গণভবনের দরজা খোলা: প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক:
দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করছে সরকার। এজন্য তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। ভেবেচিন্তে পা ফেলতে চাইছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে মনোযোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এমনটা জানিয়েছেন।
খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।
শনিবার দুপুরে গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গণভবনের দরজা শিক্ষার্থীদের জন্য সব সময় খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। সব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। আমি আর সংঘাত চাই না।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রস্তাবিত পেনশন ব্যবস্থা ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চাচ্ছি দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আসুক। দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমদানি-রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চাচ্ছেন যা-ই হয়েছে— এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। কিছু উসকানিদাতার জন্য অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেওয়া যায়, তা নিয়ে দল ও সরকারের অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত আলোচনা চলছে। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিষয়ে তারা জনগণের মুখোমুখি হয়নি। বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণ একাত্ম হয়ে নানা ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এবারই প্রথম দেশের নানা দল-মতের মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নেমেছে। কেন এমনটা ঘটছে, তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে নানা বিশ্লেষণ চলছে।
কীভাবে বিক্ষুব্ধদের শান্ত করা যায়, সে বিষয়ে কার্যকর পথ খোঁজা হচ্ছে।
ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের নেতাকর্মীদের সহনশীল থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে কেউ যেন সহিংসতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সংগঠনের ঘর গোছানোকেও বড় কাজ মনে করছি। সে কাজগুলোও আমরা করছি।
দলীয় একাধিক সূত্র মতে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মুখোমুখি কোনো সংঘর্ষে যেতে চায় না আওয়ামী লীগ। তবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ফলে তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সহিংসতার চেষ্টা করতে পারে। এ কারণে রাজপথে বড় জমায়েতের কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দেখাতে চায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা যেন বড় জমায়েত নিয়ে শোকযাত্রায় আসেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
একাধিক সূত্রমতে, আন্দোলন নিরসনে শিক্ষার্থীদের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে যে এই আন্দোলনের ওপর ভর করে একটি মহল দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। যেহেতু কোটা সংস্কারের মূল দাবি পূরণ হয়েছে, সে কারণে এ আন্দোলন যেন প্রত্যাহার করা হয়, সে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
দলীয় একাধিক নেতার মতে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টার অংশ হিসেবে আন্দোলনকালে সহিংসতা, নাশকতার ঘটনার মামলায় যারা জড়িত নয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো হয়রানিমূলক ব্যবস্থা না নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থী যেসব শিক্ষার্থী গ্রেফতার হয়েছিল, তাদের জামিন ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করছে সরকার।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা অন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের শিক্ষার্থীদের নেতাদের সঙ্গে বসে আলাপ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিন মন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে। আলোচনা চালু রাখার জায়গাটা এখনো আছে, সেটা কিন্তু নষ্ট হয়নি। প্রধানমন্ত্রীও তাদের সঙ্গে বসে কথা বলতে পারেন। আমরা চাই দেশে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় থাকুক। শান্তি ফিরিয়ে আনাটাই এখন আমাদের বড় কাজ। ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই ঘটনা কাঙ্ক্ষিত ছিল না। যা ঘটেছে সেটা সবার জন্যই দুঃখজনক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা দেশের তরুণসমাজকে নিয়ে কাজ করব। তারাই দেশের ভবিষ্যৎ। আমরা পুনরায় তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই।
দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও পক্ষে আনার চেষ্টা করছে সরকার। আন্দোলনকালে হতাহতের বিষয়ে নানা অতিরঞ্জিত প্রচারণার বিষয়টি বিদেশিদের কাছে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। সরকারের দিক থেকে নানা তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। এমনকি আন্দোলন চলাকালে নিহতদের বিষয়টির সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের আওতা বাড়ানো হয়েছে। তিনজন বিচারপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে জাতিসংঘসহ যেকোনো দেশ কিংবা সংস্থা চাইলে যোগ দিতে পারে। সরকার তাকে স্বাগত জানাবে।