কালিগঞ্জের ব্যবসায়ি বরুণ ঘোষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, মেশিনসহ দেড় কোটি টাকার মালামাল লুট

রঘুনাথ খাঁ ঃ প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরদিন প্রকাশ্য দিবালোকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য ও ব্যবসায়ি বরুন কুমার ঘোষের চাল মিল, মুড়ির মিল ও চালের গুদাম লুট করা হয়েছে। থানায় পুলিশের কোন কার্যক্রম না থাকায় গত ছয়দিন পরিবার পরিজন নিয়ে আত্মগোপনে থাকলেও লুটপাটকারিদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ফলে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই মিলে কর্মরত ২৫ জন শ্রমিক ও কর্মচারি।বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কোষাধ্যক্ষ বরুন কুমার ঘোষ জানান, ২০০৯ সাল থেকে কালিগঞ্জ হাসপাতাল সড়কের কাকশিয়ালীতে মা লক্ষী ভাÐার ও ও মা লক্ষী মুড়ির মিল এর পাশাপাশি ক্রাশ মিল (ভুট্টা), চিড়ার মিল ও রাইস মিল পরিচালনা করে আসছেন তিনি। মিল চালাতে তিনি স্থানীয় সোনালী ব্যাংকের শাখা ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। গত ৫ আগষ্ট বিকেল তিনটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেছেন মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তার নির্দেশে ম্যানেজার বাসুদেব ঘোষকে নির্দেশ দিলে তিনি রাত ৮টার দিকে কারখানা বন্ধ করে দেন। রাত ১১টার দিকে তিনি খবর পান যে তার চাল মিলের সামনের দুটি সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টি তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল গফুর, আক্তারুজ্জামান বাপ্পি, নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানসহ কয়েকজনকে মোবাইল ফোনে অবহিত করেন। এ সময় তার মিলে লুটপাট ও বাড়িতে হামলা করার আশাঙ্খার কথা বললে বিএনপি’র ওই নেতারা বিষয়টি দেখবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন। একপর্যায়ে মিল বন্ধ থাকা অবস্থায় ৬ আগষ্ট সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে কাঁকশিয়ালী ব্রীজের দক্ষিণ পাশ থেকে বিএনপির মিছিল শেষে ফিরে আসা শতাধিক ব্যক্তি সশস্ত্র অবস্থায় “মা লক্ষী ভাÐার” ও মা লক্ষী মুড়ির ভাÐারের শার্টারের তালা ভেঙে ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা মিলের ভিতরে থাকা ১০টি সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। এরপর তারা মিলে থাকা ৫০ কেজি ওজনের ৫০০ বস্তা আতপ চাল, ৫০ ও ২৫ কেজি ওজনের ৭০০ বস্তা ২৮ চাল, ৫০ কেজি ওজনের ১১০০ বস্তা মোটা চাল, ৩০০ বস্তা মিনিকেট, ২৫০ বস্তা (২৫কেজি) বাসমতি, ৩০০ বস্তা কাটা চাল ফ্রেশ ক্ষুদ) মুড়ি ভাজার জন্য ১৬, স্বর্ণা, হাইব্রিগেড চাল ৭৫০ বস্তা, ৩৫০ বস্তা গমের ভ‚ষি, ৭৫০ বস্তা আতপ (পালিশ) কুড়ার মতো, ৯০০ বস্তা কুড়া, ৭৫০ বস্তা ভুট্টা, ২০০ বস্তা ২৮ ধান, ৩০০ বস্তা মোটা ধান, ৩৫০ বস্তা নন বাসমতি ধান, ২৫০ বস্তা প্রেল্ট্রি ফিডসহ মুড়ির মিল, ক্রাশ মিল, চিড়ার মিল, রাইস মিল, একটি টিউব ওয়েল, ১৭টি মটর, লোহার সিন্ধুকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। হামলাকারিরা বৈদ্যুতিক মিটারের কাট আউট ছাড়িয়ে তারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এ দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখেন কয়েকজন বিএনপি নেতা। তার এ মিলে কাজ করে ২৫জন কর্মচারি ও শ্রমিকের রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়। হামলাকারিরা বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। ফলে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে আত্মগোপন করে রয়েছেন। পুলিশের কোন কার্যক্রম না থাকায় গত ৯ আগষ্ট তার শ্যালক বাপ্পি ঘোষ সেনা ক্যাম্পে একটি অভিযোগ করেছেন। শনিবার দুপুর একটা পর্যন্ত কোন সেনা সদস্য ঘটনাস্থলে আসেননি।
সরেজমিনে শনিবার সকালে কালিগঞ্জের কাঁকশিয়ালী গ্রামে গেলে আমিয়ান গ্রামের তেজেন্দ্র নাথ ঘোষ বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যা ঘটেনি এবার তাকে নতুন কিছু দেখতে হলো। বরুনের দুই কোটি টাকার মালামাল লুট হয়েছে। তারাও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। নতুন সরকারের কাছে তিনি আকুতি জানাবেন যে, তাদের জীবনে না মেরে ও ধমীয় অনুভুতিতে আঘাত না করে স্থাবর সম্পত্তি ফেলে অস্থাবর সম্পদ নিয়ে যাতে দেশ ত্যাগ করার সূযোগ দেন।মা লক্ষী ভান্ডার এর ক্যাশিয়ার শেখর চন্দ্র ঘোষ বলেন, শুধু তাদের কারকানায় নয়, উপাজেলার অনেক হিন্দু বাড়িতে লুটপাট হচ্ছে, অগ্নিসংযোগ হচ্ছে। জীবনের পরিবর্তে চাওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। হয় টাকা দিয়ে জীবন বাঁচাও, নইলে ভারতে যাও এমন পরিস্থিতি। এমন অবস্থা চলতে থাকে এলাকার অনেক পরিবার খুব শীঘ্র দেশ চেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবেন বলে তিনি মনে করেন। দ্রæত মিল চালু না করা গেলে তাদের কারখানায় কর্মরত ২৫জন শ্রমিক কর্মচারীকে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।
মা লক্ষী ভাÐারের ম্যানেজার বাসুদেব ঘোষ জানান, এ ধরণের বর্বরতায় মালিক বরুন ঘোষের দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ সময় ঋণের কিস্তী নিতে আসা এক এনজিও এর মাঠ কর্মীকে দেখিয়ে বলেন, তাদের কিস্তী দেবো কি করে? মিলের প্রায় সব কিছুই লুটপাট হয়ে যাওয়ায় আবার কবে থেকে ব্যবসা শুরু করা যাবে তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।
বাসুদেব ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের উদ্যোগে গত দুই দিনে মুড়ির চাউল, পালিশ,ভ‚ষি ও কুড়া মিলে ৩০ বস্তার মতো উদ্ধার করে তাদের কারখানায় নিয়ে আসা হয়েছে। অথচ ওই লুটপাটকারিরা ওইসব নেতাদের পরিচিত হলেও তাদের নাম জানতে পারেননি তিনি। দেড় থেকে দুই কোটি টাকার মালামাল ক্ষতি হলেও দোষ ঢাকতে নামমাত্র চাল ,ভ‚ষি উদ্ধার দেখিয়ে ফেইস বুকে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোঃ আক্তারুজ্জামান বাপ্পি জানান, তিনি ও তার দল অহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাসী। ৫ আগষ্ট রাতে বরুন ঘোষ তার মিল লুট হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাকে অবহিত করলে তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। ৬ আগষ্ট কাকশিয়ালী নদীর দক্ষিণ পাশে সমাবেশ শেষে তিনি প্রায় বাড়ির কাছে পৌঁছালে খবর পেয়ে বরুনের মিলের সামনে যান। তখন ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেন তিনিসহ নজরুল, জিন্নাতসহ কয়েকজন। এ সময় তিনি ও নজরুল আহত হন। যারা লুটপাট করছিল তাদেরকে তিনি চেনেন না। তবে বরুনের মাইকিং করে বরুনের কিছু চাল ও ভ‚ষি উদ্ধার করেছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাস দীপু জানান, বরুন ঘোষের মিল ভাঙচুর ও লুটপাটের ব্যাপারে তিনি জেনেছেন। বিষয়টি তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)