কালিগঞ্জে চলছে নিরঞ্জন ঘোষের জমি জবরদখলের মহোৎসব
রঘুনাথ খাঁঃ ধর্মান্তরিত ছেলের স্ত্রী রুবিনার পক্ষ নিয়ে বৃদ্ধ নিরঞ্জন ঘোষের জমি জবরদখলের মহোৎসব চলছে। কাগজপত্র বিহীন জমি দখলে রাখতে কবরস্ত করা হয়েছে এক নারীর লাশ। সাংবাদিক বা আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার লোকজন আসার খবর পেলেই ছুঁটে আসছেন কুয়েতে থাকা আব্দুর রহমানের স্ত্রী রুবিনার সহোচররা। চলছে প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি। এ চিত্র সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপাজেলার রতনপুর ইউনিয়নের বন্দিপুর গ্রামে।সরেজমিনে রবিবার সকালে কালিগঞ্জ উপজেলার বন্দিপুর গ্রামে যেয়ে দেখা গেছে মৃত ভ‚পতি ঘোষের ছেলে নিরঞ্জন কুমার ঘোষের রেকডীয় প্রায় সাত শতক জমিতে প্রাচীর নির্মাণ করে বসবাস করছেন কমপক্ষে ২২ বছর আগে আব্দুর রহমান বনে যাওয়া নিরঞ্জন ঘোষের ছেলে শংকর ঘোষ এর স্ত্রী রুবিনা খাতুন। দুই বছর আগে নিরঞ্জন ঘোষের নির্মাণাধীন ঘর দখল করে নেওয়ার পর সেটি ব্যয়বহুল বাড়িতে পরিণত করা হয়েছে। প্রাচীর মধ্যে থাকা আট শতক জমিতে আব্দুর রহমানের বিবাহিত মেয়ে দুলাবালা গ্রামের মনিরুলের স্ত্রী ২০২৪ সালের ১১ মে আত্মহননকারি শারমিনের লাশ জোরপূর্বক কবরস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কথা অমান্য করে নিরঞ্জন ঘোষের বিক্রি করা রহিমা ও ফতেমার ১৩ বিঘা জমির একাংশ দখলে রেখেছেন রুবিনা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর মনিরুল তার ১১ মাসের বাচ্চাকে নিয়ে শ্বশুড়ি রুবিনার সঙ্গে একই ভবনে থাকেন। সাংবাদিকদের আসার খবর পেয়েই ছুটতে ছুটতে চলে আসেন পীরগাজন গ্রামের মহাতাবউদ্দিন সরদারের ছেলে মোক্তাদের সরদার, একই গ্রামের মোঃ বাহাউদ্দিন গাজীর ছেলে সুজন গাজী ও আব্দুর রউফ গাজীর ছেলে আসাদুর রহমান গাজী। রুবিনার বাড়িতে ঢোকার আগেই সুজন গাজী ও আসাদুর রহমান গাজী বলেন, রুবিনার স্বামী আব্দুর রহমান কুয়েতে থাকেন। স্বামীর অবর্তমানে রুবিনাকে দেখাশোনার দায়িত্ব তারাই করে থাকেন। শংকর ঘোষ ধর্মান্তরিত হওয়ার পরও ছেলের অধিকার নিয়ে বাবা নিরঞ্জন ঘোষের জমিতে ঘর করে কুয়েতে চলে গেছেন। সেখান থেকে টাকা পাঠান রহমান। রুবিনা ও তার স্বামীর পক্ষে কোন জমির কাগজপত্র না থানার পরও ওই জমিতে দ্বিতীয়বার পা রাখার চেষ্টা করলে এক বছর আগে জীবন বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে দেবহাটার বড় জামাতার বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া নিরঞ্জন ঘোষকে কোনদিনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এলাকার নব্বই শতাংশ মুসলিম এখন নবমুসলিমের পক্ষে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দীপুর ও পীরগাজন গ্রামের কয়েকজন জানান, আব্দুর রহমান ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে কুয়েতে অবস্থান করার সুবাদে শ্বশুড়ি রুবিনাকে দেখভাল করার সুবাদে সম্পর্ক মধুর হয় জামাতা মনিরুলের। এটা বুঝতে পেরে মেয়ে শাহানারা মায়ের উপর অভিমান করে ২০২৪ সালের ১১ মে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সেটা মনিরুলের পক্ষে শাপে বর হলেও রুবিনার পাশে সুজন ও আসাদুলসহ কয়েকজনের সরব উপস্থিতি তাকে কিছুটা নিরাশ করেছে। সুজন, আসাদুর, ২০১২ সালে চাকদহে আটটি হিন্দু বাড়িতে লুটপাট ও পুড়িয়ে ছাঁই করে দেওয়া সাবেক ইউপি সদস্য মাসুম বিল্লাহ সুজন, মান্নান গাজী, আড়ংগাছা গ্রামের সাঈদুর রহমান, আব্দুস সামাদ গাজী, সেলিম গাজী, রউফ গাজী মনিরুল ইসলাম, সুমন গাজী, দুলাবালা গ্রামের মনিরুজ্জামান মনির, ডিউক সরদারসহ একটি মহল নিরঞ্জন ঘোষের সম্পদ ও জীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ।
নিরঞ্জন ঘোষের স্ত্রী সাধনা ঘোষ জানান, কাকা শ্বশুর সত্যচরণ ঘোষের জমি ২০ বছর আগে কিনলেও কাশেম গাজীর ছেলে মান্নান গাজী এক সপ্তাহ আগে তাদের বাড়ির সামনের শিবমন্দির সংলগ্ন ১০ শতক জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে খোটা পুতে দখলে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। মন্দিরের জমি জবরদখল না করার শর্তে তার স্বামীর কাছ থেকে মান্নান গাজী নিয়েছে ২০ হাজার টাকা। রাতের আঁধারে কোন এক সময়ে শিবমুর্তি ভেঙে ফেলে ঘরবাড়ি বানিয়ে জবরদখল করবেন মান্নান গাজী। ক্ষোভের সঙ্গে সাধনা ঘোষ বলেন, এ যেন হিন্দু সম্পত্তি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। দেশে আইন ও প্রশাসন বলে কিছু নেই।
নিরঞ্জন ঘোষ জানান, জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে তিনি প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। জমি উদ্ধার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন। অতিরিক্ত ম্যাষ্ট্রিট আদরতে করেছেন মামলা। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্্েরট বিষ্ণুপদ পালের নির্দেশে সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) নিরঞ্জন ঘোষের মালিকানাধীন ও রেকডীয় জমিতে রুবিনা ও আব্দুর রহমান বসবাস করছেন বলে দাবি করলেও তাদেরকে উচ্ছেদ করে দেওয়ানী আদালতের দারস্ত হতে পরামর্শ দিয়েছেন। স্ত্রী সাধনা ঘোষ বন্দিপুরে নিরাপদ নয় বলে দাবি করেন তিনি।
শ্যামনগরের রামজীবনপুর গ্রামের সাঈদুর রহমান জানান, ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ রহিমা ও ফতেমার নামে দুটি রেজিষ্ট্রি কোবালা দলিল মূলে প্রায় ১৩ বিঘা জমি বিক্রি করেন নিরঞ্জন ঘোষ। এরপর সেখানে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন তারা। কিন্তু রুবিনা তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তাদের কয়েক বিঘা জমির ঘের জবরদখলে রেখেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কথা মানছেন না রুবিনা।
এ ব্যাপারে রুবিনা খাতুন জানান, তার শ্বশুরের মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে তারা সেখানে ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। মেয়ের লাশ কবর দিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্্েরট আদালতে মামলা করে তদন্ত প্রতিবেদন তাদের পক্ষেই দিয়েছেন তহশীলদার। এখন জামাতাসহ স্থানীয় কয়েকজন তার উপর অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করায় তাকে জড়িয়ে নানা কল্পকাহিনী রটানো হচ্ছে। তবে জমি সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র তাদের নাই বলে স্বীকার করেন রুবিনা।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও উপপরিদর্শক নকীব পান্নু জানান, নিরঞ্জন ঘোষের অভিযোগ পেয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। শান্তির স্বার্থে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসাবসির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।