ঢাবির হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা

ডেস্ক নিউজ:
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বেশ কয়েকটি হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে কয়েকটি নির্দেশনাও।

বুধবার (১৭ জুলাই) মধ্যরাত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে শহীদুল্লাহ হল‌, ফজলুল হক মুসলিম হল, অমর একুশে হল, রোকেয়া হল, মহসীন হল, কুয়েত মৈত্রী হল, জহুরুল হক হল, শামসুননাহার হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও সুফিয়া কামাল হলের নাম।

এর মধ্যে বুধবার দিবাগত রাত দেড়টায় ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা একযোগে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাদের লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফারহানা বেগম।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হলো উল্লেখ করে অঙ্গীকারনামায় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সাধারণ শিক্ষার্থী এই মর্মে লিখিত নিচ্ছি যে, আজ ১৭. ০৭. ২০২৪ থেকে বঙ্গমাতা হলে কোনো রাজনৈতিক গণরুম থাকবে না এবং কোনো ধরনের রাজনৈতিক (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্রফ্রন্ট, জামায়াত, শিবির) ইত্যাদি দল ও তাদের কার্যক্রম থাকবে না। আমরা হলের মেয়েরা যদি এসব দলের দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই তাহলে এই দায় প্রশাসন ও হল প্রভোস্টকে নিতে হবে।

একই সময়ে বেগম রোকেয়া হলকেও সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নিলুফার পারভীন।

অঙ্গীকারনামায় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা রোকেয়া হলের মেয়েরা আজ এই মর্মে লিখিত নিচ্ছি যে, আজ ১৭-০৭-২০২৪ তারিখ থেকে রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের ছাত্র রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল, জামাত-শিবির ইত্যাদি) নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল রুম বা গণরুম থাকবে না, কোনো পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম হলে হবে না, কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা হলের সাথে থাকবে না। আমরা হলের মেয়েরা যদি এসব দলের দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে এই দায় প্রশাসন ও হল প্রভোস্টকে নিতে হবে।

এরপর রাত সাড়ে ৩টায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা আসে কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নো চৌধুরী এ সংক্রান্ত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন।

অঙ্গীকারনামায় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কবি সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই মর্মে লিখিত নিচ্ছি যে, আজ ১৭ জুলাই রাত ২টা ৪০ মিনিট থেকে কবি সুফিয়া কামাল হলে কোনো প্রকার ছাত্র রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল, শিবির) ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পৃক্ততা হলের সঙ্গে থাকবে না। আমরা হলের মেয়েরা যদি এসব দলের দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে এই দায় প্রশাসনের।

এ সময় কবি সুফিয়া কামাল হল শিক্ষার্থীরা দাবি জানায়, সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের গণরুম বিলুপ্ত করতে হবে। পলিটিক্যাল গণরুমের মেয়েদের যত দ্রুত সম্ভব লিগ্যাল সিট দিতে হবে।

অঙ্গীকারনামায় শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, আজ থেকে কবি সুফিয়া কামাল হলে কোনো রকম রাজনীতি থাকবে না- এই প্রত্যয়ে আজ থেকে আমাদের দাবি কার্যকর করতে হবে। আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকবো।

একই সময়ে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হয় শামসুন নাহার হলকেও। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারনামায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়। লিখিত অঙ্গিকারনামায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি জানানো হয়।

সেগুলো হলো:

১. শামসুন নাহার হলে কোনো ধরনের দলীয় রাজনীতি চলবে না।
২. সেসব ছাত্রীর হলে অবস্থানের মেয়াদ শেষ, তাদের অতি দ্রুত ছল ছাড়া করতে হবে এবং অছাত্রদের সিটে অতিদ্রুত মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দিতে হবে।
৩. কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এবং আজকে রাতে অবস্থান নিয়েছে, সেই প্রত্যেক ছাত্রীর হলের সিট এবং শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে।
৪. পরবর্তীতে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কোনো ছাত্রীকে হেনস্থার শিকার করা হবে না।
৫. কোনো ধরনের পদ-ক্ষমতার প্রদর্শন ঘটিয়ে কোনো অন্যায্য সুযোগ-সুবিধা কোনো ছাত্রীকে দেওয়া যাবে না।
৬. প্রত্যেক ছাত্রীকে মেধার ভিত্তিতে অথবা উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে হলের সিট বরাদ্দ দিতে হবে এবং সমান সুযোগ প্রদান করতে হবে।
৭. শানসুন নাহার হলে ছাত্রলীগের সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনাকারী মেয়েরা মুচলেকা দিয়ে বের হতে হবে যে, তারা কখনো হলে ফিরবে না এবং হলের বাইরে থেকে কোনোরকম রাজনৈতিক পরিচালনা করার চেষ্টা করবে না।
৮. মধ্যভবন দ্বিতীয় তলার মেয়েদের রুম পরিবর্তন করে দিতে হবে।

ভোর ৫টার দিকে একই ঘোষণা আসে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকেও। হলের প্রোভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে হলের শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সেগুলো হলো:

১. শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে স্থায়ীভাবে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো।
২. কোনো বহিরাগত হলে অবস্থান করতে পারবে না।।
৩. শিক্ষার্থী কোনও প্রকার ক্ষতির (শারীরিক ও মৌখিক) সম্মুখীন হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৪. প্রশাসনিকভাবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫. হলের সকল ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আজ বুধবার (১৭ জুলাই) গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি পালন করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)