জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন যে কোনো সময়

ডেস্ক নিউজ:
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল ও সুশীল সমাজ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে বলে আসছিল। এটা সাধারণ মানুষেরও দাবি ছিল। ১৪ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মিটিং হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছেন, মতামত নিয়েছেন। তারা সবাই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার মতামত দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি মামলার রায়েও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বলা হয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এটার প্রক্রিয়া চলছে। এটা এখনও প্রক্রিয়াধীন। প্রক্রিয়া শেষ হলেই জানতে পারবেন।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদে এরকম একটি সুযোগ আছে। এটার কাজ চলছে, যে কোনো সময়েই আসবে। ১৪ দল, সুশীল সমাজ, আমাদেরও রাজনৈতিক ডিমান্ড, অতিসম্প্রতি যে ঘটনাগুলো হয়েছে তাতে জামায়াতের ইন্ধন আছে। সব কিছু মিলিয়েই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যে কোনো সময় আসবে, আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করব।’

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংসতার পেছনেও জামায়াত–শিবিরের কর্মীদের হাত আছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও সহিংসতা থামছে না। ছাত্ররা কখনোই এতটা ধংসাত্মক হতো না, যদি না তাদের পরামর্শদাতারা ধংসাত্মক হতো। ছাত্ররা তো এটা করেনি। তাদের সামনে রেখে করেছে জামায়াত–শিবির, বিএনপি ও অন্যান্য জঙ্গিরা। এটাই আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’

গত সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরদিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে বুধবারের মধ্যে নির্বাহী আদেশ জারি করা হতে পারে।

একই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছিলেন।

এদিকে, নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান দাবি করেন, ১৪ দলের সভায় দলটিকে নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বেআইনি।

এদিকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে দলটির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবি, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতেই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। আর শিবিরের আগের নাম ছিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের পূর্ব লগ্নে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার জন্য এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সরাসরি দায়ী করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় দলটির সাবেক বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে। অনেকের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে পঁচাত্তরে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর রাজনৈতিক নানা পট পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় জামায়াত।

২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে দলটির কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান। যা নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।

২০১৩ সালের ১ অগাস্ট হাইকোর্টের এক রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে। ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার হারায়। তবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও রাজনীতির মাঠে তাদের সক্রিয় দেখা গেছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যে পর্যায়ে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এর জন্য সরকার জামায়াত ও শিবিরকেই দায়ী করছে। এই সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু হতাহত হন। সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা ১৫০ আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশজুড়ে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৬৬ জন।

সরকারের দাবি, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াত–শিবিরের নেতাকর্মীরা ছদ্মবেশে প্রবেশ করে সহিংসতা উসকে দেয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি, বনানীর সেতুভবন, মহাখালির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, মেট্রোরেল স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)