মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বরকে কেন শহীদ আসিফ চত্ত্বর বলা হচ্ছে?

স্টাফ রিপোর্টার : সাতক্ষীরা শহরের খুলনা মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালের চত্বরটির স্বীকৃত নাম ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্ত¡র’। অথচ সেই মুক্তিযোদ্ধা চত্ত¡রের নাম ‘শহীদ আসিফ চত্ত¡র’ বলে দাবি করছে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। শনিবার মিছিল শুরু করার আগে তারা শহীদ আসিফ চত্ত¡র লেখা বড় একটি ব্যানার নিয়ে সেখানে আসে।প্রশ্ন হলো, মুক্তিযোদ্ধা চত্ত¡রটিকে কেন তারা শহীদ আসিফ চত্ত¡র বলে দাবি করছে? একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেলো ভয়াবহ তথ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে যারা মারা গেছে তারা অনেক আগের। অথচ সাম্প্রতিককালে কোটা আন্দোলনে যারা মারা গেছে তাদের স্মরনে কিছু করা দরকার। এজন্যই তাদের এই উদ্যোগ’।অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্ত¡রের বাউন্ডারি দেয়া আছে। এর বাইরের জায়গাটি অর্থাৎ মোড়ের মাঝখানের জায়গাটি শহীদ আসিফ চত্ত¡র হবে’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ‘এই আন্দোলনটি মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিপক্ষে করা হয়েছিলো। তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না’।উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার দেবহাটার আসিফ নামের এক ছাত্র ঢাকায় কোটা আন্দোলন করতে গিয়ে নিহত হয়।কোটা আন্দোলনকারীরা প্রথমে আট দফা, পরে নয় দফা এবং সর্বশেষ এক দফার দাবিতে আন্দোলন করছেন। এত ঘন ঘন দাবি পরিবর্তন করে সরকার পতনের আন্দোলন চাওয়া বিশ্বে বিরল।এখন কথা হলো, এই যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে তাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বা ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়টির প্রতি এত ঘৃনা বা বিদ্বেষ কেন ?এ বিষয়ে জেলার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ছিলো মাত্র ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ পাকিস্তান রাষ্ট্র চেয়েছিলো। এদের বিরুদ্ধে আমরা ৭১ সাল থেকে এখন অবধি লড়ছি। এই ৭০ শতাংশ পাকিস্তানপন্থীরা বংশবিস্তার করেছে। তাদের ছেলেমেয়েরা আজ সংখ্যায় কয়েকগুন বেড়েছে। আর এ কারনেই মুক্তিযোদ্ধা বা স্বাধীনতার স্বপক্ষের কোন শক্তি দেখলে এরা তার বিরোধিতা করে’।এদিকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে মানুষ কেন শত্রæ ভাবছে- এমন প্রশ্ন করা হয় জেলার বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে। তারা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন সত্তে¡ও মানুষ আওয়ামীলীগের সাথে থাকেনি। এর কারন হলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে মানুষ জানেনি কিংবা বোঝেনি। যদি মানুষের মধ্যে ঢুকে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানানো হতো তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। কারন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জামায়াত ও বিএনপি অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। সেসব তথ্য মানুষ বিশ^াস করেছে। এসব ব্যাপারে সরকার তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া আওয়ামীলীগও এজন্য দায়ী। কারন যেসব শক্ত মেরুদন্ডী নেতা আওয়ামীলীগের হাল যখনই ধরতে চেয়েছেন, তখনই তাকে ‘প্যাকেট’ করা হয়েছে, তাদেরকে নিয়ে বড় নেতারা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছেন, পাগল বলেছেন। এসব কারনে আওয়ামীলীগের ভিত দুর্বল হয়েছে। দেশে আজকের এই দুর্দিনে সেইসব বড় নেতার খোজ পাওয়া যাচ্ছে না’।
এদিকে শহীদ রাসেল চত্ত¡রটি অন্য কোথাও বানানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন জেলার সুশীল ব্যক্তিবর্গ। তারা বলেছেন, ‘৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে গড়া দেশে মুক্তিযোদ্ধা চত্ত¡রের নাম রাতারাতি বদলে ফেলা চ‚ড়ান্ত আহাম্মকির লক্ষন। শহীদ রাসেল চত্ত¡র অন্য জায়গায় বানানো হোক, এখানে নয়’।সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ আরও বলেছেন, ‘আওয়ামীলীগের নেতারা জামায়াত ও শিবিরকর্মীদের বিভিন্ন সময় আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে চরম ভুল করেছেন। আজ তারা ডালপালা গজিয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে। এছাড়া আওয়ামীলীগ সরকার জঙ্গি ও মৌলবাদ কঠোর হস্তে দমন করতে পারেনি বলেই আজ এই অবস্থা’।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)