বড়দল আফতাবউদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত
জি এম মুজিবুর রহমান ঃ আশাশুনি উপজেলার বড়দল আফতাব উদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন, কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও এলাকাবাসীর তীব্র প্রতিবাদের মুখে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার (৩ আগস্ট) নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল। এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভের আগুন জ্বলজ্বল করছিল। কলেজ এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পর কলেজে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলার এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবলুর রহমান পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ প্রদান করেন। যাতে অনিবার্য কারণ বশত পরীক্ষা স্থগিত করার কথা উল্লেখ করা হয়। নোটিশ প্রদানের পর এলাকার মানুষের চোখেমুখে আনন্দের ছায়া দেখা যায়।
উল্লেখ্য, নিয়োগ বোর্ড বাবাতিলের দাবী শুক্রবার (২ আগস্ট) কলেজিয়েট স্কুলের সামনের সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মুকুল সানা, পিটিএ সভাপতি আলমগীর সানা, অভিভাবক সদস্য হাবিবুর সানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী সরদার সহ অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া কলেজিয়েট স্কুলের অবিভাবক সদস্য মুকুল সানা বাদী হয়ে গত ৮ জুলাই আদালতে মামলা করেন। মামলা চলমান অবস্থায় অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মাধ্যমে নিয়োগ বোর্ড বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন করেন। আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম ও বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ সানা ঐ দরখাস্তে সুপারিশ জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। আদালতে মামলা চলমান, বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলন ও এলাকাবাসীর মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচির পরও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অবৈধ অধ্যক্ষ ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব বাবলুর রহমানের মাধ্যমে নিয়োগ বোর্ড পাতানোর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন বলে জানাগেছে। নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবীতে আবেদনকারী ও অভিভাবক সদস্য মুকুল সানা জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্যের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৫ ফেব্রুয়ারি ২৪ তারিখে ৩৭.০০.০০০. ০৭৪.০০২.০০১.২০২১.৫১ নং স্মারকে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার অর্পন সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রে বলা হয় প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মাধ্যমিক হলে সহকারী প্রধান শিক্ষককে (গ্রেড ৮) প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অর্পন করা যাবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উক্ত পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৩ নং সিরিয়ালের জুনিয়র প্রভাষক বাবলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৩৭.০২.৪৭০০.০০০.০১.০০১.১৭.১৯৮৩ নং স্মারকে পরিচালকের কার্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগ বাণিজ্যের মিশন বাস্তবায়নে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ৫-৬টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই টাকা হজম করার জন্য পাতানো নিয়োগ বোর্ড সম্পন্নের প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়। এমনকি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১০ জানুয়ারি ৩৭. ০০. ০০০. ০৭৪. ০০২. ০০২. ২০১৬. ০৬ নং স্মারকের পরিপত্রের ২.২ নং ক্রমিক অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও সম্ভাব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি ব্যাপক প্রচার করার কথা ও ২.৩ নং ক্রমিকে আবেদন পত্র যাচাই বাচাইয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও তা যথাযথ ভাবে করা হয়নি। এছাড়া উক্ত অনিয়মের বিষয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে যার মামলা নং, দেং-১৪৮/২৪। তিনি আরো বলেন নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ল্যাব সহকারী পদে বাইনতলা গ্রামের মিহির রঞ্জন সরকারের কাছ থেকে ১৪ লাখ, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে বড়দল গ্রামের দিপীকা রানীর কাছ থেকে ১২ লাখ, ল্যাব সহকারী পদে বুড়িয়া গ্রামের খগেন্দ্র নাথের ছেলের থেকে ১০ লাখ, ল্যাব সহকারী পদে কিনুকাটি গ্রামের দীপঙ্কর ঢালীর ছেলের থেকে ১০ লাখ, সহ: প্রধান শিক্ষক পদে কৃষ্ণনগর গ্রামের কাজল সরকারের কাছ থেকে ৮লাখ, অফিস সহায়ক পদে বড়দল গ্রামের আশরাফুল শেখের কাছ থেকে ১৪ লাখ ছাড়াও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পাওয়া বাবলুর রহমান কর্তৃক নিয়োগ বানিজ্য ও পাতানো নিয়োগ বোর্ড বন্ধের জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডাঃ মোখলেছুর রহমান জানান, “নিয়োগ বোর্ডে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল সহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। নিয়োগ বোর্ডে কোনরূপ অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। শতভাগ সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন হবে।
Please follow and like us: