয়ে শেষ হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)