কলম্বিয়াকে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ পেল আর্জেন্টিনা

স্পোর্টস ডেস্ক:
মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল। বাকি ছিল শিরোপা উৎসবের। কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারিয়েছে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছে আর্জেন্টিনা। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলো তারা। আর টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬ বার শিরোপা ঘরে তুলেছে আলবিসেলেস্তেরা।

মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নেমেছিল ২৩ বছর পর ফাইনালে ওঠা কলম্বিয়া। তবে ম্যাচটিতে ১-০ গোলে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে নেস্টর লরোঞ্জোর শিষ্যরা। আলবিসেলেস্তেদের হয়ে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেছেন লাউতারো মার্টিনেজ।

এই জয়ে শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ পেয়েছে আর্জেন্টিনা। একটানা তিনটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছে তারা। দুটি মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের সঙ্গে সবশেষ বিশ্বকাপও জিতেছে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।

ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণে যায় টুর্নামেন্টের আর্জেন্টিনা। ম্যাচের প্রথম মিনিটে গঞ্জেলো মনটিয়েলের ক্রস থেকে জুলিয়ান আলভারেজের হেড গোলবারের বাঁ-পাশ মিস করে বাইরে দিয়ে চলে যায়। এরপর পঞ্চম মিনিটে লুইস দিয়াজ ও ১৩ মিনিট কার্লোস কুয়েস্টা কলম্বিয়ার হয়ে দুটি আক্রমণ করে।

২০তম মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে বাঁ-পায়ে শট নেন লিওনেল মেসি। তবে মেসির শট তালুবন্দী করেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক কামিলো ভার্গাস। ৩২তম মিনিটে দারুণ একটি আক্রমণ করে কলম্বিয়া। আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা সেটি ব্লক করে দিলেও কর্নার পেয়ে যায় কলম্বিয়া। তবে কর্নার কিক থেকে বল তালুবন্দি করে নেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।

এর মিনিট তিনেক পর ফের আক্রমণে ওঠে আর্জেন্টিনা। ডি-বক্সের ভেতরে কলম্বিয়ার ডিফেন্ডারদের ড্রিবলিং করে বল নিয়ে আগানোর চেষ্টা করছিলেন মেসি। শেষ পর্যন্ত আর লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি। বল চলে যায় মাঠের বাইরে। চোটও পেতে হয় মেসিকে। তবে মাঠ ছেড়ে যাননি তিনি।

জয়সূচক গোল করে মেসিকে জড়িয়ে উচ্ছ্বাস করছেন লাউতারো মার্টিনেজ। ছবি- সংগৃহীত
জয়সূচক গোল করে মেসিকে জড়িয়ে উচ্ছ্বাস করছেন লাউতারো মার্টিনেজ। ছবি- সংগৃহীত

৪০তম মিনিটে রড্রিগেজের ক্রস থেকে হেড নেন কলম্বিয়ার জন আরিয়াস। তবে ডানপাশ দিয়ে বল চলে যায়। ৪২তম মিনিটে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। সেখান থেকে কিক নেন মেসি। ডি-বক্সের ভেতর আর্জেন্টিনার নিকোলাস ত্যাগলিয়াফিকোর হেড চলে যায় গোলবারের উপর দিয়ে। অবশেষে গোল না করেই বিরতিতে যেতে হয় দুই দলকে।

দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমেই আক্রমণ করে কলম্বিয়া। ৪৭তম মিনিটে সান্তিয়াগো আরিয়াসের ডান পায়ের দ্রুতগতির শট গোলবারের ডানপাশ দিয়ে চলে যায়। এরপর কাউন্টার অ্যাটাকে যায় আর্জেন্টিনা। অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের অ্যাসিস্ট থেকে ডি মারিয়ার করা বাঁ-পায়ের শট আটকে দেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক।

৫৪তম মিনিটে গোল করার আরেকটি সুযোগ তৈরি করে কলম্বিয়া। ডেভিনসন সানচেজের হেড চলে যায় গোলবারের উপর দিয়ে। কর্নার কিক থেকে হেড করে তাকে অ্যাসিস্ট করেছিলেন জন কর্ডোবা।

৬৪তম মিনিটের ঘটনা হয়তো আর্জেন্টিনা ফুটবলের জন্য দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে। আক্রমণভাগে যখন দলের বিশৃঙ্খল অবস্থা তখনই ইনজুরিতে পড়তে হয়েছে আর্জেন্টিনার প্রাণভোমরা লিওনেল মেসিকে। নিজেই দৌড়াতে গিয়ে ইনজুরি হয়েছেন। তারকা এই ফুটবলারের চোট এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, তার চোখ দিয়ে অশ্রু প্রায় বেরিয়ে আসছিল।

মেসিকে অবশ্য কেউ ফাউল করেনি। এরপর আর তাকে মাঠেই রাখতে পারেননি আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি। বদলি হিসেবে নিকোলাস গঞ্জালেজকে মাঠে নামান তিনি।

ম্যাচের ৭৫তম মিনিটে বল জালে জড়িয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসির বদলি হিসেবে নামা গঞ্জালেস পেয়েছিলেন জালের নাগাল। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি বাতিল হয়। ৮৮তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয় আর্জেন্টিনার। ডি মারিয়ার ক্রসে গোলের সামনে বাড়ান নিকো গঞ্জালেস। কিন্তু জুলিয়ান আলভারেজ সময়মতো পৌঁছাতে পারলেন না।

শেষ মুহূর্তে কলম্বিয়ার বক্সে পরপর কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি ডি মারিয়া। এতে নির্ধারিত ৯০ মিনিটেও গোলশূন্য থাকে ম্যাচ। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধেও গোলশূন্য থাকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ৭ মিনিটে অর্থাৎ ১১২তম মিনিটে দলকে গোলের আনন্দে ভাসান লাউতারো মার্টিনেজ। তার সেই গোলেই জয় নিশ্চিত হয় আলবিসেলেস্তেদের।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)